মেঘের গায়ে জেলখানা গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর | আমার বাংলা | সুভাষ মুখোপাধ্যায়

       দ্বাদশ শ্রেণীর আমার বাংলা প্রবন্ধ গ্রন্থের মেঘের গায়ে জেলখানা প্রবন্ধ থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন এর জন্য পড়তে হবে সেই প্রশ্ন গুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো। তোমরা এখান থেকে প্রশ্নগুলি নোট আকারে খাতায় লিখে নিতে পারো।

মেঘের গায়ে জেলখানা গল্পের প্রশ্ন উত্তর



মেঘের গায়ে জেলখানা প্রবন্ধের বিষয়বস্তু : 


     পরাধীন ভারতবর্ষের বুকে যে সমস্ত স্বাধীনতাকামী মানুষেরা ইংরেজদের তাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল তাদেরকে জোর পূর্বক গ্রেপ্তার করে জেলে বন্দী করা হতো। লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে ঘুরতে তেমনি একটি জেলখানার সঙ্গে সাক্ষাৎ দর্শন করেছেন। এখানে সেই জেলখানার বিভিন্ন বিবরণ তিনি লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।

    কলকাতার আশেপাশের মানুষেরা সাধারণত জেলখানা বলতে প্রেসিডেন্সি দমদম বা আলিপুরের জেল খানার কথা শুনে থাকে। কিন্তু যারা নিজেদের দেশকে ভালোবেসে ইংরেজদের তাড়ানোর জন্য লড়াই করেছে তাদেরকে প্রিয়জনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এমন জায়গাতে রাখা যেতে পারে তা বক্সার জেলার এই জেলখানাকে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা। গল্পে অবশ্য তিনি যাত্রাপথের বিভিন্ন সৌন্দর্য বর্ণনা দিয়েছেন।

    সেই জেলখানাতে যাদের রাখা হতো তারা সকলেই ছিল স্বাধীনতাকামী। ইংরেজরা চলে গেলেও বক্সার সেই জেলে আজো আগের ব্যবস্থাই বর্তমান। বক্সার এই জেলে শিব শংকর মিত্র সতীশ পাকড়াশী মত স্বদেশপ্রেমী রাও বন্দিদশা কাটিয়েছে। এই ছেলের সঙ্গে বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জড়িত আছে।


     দেশকে ভালোবেসে এমনকি বাংলার মঙ্গল কামনার জন্য যারা অপরাধী হয় তাদের নির্বাসন ভূমি যে এত কঠোর হতে পারে তাহলে খুব সুভাষ মুখোপাধ্যায় এই বক্সা জেল কে দেখে অনুমান করতে পেরেছেন। লেখক বক্সাকে ঠিক বাংলার স্থান বলে মেনে নিতে পারেননি। যে বাংলা থেকে বহুদিন আগে ইংরেজ বিদায় নিয়েছে তবুও সেই বাংলার ইংরেজ শাসনের বিষবাষ্প আজও বাঙালির মনে জেগে ওঠে।



"এ হচ্ছে এক বিশেষ জেলখানা" -  এখানে কোন জেলখানার কথা বলা হয়েছে ? জেলখানা টির পরিচয় দাও।


👉    প্রশ্নে উদ্ধৃত লাইনটিতে আমার বাংলা প্রবন্ধ গ্রন্থের অন্যতম প্রবন্ধ মেঘের গায়ে জেলখানা প্রবন্ধে বর্ণনা করা বক্সা জেলখানার কথা বলা হয়েছে। 


👉    লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় বক্সার জেলখানা তে যাওয়ার জন্য ভুটান ও জয়ন্তী পাহাড় এর রাস্তা দুটি বাদ দিয়ে তৃতীয়তম রাস্তাটি ধরে ঘাস ও কাকরে করে ভরা একটি মাঠ পেরিয়ে সেখানে পৌঁছেছিলেন। লেখক এর দুধ থেকে জেলখানা থেকে দেখে পাহাড়ের হাটু বলে মনে হয়েছিল। যদিও সেটি পাহাড়ের হাট নয় পাহাড়টিকে ধাপে ধাপে কেটে সেই জেলখানা তৈরি করা হয়েছে বলে দূর থেকে তাকে পাহাড়ের হাটু বলেই মনে হয়। 

    জেলখানা টির চারিপাশে ছোট ছোট অসংখ্য সারিবদ্ধ ঘর ছিল। ঘরগুলির দেওয়াল ছিল সব পাথরে তৈরি আর ছাদ ছিল কাঠের। প্রতিটি ঘরেই ছাদের কাছে বেশ শক্ত করে আটা দুটো করে জানালা ছিল। আবার প্রতিটি ঘরের দুটি করে দরজা ছিল যার একটি ঢালাই লোহার আর অন্যটি মোটা কাঠের। চারিদিক থেকে সমস্ত জেলখানা টি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ছিল।

    জেলখানার প্রতিটি কুঠুরি সামনে ছিল ছোট্ট করে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা উঠোন। লেখক কাঁটাতারের পরিমাণ বোঝাতে গিয়ে বলেছেন কয়েক মাইল হবে বলে তিনি মনে করেছেন। পাহাড়ের উপরে জেলখানা টি হওয়ার জন্য তার রাস্তাগুলি এঁকেবেঁকে কখনো এধিক কখনো ওধিক চলে গেছে। জেলখানার উপর অনেকগুলি ইলেকট্রিকের পোষ্ট আছে যে গুলি কে দেখে লেখকের ফাঁসির মঞ্চ বলে মনে হয়েছে।

    এত কড়া করে তৈরি করা বক্সার জেলখানার বাইরে  100 হাত পরপর উঁচু করে সেন্টি বক্স তৈরি করা ছিল। এই বক্স গুলোর উপর দাঁড়িয়ে বন্দুকধারীরা রাতদিন পাহারা দিত। জেলখানায় একবার ঢুকলে খোলা আকাশ দেখা খুব কঠিন। জেলখানার মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পর বাঁদিকে জেলের অফিস, নিচু পদের কর্মীদের কোয়াটার, আর সেপাইদের শিবির। এমন কঠিন জেলের মধ্যে কিছু সৎ উপদেশ লেখা ছিল বলে লেখক জানিয়েছেন। 



"জেলখানায় অসহ্য লাগে অপরাধের তুলনায় শাস্তি রকমফের।"  -  কোন জেলখানার কথা বলা হয়েছে ? জেলখানায় অপরাধের তুলনায় শাস্তি রকমফের লেখক লক্ষ্য করেছেন ?


👉    প্রখ্যাত লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মেঘের গায়ে জেলখানা প্রবন্ধে উল্লেখিত বক্সা জেলখানার কথা এখানে বলা হয়েছে। 


👉    বক্সার জেলখানা টি ঘুরে লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের খুব ভালো লাগেনি। যেমন জেলখানা টি তেমনি তার নিয়ম কানুন দেখে তিনি অবাক হয়েছিলেন। ভারত বর্ষ স্বাধীন হবার কিছুদিন পরে তিনি বক্সার জেলখানা তে ঘুরতে গিয়েছিলেন। বক্সার জেলখানা তে গিয়ে তিনি দুই ধরনের কয়েদির দেখা পান। এক শ্রেণীর কয়েদি ছিল অভিজাত সম্পন্ন, আরেক শ্রেণীর ছিল নিচু পর্যায়ের। 

    অভিজাত শ্রেণীর কয়েদীরা ব্যাংক লুট, নোট জাল করা, খাবারে ভেজাল মেশানো ইত্যাদি অপরাধের দায়ে জেল খাটছে। যদিও এই অভিজাত কয়েদিদের প্রায় সকলেই শিক্ষিত। এই শ্রেণীর কয়েদীরা নিজেদের স্বভাবের কারণে বহু মানুষকে প্রাণে শেষ করেছে। 

    অন্যদিকে নিচু পর্যায়ের কয়েদিদের অন্যায় হল চুরি-ডাকাতি পকেটমারি দাঙ্গা-হাঙ্গামা খুন-জখম ইত্যাদি। এই শ্রেনীর কয়েদিদের প্রায় সকলেই নিরক্ষর, অভদ্র, সৌজন্যে আবেশ টুকু তাদের মধ্যে নেই। জেলে লেখক সাধারণত এই দুই শ্রেণীর কয়েদি দেখলেও এদের শাস্তির মধ্যে একটু ফারাক ছিল, যা গল্পে তুলে ধরেছেন।


    অভিজাত শ্রেণীর কয়েদীরা মানুষ খুন করার মতো অপরাধ করলেও তাদেরকে জেলে অনেক কদর করা হতো। এমনকি জেলের সেপাইরা তাদের সম্মান দিয়ে কথা ও বলত। কিন্তু অন্য দিকে সামান্য অপরাধ করা নিচু শ্রেণীর কয়েদিদের দিয়ে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত সমস্ত কাজ করিয়ে নেয়া হতো।তাদের সামান্য ভুল শারীরিক অত্যাচারের কারণ হয়ে দাঁড়াত। লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় অপরাধের আর শাস্তির এই পার্থক্যের জন্য অসহ্য বোধ করেছেন।



"আজ ইংরেজ নেই, তবুও আগের ব্যবস্থাই বহাল আছে বক্সায়।"  -  কোন ব্যবস্থার কথা এখানে বলা হয়েছে ? বক্সার জেলার এই জেলখানার আগের অবস্থা কেমন ছিল ? 


👉     পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকামী বন্দীদের ইংরেজরা বিভিন্ন দূর-দূরান্তের জেলে বন্দি করে রাখত। তেমনি ভারতীয়দের বন্দি করে রাখার জন্য বক্সার জেলার এক প্রত্যন্ত প্রান্তে একটি জেলখানা পাহাড়ের গায়ে ইংরেজরা তৈরি করেছিল। এই জেলখানা টিতে অনেক বিখ্যাত দেশপ্রেমিকরা জেল খেটেছেন। এমনকি এই জেলখানাতে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারাও জেল খেটেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

    কিন্তু লেখকের কাছে অবাক বলে মনে হয়েছে ভারতীয় ও মুক্তিযোদ্ধাদের শাস্তি দেবার উদ্দেশ্যে এই জেলখানাকে কঠোরভাবে তৈরি করা হয়েছিল। ইংরেজদের আমলে তৈরি করা এই জেলখানা টি ইংরেজরা চলে যাওয়ার পরেও সেখানে অনেক বন্দি আছে। কিন্তু সেই বন্দীদের রাখার জন্য ইংরেজদের মতন ব্যবস্থাই এখনও চলে আসছে।

     এই কারণে লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন, যে আমাদের দেশ থেকে ইংরেজরা বিদায় নিলেও তাদের রীতিনীতি বা প্রকৃতি এখনো রয়ে গেছে। তিনি আরো জানিয়েছেন বক্সার ভারতবর্ষের মধ্যে না থাকলেও ভারতের অনেক বন্দি আজও ইংরেজদের মত অত্যাচারে অত্যাচারিত এই জেলে।


👉    বক্সার জেলার এই জেল খানাটি তৈরি হওয়ার পূর্বে ইংরেজরা ভুটানের রাজার কাছ থেকে দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য এই অঞ্চল ইজারা নিয়ে ছিল। প্রথমদিকে এটি একটি কেল্লা ছিল তখন এর আশেপাশে বাঘের ডাক শোনা যেত। এমনকি এখানে বিষধর সাপের উৎপাত ছিল প্রবল। 

    বক্সার জেলার আবহাওয়া বা পরিবেশ মানুষের বসবাসযোগ্য ছিল না। এখানে যতগুলি ঝরনা ছিল তা ছিল অপুষ্টিকর ও জীবাণুতে পরিপূর্ণ। মানুষের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র টুকু এখানে পাওয়া যেত না। আর ইংরেজদের জন্য এমনই একটি স্থান উপযুক্ত হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতাকামী মানুষদের বন্দি করে রাখার জন্য।