বাঙালির ক্রীড়া সংস্কৃতি বড় প্রশ্ন ও উত্তর সাজেশন | উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন HS Bengali Suggestion

 দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ক্রীড়া সংস্কৃতি থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য পড়তে হবে সেগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে নিচে আলোচনা করা হলো।  তোমরা প্রয়োজন অনুসারে এখান থেকে লিখে নিতে পারো। Bangalir-krira-chorcha

বাঙালির ক্রীড়া সংস্কৃতি বড় প্রশ্ন ও উত্তর সাজেশন


বাঙালি ফুটবল খেলার ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


    ফুটবল খেলা বাঙালির কাছে শুধুমাত্র একটি খেলা নয় তা আবেগও বটে। বাঙালিরা এটা মনে করেন যে সব খেলার সেরা খেলা হলো ফুটবল। নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী নামে এক বাঙালি সর্বপ্রথম ইংরেজদের ফুটবলে পদাঘাত করে 1850 এর দশকে। পরবর্তী কয়েক দশকের মধ্যেই ভারতীয় ফুটবলের রাজধানী হিসেবে কলকাতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। Bangalir-krira-chorcha

     1886 সালে শোভাবাজারে গড়ে ওঠে বাঙ্গালীদের পরিচালিত প্রথম ফুটবল ক্লাব শোভাবাজার ক্লাব। এর পর পর গড়ে ওঠে বাংলার বুকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল ক্লাব - ওয়েলিংটন ক্লাব, টাউন ক্লাব, কুমারটুলি, মোহনবাগান, মোহামেডান স্পোর্টিং ইত্যাদি। 1911 সালে দুর্ধর্ষ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মোহনবাগান ক্লাব আই এফ এ শিল্ড জয় লাভ করে। যা ছিল ভারতের ফুটবলের ইতিহাসে স্মরণীয় ঘটনা।

    বাঙ্গালীদের ফুটবল চর্চা যথেষ্ট উজ্জ্বল কারণ ভারতীয় সন্তোষ ট্রফিতে 43 বার ফাইনালে পৌঁছায় 31 বার জয়লাভ করে বাংলার ফুটবল দল। বাঙালির ফুটবল চর্চার সঙ্গে বাঙাল ও ঘটির আবেগমিশ্রিত হয়ে আছে।


    বাঙালির এই ফুটবল চর্চার জনপ্রিয়তা যেসকল নামগুলির জন্য আজও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে সেইসকল উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ব্যক্তি হলেন - কালীচরণ মিত্র, হরিদ্বার শীল, নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী, নরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ। এই সকল সর্ব অগ্রগণ্য ব্যক্তি গুলির মধ্যে অন্যতম ছিলেন গোষ্ঠ পাল, চুনী গোস্বামী, পিকে ব্যানার্জি, শৈলেন মান্না প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ। 



বাঙালির কবাডি খেলার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করো। 


    হাডুডু খেলা সর্বপ্রথম পরিচয় পাওয়া যায় পুরানে। পুরান মতে শ্রীকৃষ্ণ নাকি গোপাল বালকদের সঙ্গে হাডুডু খেলতেন। এই হাডুডু বর্তমানে বাঙালিদের কাছে কবাডি নামেও পরিচিত। যদিও এই খেলাটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত তবুও ভারতবর্ষে হাডুডু আর কাবাডি এই দুটি জনপ্রিয় নাম। Bangalir-krira-chorcha

    বাঙ্গালীদের প্রচেষ্টায় সর্বপ্রথম 1938 সালে কলকাতায় সর্বভারতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা শুরু হয়। 1952 সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সর্ব ভারতীয় কাবাডি ফেডারেশন। 1955 সালে মেয়েদের নিয়ে সর্বপ্রথম কাবাডি প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরপর নেপাল ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তান মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে তৈরি হয় এশিয়ান অ্যামেচার কাবাডি ফেডারেশন। 
    1980 সালে কলকাতায় প্রথম এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। 1990 সালে এশিয়ান গেমস থেকে কবাডি এশিয়ান গেমসের অন্তর্ভুক্তি হয়ে এসেছে। এখনো পর্যন্ত সাতটি এশিয়ান গেমস এই পুরুষ বিভাগে ভারত সোনা জিতেছে। 1974 সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম কবাডি টেস্ট শুরু হয়।


    2004 সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনটি কাবাডি ওয়ার্ল্ড কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। 2014 সাল থেকে চালু হওয়া প্রো কাবাডি লিগ শুধু জনপ্রিয় তাই নয় বিপুল বাণিজ্য সাফল্য পেয়েছে। বাঙ্গালীদের কাবাডি প্রিয়তা চরম শিখরে পৌঁছে দেবার জন্য যেসকল ব্যক্তিবর্গ উল্লেখযোগ্য তারা হলেন ফনি ভট্টাচার্য্য অচিন্ত্য সাহা বিশ্বজিৎ পালিত এবং এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ। ভূপতি মজুমদারের সভাপতিত্বে গড়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের কাবাডি অ্যাসোসিয়েশন।



 বাঙ্গালীদের দাবা খেলায় সাফল্যের পরিচয় দাও।


    পুরান মতে রামায়ণের সর্বপ্রথম দাবা খেলার পরিচয় পাওয়া যায়। রামায়ণের কাহিনী অনুসারে রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী নাকি দাবা খেলার সূচনা করে। কিন্তু বাংলায় দাবা খেলার সর্বপ্রথম সূচনা হয়  1850 সালে। এই বছরই  চেস ক্লাব গঠিত হয়। বিশ্ব বিখ্যাত দাবাড়ু করেন সমস্ত বিশ্বে দাবা খেলা কে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কলকাতা চেস ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। Bangalir-krira-chorcha

    এই কলকাতা চেস ক্লাব এ বিশ্ব বিখ্যাত দাবাড়ু মহেশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় নিয়মিত খেলতেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর কলকাতায় গড়ে ওঠে ওয়েস্টবেঙ্গল চেজ এসোসিয়েশন।  বাঙালি হিসেবে প্রথম দাবায় চ্যাম্পিয়ন এর খ্যাতি অর্জন করেন প্রাণ কৃষ্ণ কুন্ডু 1961 সালে। এরপর দিব্যেন্দু বড়ুয়া 1882 সালে প্রখ্যাত দাবাড়ু ভিক্টর কর্শ্নয়কে হারিয়ে 16 বছর বয়সে চ্যাম্পিয়ন হন। 

     দিব্যেন্দু বড়ুয়া পরে শ্রেষ্ঠ বাঙালি দাবাড়ু হিসাবে পরিচয় লাভ করেন সূর্য শেখর গাঙ্গুলী। মাত্র 11 বছর বয়সে তিনি একজন বিখ্যাত গ্র্যান্ডমাস্টার কে হারিয়ে রেকর্ড লাভ করে। তিনি 2003 থেকে 2008 পর্যন্ত টানা ছয় বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এর যোগ্যতা অর্জন করেন। প্রখ্যাত দাবাড়ু হওয়ার জন্য তাকে অর্জুন পুরস্কার প্রদান করা হয়।
    
    বাংলার বুকে যে সকল দাবাড়ু প্রখ্যাত হয়ে আছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন - সন্দীপ চন্দ্র, নীলোৎপল দাস, সেনগুপ্ত সপ্তর্ষি রায় চৌধুরী প্রমূখ
। 


কলকাতায় বাঙালির প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা প্রথম স্বদেশী সার্কাস টির নাম কি ? সার্কাসে বাঙালির অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।


👉   1883 সালে নবগোপাল মিত্র ন্যাশনাল সার্কাস প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বাঙ্গালীদের তৈরি প্রথম স্বদেশী সার্কাস

👉   সার্কাস কথাটি বাঙালির আবেগের সাথে জড়িত, কারণ বাঙালিরা সার্কাস কে নিজেদের একটি সংস্কৃতি বলে ধারণা করে। বাঙালির এই সার্কাস চর্চা আজকের না। 1887 সালের দিকে প্রিয়নাথ বসু একটি সার্কাস প্রতিষ্ঠা করেন, জার নাম দেন - গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস । 

     বাঙালির সার্কাস বিষয়ে ধারণা লাভ করা যায় অবনী কৃষ্ণ বসুর বাঙালির সার্কাস নামক গ্রন্থ থেকে। সার্কাস বিষয়টি ছিল অনেকটা পরিবার কেন্দ্রিক। এমনকি বর্তমান দিনে দাঁড়িয়েও উল্লেখযোগ্য কয়েকজন সার্কাস প্রতিষ্ঠাতা তারা বংশপরম্পরায় ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। Bangalir-krira-chorcha

     বাঙালির সার্কাসের করতে গেলে মনে পড়ে নবগোপাল মিত্রের কথা। কারণ হিন্দুমেলার পাশাপাশি নবগোপাল মিত্র বাঙালি সার্কাস কে প্রতিষ্ঠা করেছিল। এছাড়াও বাঙালি সার্কাসের যেসকল ব্যক্তিবর্গ উল্লেখযোগ্য তারা হলেন কর্নেল সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, শ্যামা কান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মনিলাল বসু প্রমুখ।