আমি দেখি কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা - দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের সাজেশন ২০২১

    দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্থ কবিতা আমি দেখি, এই কবিতা থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতে বারবার আসে বা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো। তুমি যদি একজন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হও তবে আমি দেখি এই কবিতা থেকে আলোচিত করা প্রশ্নগুলি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

     শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত আমি দেখি কবিতাটি তার বিখ্যাত অঙ্গুরী তোর হিরণ্য জল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া। এই কবিতা থেকে প্রশ্ন গুলি পড়ার আগে এর প্রেক্ষাপট ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটু ধারনা নিয়ে নেওয়া যাক।

আমি দেখি কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা


আমি দেখি কবিতার প্রেক্ষাপট :

       সভ্যতার সৃষ্টির পর থেকে ধীরে ধীরে তার উন্নতি শুরু হয়েছে এ কথা যেমন আমরা অস্বীকার করতে পারি না তেমনি সভ্যতার নির্মম কার্যকলাপ কেউ আমরা অস্বীকার করতে পারি না। সভ্যতার এই উন্নতির পিছনে কিভাবে যে প্রকৃতি তার জীবনকে বলিদান দেয় তা আমরা বুঝতে পারি না। পৃথিবীতে সভ্যতার যত বিস্তার ঘটেছে প্রকৃতি তত ছোট হতে শুরু করেছে।

    একটি বিখ্যাত কবিতা সূত্রে বলা যায় পৃথিবীটা নাকি কমলালেবুর মতো ছোটো হয়ে গেছে, আসলে পৃথিবীটা যান্ত্রিক ও নগর কেন্দ্রিক সভ্যতার কাছে আজ সত্যিই অনেকটা ছোট হয়ে গেছে। যে প্রকৃতিকে আমাদের প্রতি মুহূর্তে প্রয়োজন নগর গড়ে তোলার জন্য তাকে অবিচারে আমরা বিলীন করে দিই, এই প্রেক্ষাপট কে কেন্দ্র করে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় আমি দেখি কবিতাটি রচনা করেছেন।


আমি দেখি কবিতার বিষয়বস্তু :

      কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় মনে করেছেন আজ বর্ধিত এই নগরের কাছে শুধু প্রয়োজন সবুজ প্রকৃতি। যে নগর কে গড়ে তুলতে প্রকৃতিকে ধ্বংস হতে হয়েছে আজ সেই নগর প্রকৃতির কাছে ঋণী হয়ে আছে। কবি তাই কবিতাতে বলেছেনঃ যে গাছ তুলে এনে বাগানে বসাও। কারণ আমাদের শুধু প্রয়োজন সে গাছ কে দেখা আর সমস্ত শরীরে সেই গাছের আবেশ দরকার। 

    কবি অনেক দিন জঙ্গলে যাননি তাই তার সে আক্ষেপ ধরা পড়েছে শহরে বসে তার চোখে পড়েছে শহরের বিষাক্ত অসুখ যেন শুধু সবুজ বনানী কে ধ্বংস করতে উদ্যত। সেই কারণে কবিতায় তিনি বারবার আক্ষেপ করেছেন অনুরোধ করেছেন - গাছ আলু গাছ বসাবো কারণ চোখ তো শুধু সেই সবুজ কে দেখতে চাই আর দেহটাই শুধু সবুজ বাগান। 


আমি দেখি কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা 


   কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত আমি দেখি কবিতাটি যে প্রশ্নগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ তার তিনটি প্রশ্ন নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো এবং বিস্তারিত ভাবে তার নোট আকারে দেওয়া হলো তোমরা এখান থেকে নসুরে লিখে নিতে পারো অবশ্যই আলোচনা গুলো শুনতে পারো। 


   "শহরের অসুখ হা করে কেবল সবুজ খায়"  - কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা করো। 


    প্রকৃতি বাদী কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তার আমি দেখি কবিতাটি তে প্রকৃতির প্রতি এক গভীর আকর্ষণ কে তুলে ধরেছেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে আমরা ধীরে ধীরে উন্নতির চরম শিখরে পৌছাতে চেষ্টা করেছি, আর এই চেষ্টার পিছনে কিভাবে সবুজ বনানী ধ্বংস হচ্ছে তাকে দৃষ্টিপাত করে কবি এই কবিতাটি রচনা করেছেন।

    সেই কারণে স্বাভাবিকভাবেই আমি দেখি কবিতাটি তে আমরা প্রকৃতির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রকাশ দেখতে পেয়েছি। নগর বা যান্ত্রিক সভ্যতা তার আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে সদাসর্বদা প্রকৃতির সবুজ কে ধ্বংস করতে উদ্যত। কবির মনে হয়েছে শহরের এই সবুজ বিরোধী স্বভাব যেন শহরের অসুখ। সেই কারণে বারবার শহর সবুজকে গ্রাস করতে কখনও দ্বিধাবোধ করেনি।

    কবি শহরকেন্দ্রিক জীবন যাপনে বিষাদগ্রস্ত তে পরিণত হয়েছেন, তাই আবেদন করেছেন যে গাছ তুলে আন কারণ মানুষের প্রয়োজন গাছের সবটুকু। শহরের অসুখ এর ফলে আজ গাছের অনটন ঘটেছে। এই কারণে কবি বাগানে গাছ বসাতে বলেছেন কারণ চোখ শুধু সবুজ চাই আর দেহ চাই সবুজ বাগান।

   মানব সভ্যতার আধুনিকতায় যতগুলি বড় বড় শহর গড়ে উঠেছে তাদের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় তারা সবাই কোন না কোন ভাবে প্রকৃতিকে হত্যা করেই গড়ে উঠেছে। এই কারণে কবি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন যে শহর শুধু হা করে সবুজ খেতে জানে।



"আমি দেখি" - প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি উল্লেখ করে কবিতাটির বিষয়বস্তু আলোচনা করো ।


   মানুষ হিসাবে আমরা সামাজিক প্রাণী সেই কারণে সমাজের প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ববোধ থাকে, এই দায়িত্ববোধের আকাঙ্ক্ষা থেকেই শক্তি চট্টোপাধ্যায় দুচোখে শুধু সবুজ কে দেখতে চেয়েছেন। কবির একান্ত ইচ্ছা পরিণত হয়েছে নগরের বিকাশে নয় বনানীর বিকাশে।

   শহরে অনেক দিন কাটানোর জন্য তিনি শহরের অসুখ কে ভালো ভাবে অনুভব করতে পেরেছেন সেই কারণে আবেদন করেছেন তিনি যেন দেখতে পান যে সমাজের মানুষরা যেন গাছের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে। কারণ একমাত্র সবুজই পারে মানুষের মন ও দেহকে সুস্থ রাখতে । কবির মনে হয়েছে - আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার।

   মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বাঞ্ছনীয় ভাবে যা প্রয়োজন তা হলো সবুজ কিন্তু শহরের অসুখ তাকে গ্রাস করে নির্বিচারে। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় এই অসুখের বিপরীতে আবেদন করেছেন - গাছ তুলে আনো / বাগানে বসাও আমি দেখি.. । নগরের শুষ্কতা কবির চোখকে কালিমালিপ্ত করে তুলেছে এই কারণে তিনি ওই চোখে শুধু সবুজকে কামনা করেছেন। 

    সবুজের আক্ষেপ কবিতাতে কবি উত্তম পুরুষে প্রকাশ করলেও তা শুধু কবির হয়ে থেমে থাকে না। কবির এই আমি দেখি বার্তাটি কবির নিজস্ব তাকে ছাড়িয়ে সার্বজনীন রূপ লাভ করেছে। আসলে আমাদের সকলের প্রয়োজন সবুজকে দেখা সবুজকে নিয়ে থাকা কারণ একমাত্র সবুজ পারে আমাদের সভ্যতা কে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে।



"... ওই সবুজের ভীষণ দরকার" - ওই সবুজ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? কেন তার ভীষণ দরকার বলে মনে হয়েছে ?


     আলোচ্য অংশটি প্রকৃতিপ্রেমী কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আমি দেখি কবিতা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। শহরের অসুখ হা করে যে সবুজকে গ্রাস করে কবিতাতে ওই সবুজ বলতে সেই সবুজের কথা বোঝানো হয়েছে। 

    নগরের বিকাশের সাথে সাথে প্রকৃতির বিস্তার ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। প্রকৃতির এই ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়ার ঘটনা কবির  কাছে এক করুণ আক্ষেপের কারণ হয়ে কবিতাতে ধরা দিয়েছে। 

   কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় নগরজীবনে বহুদিন আবদ্ধ থাকার কারণে সবুজের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটেনি। তার চোখে সবুজের জন্যে এক দীর্ঘ প্রতীক্ষা যেন তাকে অস্থির করে তুলেছে। তিনি নগরে থেকে অনুভব করেছেন নগরের একমাত্র অসুখ শুধু সবুজকে গ্রাস করা। কবি এই অসুখের বিপরীতে গিয়ে বারবার অনুরোধ করেছেন গাছ লাগাতে, গাছ বসাতে।

    কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় যেহেতু অনেকদিন জঙ্গলে যান নি তাই তার একটি আক্ষেপ সেই সবুজের প্রতি তৈরি হয়েছে। বহুদিন নগরে থাকার জন্য সবুজের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়নি এই কারণে তার মধ্যে তৈরি হয়েছে সেই সবুজের প্রতি এক আকাঙ্ক্ষা। তাই কবিতায় তিনি বারবার আবেদন করেছেন ওই সবুজ তার সামনে নিয়ে আসতে। তার সবুজকে দেখার খুব প্রয়োজন কারন তার চোখ চাইছে শুধু সবুজ কে দেখতে, আর শরীরটা চাইছে সমস্ত সবুজকে।

     

   >>>> এখানে দ্বাদশ শ্রেণীর আমি দেখি কবিতা থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে এছাড়া যদি তোমাদের অন্য কোন প্রশ্ন ও উত্তর এর প্রয়োজন হয় তবে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করবে তাহলে এখানে আপডেট করে দেয়া হবে।।