শিকার কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর || দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন 2021

     দ্বাদশ শ্রেণীতে শিকার কবিতা থেকে যেসকল বড় প্রশ্ন ও উত্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষাতে আসে সেই সকল প্রশ্ন নিয়ে নিচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হল নোটস আকারে সুতরাং তোমাদের তার প্রয়োজন হলে তোমরা খাতায় লিখে নিতে পারো। 

     দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে যে পাঁচটি মোট কবিতা আছে তার মধ্যে দ্বিতীয় তম ও অন্যতম প্রধান কবিতা হলো জীবনানন্দ দাশের শিকার কবিতাটি। শিকার কবিতা একটি ব্যঞ্জনা ধর্মী কবিতা যেখানে এক শিকারের মাধ্যমে মানুষের প্রকৃতি হীনতা ও মনুষ্যত্বহীন প্রকৃতি জেগে উঠেছে।

শিকার কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর

   দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের প্রত্যেকটি গল্প ও কবিতার মতো এই শিকার কবিতাটি তাও আমরা কিছু সংক্ষেপে আলোচনা প্রশ্নগুলি পড়ার আগে করে নেব - 


শিকার কবিতার প্রেক্ষাপট :


    চিত্ররূপময় কবি জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত কবিতা হলো শিকার, যার মূল আবক্ষ রচিত হয়েছে একটি শান্ত শীতল প্রকৃতির বুকে হরিণ শিকার কে কেন্দ্র করে। প্রকৃতি প্রেমিক কবি মানুষের ধ্বংসলীলা আর হিংস্রতার কাছে শান্ত প্রকৃতি যে অসহায় তাকে এই কবিতার মধ্য দিয়ে বর্ণনা করেছেন।

    শিকার কবিতাটির প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে এক গহীন অরণ্যে সদ্য নতুন প্রভাতের শুরু হওয়া ভোরের বর্ণনা দিয়ে, যেখানে একটি হরিণ সারারাত নিজেকে বাঁচিয়ে সকালে নদীর স্নিগ্ধ ও শান্ত জলে কিছুটা আবেশ নিতে ব্যস্ত ঠিক সেইসময় সভ্যতার বর্বর মানুষেরা তাকে নদীর শান্ত জলে বন্দুকের গুলিতে হত্যা করেছে।


শিকার কবিতার বিষয়বস্তু : 


    জীবনানন্দ দাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কবিতা শিকার। সাধারণভাবে আমরা কবি জীবনকে চিত্ররূপময় ও প্রকৃতিপ্রেমী বলে  জানি কারণ, তার প্রায় সকল কবিতার মধ্যে শান্ত প্রকৃতি যেন জীবন্ত রূপ লাভ করে এমনকি তিনি বারবার নিজেকে ওই অমলিন প্রকৃতির মধ্যে বিলিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না।

    একই রূপে এই শিকার কবিতা তেও আমরা সেই শান্ত নিটল প্রকৃতিকে বর্ণনা করতে দেখেছি। তিনি কবিতাটিতে এমন একটি ভোরের বর্ণনা করেছেন যাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করলেও তার শান্ত অভাব অনুভব করা সম্ভব। কবিতাটিতে তিনি দুটি বিপরীত দিক তুলে ধরেছেন।

    প্রথমদিকে অত্যন্ত কোমল এক ভোরের বর্ণনা যাকে কবি অমলিন ও শান্ত রূপ দান করেছেন যার বুকে রেখেছেন প্রকৃতির এক জীবন্ত প্রাণ একটি হরিণ কে। আর অন্যদিকে প্রকৃতি বিরোধী কিছু উন্নত সম্প্রদায়ের লোভী মানুষের রূপ কে চিহ্নিত করেছেন। যারা হৃদয়হীন হবে কোমল ও শান্ত প্রকৃতির মাঝখানে প্রকৃতির জীবন্ত প্রাণ কে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না।


    কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু হলো, মানুষ তাদের স্বার্থপরতার কারণে নিজের ইচ্ছামত প্রকৃতিকে ধ্বংস করে চলেছে। তা না হলে শিকার কবিতার শান্ত কোমল প্রকৃতির মাঝে ওই চপল হরিণটিকে মানুষের লোভের কাছে হত্যা হতে হতো না।




" নাগরিক লালসায় নীল অমলিন প্রকৃতির মাঝে পবিত্র জীবন হারিয়ে যায় হিমশীতল মৃত্যুর আঁধারে" - শিকার কবিতার আলোকে এই লাইনটি কতখানি যুক্তিযুক্ত তা আলোচনা করো।



    মগ্নচৈতন্য বাদী কবি জীবনান্দ দাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মানুষের জীবনের নিষ্ঠুরতাকে শিকার কবিতায় তুলে ধরেছেন। কবিতাটি রূপকের আড়ালে মানুষকে নির্দেশ করেছে বারবার। কবিতার পটভূমি টিকে শান্ত মলিন করে তোলার জন্য তিনি সবুজ ভোরকে অবলম্বন করেছেন,। যেখানে ঘাসফড়িঙের রং, টিয়ার সবুজ পালক, আর গাছের কচি পাতা রূপকের মত প্রকৃতিকে শান্ত করেছে।

    সকালবেলার আলো তে যখন চারিদিকে শান্ত ঠিক তখন হিংস্র বন্যের হাত থেকে প্রাণ বাঁচালো এক হরিণ রাতের সব ক্লান্তিকে দূর করার জন্য নদীতে নামে। সে চেয়েছিল জীবনের এক দন্ড শান্তি আর বেঁচে থাকার জন্য একটুখানি নিরাপদ পৃথিবী

    ভোর বেলায় হরিণটি বাতাবি লেবুর মত কচি ঘাস ছিড়ে খাচ্ছিল, তারপর শরীরকে একটু আবেশ দেওয়ার জন্য সে নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে নামে। হরিণটি যখন নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে স্নানে মগ্ন ঠিক তখন কবি শুনতে পান বন্দুকের আওয়াজ। নিভে যাই হরিণের জীবনের সমস্ত উল্লাস, স্নিগ্ধ নদী হয়ে যায় মচকা ফুলের মতো ।

    কবি জীবনানন্দ নাগরিক লালসা কে কোনদিন বড় করে দেখেননি। তার কাছে হরিণটি এক জীবন্ত প্রকৃতি, কিন্তু নাগরিক টেরিকাটা মানুষের লালসার কাছে সে শিশিরভেজা গল্প আর সিগারেটের ধোঁয়ার মাঝে ভোগ্যপণ্যে পরিণত হয়েছে।


   কবিতায় সত্যি যেন প্রকৃতি নাগরিক সমাজের কাছে এক পরাধীন বস্তু। মানুষের লালসার কাছে প্রকৃতি মূল্যহীন, যেকোনো সময় তাকে জীবন দিতে হয় সভ্যের কাছে। প্রশ্নে উদ্ধৃত বক্তব্যটি আমরা শিকার কবিতার একটি স্তবক হিসেবেই ধরতে পারি, কারণ কবিতার বিষয়ের সঙ্গে আলোচ্য মন্তব্য টি যথার্থভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।




" রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো" -  উপমাটি কোন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ? কবিতার নিরিখে উপমাটি কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা লেখ ।



    চিত্ররূপময় কবি জীবনানন্দ দাশ শিকার কবিতায় শরীর গরম রাখার জন্য জালানো আগুনের প্রসঙ্গে উক্ত উপমাটি ব্যবহার করেছেন। প্রখর রুদ্র দেবের তেজে টকটকে লাল আগুন ও ফ্যাকাসে হয়ে পড়ে, এই কথা বোঝাতে গিয়ে কবি রোগা শালিকের কথা উল্লেখ করেছেন।

    যখন ভোরের আলোয় সমস্ত শান্ত প্রকৃতি চারিদিক ঝলমল করে ওঠে তখন শরীর গরম রাখার গনগনে আগুন ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে যায়, ঠিক যেন আগুন তার জীবনের সমস্ত রং কে হারিয়ে ফেলে। যে আগুন সমস্ত কিছুকে এক মুহূর্তে বিলীন করতে পারে তার জীবনও যে অন্য কোন তেজের কাছে বিলীন হতে পারে কবি এই কথায় বোঝাতে চেয়েছেন।

    হরিণের মাংস কে পোড়ানো যার উদ্দেশ্য সেই আগুন কোন এক রোগা শালিকের সমস্ত শেষ হয়ে যাওয়া ভালোবাসার মতো বিবর্ণ হয়ে গেছে শিকার কবিতায়। কবি শান্ত প্রকৃতিকে আরও শান্ত করতে প্রখর আগুন কে নিস্তেজ করে দিয়েছেন রুদ্রদেব কে দিয়ে।


     কবিতায় চির সবুজ প্রকৃতির প্রাণ হরিণকে পোড়ানোর জন্য যে আগুন তাকে প্রকৃতি রক্ষার জন্য খানিক নিস্তেজ করে তুলেছেন কবি। কিন্তু কবিতায় তাকে আবার জ্বলতে হয়েছে নাগরিক স্বার্থের কারণে। প্রকৃতিপ্রেমী কবি শিকার কবিতায় শিকার ঘটনাটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে এই বৈপরীত্য উপমা ব্যবহার করেছেন।



" আগুন জ্বলল আবার ..."  -  আবার শব্দটির প্রয়োগ এর তাৎপর্য কি ? দ্বিতীয়বার আগুন জ্বলার কারণ কি ছিল ?

 ৩+২ = ৫


     চিত্ররূপময় কবি জীবনানন্দ দাশের শিকার কবিতা তে আমরা আগুন জ্বলার ঘটনাকে দুইবার প্রত্যক্ষ করেছি। কবিতায় প্রথমবার আগুন জ্বলেছিল দেশোয়ালি দের শরীরকে উষ্ণ রাখার জন্য। রাতের এই গনগনে আগুন ভোর হওয়ার সাথে সাথে রুদ্র দেবের তাদের কাছে নিস্তেজ হয়ে পড়ে ও কিছুটা ফ্যাকাশে রূপ ধারণ করে। 

    দিনের আলো শুরু হওয়ার কারণে কবির ধারণা ছিল হয়তো এই আগুন টি আর এখন কোন প্রয়োজন নেই, কারণ শীতের শীতলতা কে কাটিয়ে রোদের উষ্ণতা মানুষের শরীরকে উষ্ণ রাখার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু অন্যদিকে প্রকৃতির জীবন্ত প্রতীক সারারাত চিতাবাঘের হাত থেকে নিজের জীবনকে বাঁচিয়ে যে হরিণটি সদ্য শীতলতার জন্য নদীর জলে নেমেছে তাকে নির্মমভাবে বন্দুকের গুলি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

    সভ্যতার বর্বর লোভ শান্ত প্রকৃতিকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। তাই রাতের জালানো আগুন ফ্যাকাসে হয়ে গেলেও সেই মৃত হরিণের লাল মাংস কে পড়ানোর জন্য দ্বিতীয়বার কবিতায় থাকে জ্বলে উঠতে হয়েছে। এই কারণে কবি কবিতায় আগুন জ্বালানোর জন্য আবার শব্দটি ব্যবহার করেছেন।


>>> কবিতায় দ্বিতীয় বার আগুন জ্বলেছিল সভ্যতার লোভী মানুষের স্বার্থপরতার দিকটিকে উন্মোচন করার জন্য । নাগরিক লালসা যেভাবে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে তার নিসংসতা কে দেখানোর জন্য কবি শিকার কবিতায় দ্বিতীয় বার আগুন জ্বালিয়ে ছিলেন।




শিকার কবিতায় যে দুটি ভোরের চিত্র কবি বর্ণনা করেছে তার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।



     ভোর কথাটি আর ভোর বিষয়টি আমাদের কাছে এক শান্ত ভাব বিরাজ করে। প্রকৃতির অপার সৃষ্টি রাত দিন এর দুই মিলনক্ষণ ভোর ও গোধূলি। এই দুটি সময় যেন পৃথিবীতে এক অপার শান্তভাব বিরাজ করার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। জীবনানন্দ দাশের শিকার কবিতাটি তে মানুষের নিশংসতা উন্মোচন করে দেখানোর জন্য কবিতাটিতে তিনি ভোরবেলার প্রেক্ষাপট অবলম্বন করেছেন। এই কারণে কবিতাটিতে ভোর শব্দটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ।

    কবিতাটিতে আমরা এই ভোর বেলার দুটি রূপ দেখতে পায় - প্রথম রূপটি তে ধরা পড়েছে প্রকৃতির এক মলিন রূপ, যেখানে কবি বর্ণনা করেছেন প্রকৃতি যেন ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল, আর চারিদিকের পেয়ারা ও নোনা গাছের রং যেন টিয়ার পালকের মতো সবুজ। এরকম শান্ত পরিবেশে যে বিপরীত কোন ভাবনা মনে আসতে পারে তা তিনি ভাবেন নি, এই কারণে দেশ ওয়ালিদের জালানো আগুন কেউ তিনি নিস্তেজ রূপে তুলে ধরেছেন।

    কবিতায় ভোর শব্দটির দ্বিতীয় তাৎপর্য টি হলো প্রথম তাৎপর্যের বিপরীত রূপ । যেখানে সমস্ত রাত হিংস্র বাঘিনীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা একটি হরিণ তার জীবনের নতুন আনন্দ নিয়ে নদীর তীক্ষ্ণ জলে স্নান করতে নামে। ঠিক তখনই এই শান্ত প্রকৃতির বুকে স্বার্থপর লোভী এক বন্দুকের আওয়াজ যেন সমস্ত প্রকৃতিকে চেতনাহীন করে তুলেছে।


    কবিতায় ভোর শব্দটির দুটি চিত্রকল্প কবি কবিতার মধ্যে বর্ণনা করেছেন। প্রথম বর্ণনাটি দ্বিতীয় বর্ণনার প্রতিরূপ, যেখানে সুন্দর সবুজ প্রকৃতি কে লালসার কাছে রক্তের রং লাল হয়ে যেতে বেশি সময় প্রয়োজন হয়নি। তাই কবিতার মধ্যে এই ভোর শব্দটি লোভী মানুষের লালোসার সাক্ষী।



শিকার কবিতার আলোচনা ভিডিও :




   



অন্য সকল বাংলা বিষয়ের প্রশ্ন ও উত্তর : 




## দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের জন্য নির্বাচিত বড় প্রশ্নগুলি সাধারণত পাঁচ মার্কের হয়ে থাকে। হয়তো আমার এই নোটগুলি দেখে মনে হতে পারে যে এতোটুকু লিখলে কি ফুল মার্কস পাওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে আমি বলব এই নোটটি যদি তুমি মুখস্ত করে খাতায় লিখ তবে দেখবে প্রায় এক পৃষ্ঠা মত হয়ে যাবে যা ফুল মার্কস পেতে অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবে।

    যতটুকু লিখলে ভালো নাম্বার পাওয়া যাবে এবং যে বিষয়গুলো তুলে ধরলে একটি প্রশ্নের ভিতরে ভালো নাম্বার পাওয়া যাবে এখানে আমি শুধুমাত্র সেই বিষয় গুলি এবং ততটুকুই লিখব অতিরিক্ত লিখলে তা তোমাদের জন্য বেশি উপযোগী হবে বলে আমার ধারণা নেই। ভাত গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর

    সুতরাং সেই টুকু পড়া উচিত যেটুকু আমাদের প্রয়োজনে লাগবে।সুতরাং শিকার কবিতার যেসকল প্রশ্নগুলি আমাদের পরীক্ষাতে আসে সেগুলি নিয়ে আলোচনা করলাম অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো ও নোটগুলি খাতায় লিখে নাও।