জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 || শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষক নিয়োগে বড় পরিবর্তন || NEP 2020
|
|0
|
সম্প্রতি ভারত সরকারের মন্ত্রিসভা দ্বারা অনুমোদিত হলো নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি national education policy 2020, এতদিন পর্যন্ত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল 1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী। অর্থাৎ দীর্ঘ 34 বছর পর সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় ছেদ পড়ল।
জাতীয় শিক্ষা নীতি পরিবর্তনের সাথে সাথে শিক্ষা ব্যবস্থাকে এবার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের বাইরে বের করে তাকে শিক্ষা মন্ত্রক নামে নতুন একটি ব্যবস্থার মধ্যে আনা হলো। নতুন এই শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সকল বিশেষ পরিবর্তনগুলি আমাদের নজরে এসেছে সেগুলো নিয়ে নিচে পরপর আলোচনা করা হলো -
1. 6 থেকে 14 বছরের বদলে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি বা নতুন এই জাতীয় শিক্ষানীতিতে 3 থেকে 18 বছরের বাচ্চাদের শিক্ষার অধিকার আইনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
2. শিক্ষার জন্য নতুন রেগুলেটরি বডি রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ বা ন্যাশনাল এডুকেশন কমিশন গঠন করতে চলেছে যার প্রধান পদে থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ এতদিন ধরে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই সকল কাজ গুলি করে থাকত সেগুলি এখন থেকে আর থাকবে না।
3. ডিজিটালভাবে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল এডুকেশনাল টেকনোলজি ফরম তৈরি করা হবে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কোর্সে প্রাথমিকভাবে আটটি আঞ্চলিক ভাষায় তা প্রকাশ করা হবে।
4. শিক্ষার মান আন্তর্জাতিকভাবে গড়ে তোলার জন্য বিদেশের সেরা 100 টি কলেজকে আমাদের দেশে তাদের ক্যাম্পাস করার অনুমোদন দেয়া হবে। এর মাধ্যমে যৌথ শিক্ষার সমন্বয় গড়ে উঠবে।
5. কস্তুরবা গান্ধী নামের যে স্কুলগুলি ভারতবর্ষে ছিল সেগুলিকে এই জাতীয় শিক্ষানীতিতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা হলো।
6. ভারতের বিভিন্ন high-performance উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশে ক্যাম্পাস করার অনুমতি দেয়া হবে অর্থাৎ এর মাধ্যমে ভারতবর্ষের সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিদেশের সঙ্গে সমন্বয় করে তুলব।
জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 || শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা নিয়োগে বড় পরিবর্তন
এবার বিভিন্ন বিভাগ গুলিতে জাতীয় শিক্ষানীতি তে যেসকল পরিবর্তনগুলি আনা হয়েছে সেগুলি পর পর আমরা দেখে নেব -
স্কুল শিক্ষা :
স্কুল শিক্ষাকে আগের 10+2 এই বিভাগের পরিবর্তে তা নতুন এই জাতীয় শিক্ষা নীতির মাধ্যমে 5+3+3+4 করা হলো। এর মাধ্যমে তিন বছরের আর্লি চাইল্ডহুড কেয়ার এন্ড এডুকেশন এর সাথে দশম শ্রেণীর বোর্ডের পরীক্ষা ব্যবস্থা অবলুপ্ত করে দেয়া হলো। ও একই সাথে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এই চার বছর মোট আটটি সেমিস্টারের ভাগ করা হলো।
সাংগঠনিক স্তর - এই স্তরে কোন শিশু প্রি-প্রাইমারি অঙ্গনারী পর্যায়ে পড়াশোনা করবে দু বছর থেকে প্রাইমারি স্কুলে এবং দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পারবে। সবমিলিয়ে তিন বছর থেকে 8 বছর হবে এই স্তরের পড়াশোনা।
প্রিপারেটরি স্টেজ : এই স্তরে শিক্ষার্থীরা তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অর্থাৎ আট বছর বয়স থেকে 11 বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারবে।
মিডিল স্টেজ : এই স্তরে শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অর্থাৎ 11 থেকে 14 বছর বয়স পর্যন্ত এখানে পড়াশোনা করতে পারবে। এই স্টেজ বা স্তরটি হল সাধারণভাবে আপার প্রাইমারি স্টেজ।
সেকেন্ডারি বা মাধ্যমিক স্তর : মাধ্যমিক স্তর টিকে এবার মোট চার বছরের করা হলো, এরমধ্যে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হলো। এই চার বছরে মোট আটটি সেমিস্টারের ভাগ করা হয়েছে ও a8 সেমিস্টারের মোট ফলাফলের উপর ভিত্তি করে একটি মাত্র রেকর্ড কার্ড প্রদান করা হবে দশম দ্বাদশ শ্রেণির জন্য।
2025 সালের মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সমস্ত স্কুলের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য।
উচ্চমাধ্যমিকে আলাদা কোন বিভাগ থাকবে না অর্থাৎ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সিস্টেম চালু হচ্ছে।
ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই শুরু হবে বৃত্তিমূলক পড়াশোনা 2025 সালের মধ্যে ন্যূনতম 50% স্কুল ও উচ্চ শিক্ষার স্টুডেন্টকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এই সময়কালে দশদিনের ব্যাক বিহীন ইন্টারনেট ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা হবে স্থানীয় অঞ্চলের যেকোনো কাঠের মিস্ত্রী মালি শিল্পীদের কাছে।
একইভাবে দ্বাদশ শ্রেণীর পর্যন্ত বৃত্তিমূলক বিষয়ে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ দিতে হবে।
মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা নিজের সহপাঠীরা এবং শিক্ষকের মূল্যায়ন করবে অর্থাৎ ত্রিস্তরীয় মূল্যায়ন ব্যবস্থা শুরু হবে এই জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে।
তবে বোর্ডের পরীক্ষাগুলি অবজেকটিভ অবজেকটিভ দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই হবে।
যেসকল শিশুরা প্রথম শ্রেণী প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত তাদের জন্য তিন মাস উপযুক্ত একটি প্লে স্কুল তৈরি করতে হবে যা তৈরি করবে NCERT বা SCERT ।
জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 তে শিক্ষার লক্ষ্য শুধু জ্ঞান বৃদ্ধি নয় চরিত্র গঠন ও সার্বিক ভাবে বিকাশ ঘটানো এর উপর ভিত্তি করে পাঠক্রমের দীর্ঘ তা কমিয়ে আনা হয়েছে এবং যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বিমুর্ত চিন্তা, অনুসন্ধিৎসা, আলোচনা মূলক, বিশ্লেষণমূলক বিষয়গুলিকে।
ন্যূনতম পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা আবাহনীও ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করাতে হবে। এমনকি অষ্টম শ্রেণী বা তার পরেও যতদূর সম্ভব শিক্ষার্থী এই ভাষাতে পড়াশোনা করতে পারবে এবং এই সুবিধা সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো স্কুল কেউ মানতে বাধ্য থাকতে হবে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষভাবে নজর দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এর জন্য NCERT এবং NCTE বিশেষভাবে গাইডলাইন তৈরি করবে। B,ED পড়ানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইন্টারনেটের সম্পর্ক আরো বেশি জোর দেওয়ার জন্য অনলাইন কম্পেটিশন কুইজ ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকবে। প্রত্যেকটি স্কুলে স্মার্ট ক্লাস গঠন করা হবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 তে এডাল্ট এডুকেশন এর ক্ষেত্রে কিছু উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে -
যেমন সাক্ষরতা প্রাথমিক শিক্ষা জটিল জীবন কৌশল বৃত্তিমূলক ট্রেনিং প্রভৃতি বিষয়ের উপর এটিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
শিক্ষক নিয়োগ :
PRE-PRIMARY থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ হবে TET বা এন টি এ এর প্রাপ্ত নম্বরের উপর এবং ক্লাসরুম দেমনস্ট্রেশন এর উপর ভিত্তি করে।
শিক্ষকদের যোগ্যতা কি হবে তা NCTE পরবর্তী সময়ে National professional standard for teachers গাইডলাইন প্রকাশের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ :
2021 সাল নাগাদ শিক্ষক প্রশিক্ষণের উপর NCTE এবং NCERT এর যৌথ উদ্যোগে ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক ফর টিচার এডুকেশন NCFTE -2021 নামে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা জানানো হবে।
2030 সাল নাগাদ সাধারণ ডিগ্রী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করা হবে।
চার বছরের ইন্টিগ্রেটেড গ্রাজুয়েশন + বিএড কোর্স চালু হবে আর যারা গ্র্যাজুয়েশন করে নিয়েছে তাদের জন্য দু'বছরের বিএড কোর্স চালু থাকবে।
যারা 4 বছরের গ্রাজুয়েশন বা মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেছে তাদের জন্য এক বছরের বিএড করার ব্যবস্থা থাকবে।
ODL বা ডিসটেন্স এডুকেশন কেউ যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে।
উচ্চশিক্ষা :
2040 সাল নাগাদ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাল্টিডিসিপ্লিনারি করতে হবে আর স্টুডেন্ট সংখ্যা 3 হাজার করে করতেই হবে।
2030 সাল নাগাদ প্রতি জেলায় অন্ততপক্ষে একটি করে মাল্টিডিসিপ্লিনারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
2018 সালের যে গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও ছিল তা 2025 সালে 50% পৌঁছাতে হবে।
মূল্যায়নের গ্রেড অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বায়ত্তশাসনের অনুমোদন দেয়া হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ওপেন ডিসটেন্স লার্নিং বা ODL এবং অনলাইন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এফিলিয়েটেড কলেজ এর মর্যাদা 15 বছরের মূল্যায়নের উপর চ্যানেল প্রাপ্ত হবে।
Deemed to be university, affiliating University, affiliating technical University, unitary University, শুধুমাত্র এগুলি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে মর্যাদা পাবে।
IIT সহ বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিডিসিপ্লিনারি হয়ে উঠবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সমাজসেবা পরিবেশবিদ্যা নীতি শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ক্রেডিট কোর্স এবং প্রজেক্ট চালু করবে। গুরুত্ব পাবে ভারতীয় কৃষ্টি, ইতিহাস ভাষা প্রভৃতি।
কলেজে ভর্তির জন্য NTA চালু হবে।
এখন থেকে আর এম ফিল কোর্স চালু থাকবে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইকো ক্লাব স্পোর্টস ক্লাস সংস্কৃতি ও কলাকেন্দ্র সহ STRESS-FREE শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
হোস্টেল গুলির ফ্যাসিলিটি বাড়াতে হবে ন্যূনতম মেডিকেল ফ্যাসিলিটি সবার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ছাতার তলায় আনতে হায়ার এডুকেশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া / HECI গঠিত হবে। এবং সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি হবে NOT-FOR-PROFIT এই আদর্শে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন