কলের কলকাতা প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর | আমার বাংলা | সুভাষ মুখোপাধ্যায়

     দ্বাদশ শ্রেণীর আমার বাংলা প্রবন্ধ গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য একটি প্রবন্ধ হলো কলের কলকাতা। এই কলের কলকাতা গল্প থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো। এখান থেকে প্রয়োজনীয় উত্তরগুলি নোটস আকারে লিখে নিতে পারো।

কলের কলকাতা



"কলের কলকাতা" গল্পের বিষয়বস্তু 


    আমার বাংলা প্রবন্ধ গ্রন্থের অন্যান্য প্রবন্ধ গুলির মত কলের কলকাতা প্রবন্ধটিতেও বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরেছেন। কলের কলকাতা প্রবন্ধে আমরা কলকাতার দুটি রূপ দেখতে পাই। লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় যখন খুব ছোট ছিলেন তখন মোনা ঠাকুরের মুখে কলকাতার গল্প শুনিয়েছিলেন। কলের কলকাতা প্রবন্ধে তিনি দম দেওয়া কলের পুতুলের মত মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবন সংগ্রামের ছবি যেমন রেখেছেন যেমনি রূপ দিয়েছেন শহরাঞ্চলের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা বলিকেও। 

    তার বর্ণনা করা কলকাতাতে তিনি দেখিয়েছেন কলপাড়ে বাসন মাজার শব্দ, কাকের কলরব, কানা গলির মোড়ে গ্যাসের টিম টিমে আলো, মিষ্টির দোকান, কর্পোরেশন স্কুল, ডাক্তার, কবিরাজ, সরকারি অফিসের কর্মচারী, পাউরুটি তৈরির কারখানা, সন্ন্যাসিনী, ও কাবুলিওয়ালা সেখানে উপস্থিত ছিল। 

    সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কলকাতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে এমনকি সেই শহরের এখন মাটি পর্যন্ত বিক্রি হয়। লেখক যখন কলকাতাতে বসে কলকাতা কে দেখেছেন তখন তার গ্রামের কথা মনে হয়েছে যেখানে ডুব দিয়ে শামুক তোলা তার কাছে জীবন্ত স্মৃতি বলে মনে হয়েছে। 

     আবার লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় কলকাতাকে মিটিং-মিছিলের রূপে রূপায়িত করেছেন যেখানে পিকেটিং, মার্চিং, বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী যুদ্ধ-বিগ্রহ, স্বদেশীদের হিড়িক। আবার বিয়াল্লিশের আগস্ট আন্দোলনের কলকাতার অস্থির ময় অবস্থা তিনি বর্ণনা করেছেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও দেশভাগের যন্ত্রণা ও তার কলের কলকাতা প্রবন্ধের মধ্যে ফুটে উঠেছে। 



মোনা ঠাকুর কলের কলকাতা প্রবন্ধে কলকাতার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা লেখ। তিনি কেন কলকাতা ছেড়ে ফিরে এসেছিলেন ?


👉    কলের কলকাতা প্রবন্ধের লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় কলকাতার দুটি রূপ কে তুলে ধরতে গিয়ে প্রথমেই একটি চরিত্রের পরিচয় দিয়েছেন। কলের কলকাতা গল্পের লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় চরিত্রটিকে প্রথমে বর্ণনা করেছেন তিনি হলেন মোনা ঠাকুর। 25 বছর আগে কালীঘাটে পৈতে নিতে যাওয়া মোনা ঠাকুর যেভাবে কলকাতার বর্ণনা দিয়েছেন তা অনেকটা এরকম - 

    কলকাতায় বাড়ি আর গাড়ি ছাড়া কিছু নেই, সেখানে লোকে লোকারণ্য। গ্রামের মতো মাটি, বাঁশ সেখানে দেখা যায় না। সেখানে শুধু চুন বালি ইট আর পাথর। কলকাতায় রাতে অন্ধকার নামে না, কারণ সুইচ টিপলে নাকি জোনাকি ফিনকি দেয়। আবার কল টিপলেই জল পড়ে। মোনা ঠাকুর কলকাতার গলি দেখে নাকি অবাক হয়েছিলেন, তার পা কন কন আর মাথা বন বন করে। এমনকি ভয় পেয়ে সে ঠাকুরের নাম জপ করে। তার কাছে কলকাতা এক আজব শহর, এখানে যা চাইবে তাই পাবে।


👉    আজব শহর কলকাতা তে যখন মোনা ঠাকুর ছিলেন তখন হঠাৎ করে একদিন যেন কলকাতা চরিত্র বদলে যায়। তার মতে শহরটা নাকি মাথা খারাপ হয়, শহরটার দালান বাড়ি গুলি হয় হানাবাড়ি। শোনা যায় শুধু গর্জন মুসলমান গুলো কে কাটবো, আর হিন্দু গুলোকে কাটবো। যে রাস্তায় মানুষের জনস্রোত বইতো তা জনশূন্য পরিণত হয়ে যায়। শুরু হয় রক্ত আর আগুনের খেলা। মানুষ রাস্তায় নামে ছুরি আর লাঠি হাতে নিয়ে। মোনা ঠাকুর শেষে কলকাতাকে বলেছেন ক্ষ্যাপা শহর এই ঠান্ডা তো এই গরম। এইরকম ক্ষ্যাপা শহরে মোনা ঠাকুর জীবন বাঁচাতে দরজা-জানালা বন্ধ করে ছ্যক্রা গাড়ি তে এক রাতে গ্রামে ফিরে আসে। 



"চেয়ারের উপর বসে আছেন তাকে দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না।" -  চেয়ারের উপর কে বসে ছিলেন ? লেখক তাকে কোথায় দেখেছিলেন ? লেখক এর এই স্থান দেখার অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে লেখ।


👉     লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আমার বাংলা থেকে নেওয়া কলের কলকাতা রচনায় চেয়ারের উপর বসা ব্যক্তি ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। 


👉    লেখক তার বাড়িওয়ালার সঙ্গে জেলে ঘুরতে গেলে তিনি জেলের ভিতর বা দিকের শেষ ঘরে সুভাষচন্দ্র বসুকে দেখেছিলেন। 


👉    লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় কলকাতায় থাকার সময় তার বাড়িওয়ালা রামদুলাল বাবুর দাদার সঙ্গে একদিন জেলখানায় দেখা করতে গিয়েছিলেন। তিনি ট্রাম থেকে নেমে লোহার বিশাল সিংহ দরজা পেরিয়ে মাথা নিচু করে সেই জেলে ঢুকেছিলেন। তিনি যখন জেলের মধ্যে ঢুকে ছিলেন তখন দেখলেন পরপর বন্দীদের গাড়ি আসছে আর বন্দেমাতরম ধ্বনি তে সমস্ত জেলখানা কেঁপে উঠছে। 

    তিনি জেলের মধ্যে ঢুকে একদম বাঁ দিকের একটি ঘরে সুভাষচন্দ্র বসুকে দেখতে পেয়েছিলেন। যেখানে বন্ধীদের সঙ্গে তার দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যখন সেই বন্দীদের গাড়ি এক এক করে জেলের মধ্যে ঢুকছিল তখন তার থেকে বন্দিরা নামার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন, আর জেলের মধ্যে নিয়ে আসছেন।


    জেলের মধ্যে একটি লোক লেখককে খোকা বলে ডাকলে খোকার আত্মসম্মানে লাগে। কিন্তু জেলের মধ্যে তার এই বন্দীদের দেখে আত্মমর্যাদা আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার পর জেল থেকে বাইরে এসে ওই বন্দীদের কথা মনে করে তার মায়ের কাছে সেখা গান তার মনে পড়ে যায়। 



অসুখ থেকে সেরে ওঠার পর কলের কলকাতা প্রবন্ধে লেখক কলকাতার কি পরিবর্তন দেখেছিল ? 


👉    বিভিন্ন স্বদেশী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যখন সমস্ত কলকাতা উত্তাল হয়ে উঠেছিল তখন লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় কলকাতাতেই ছিলেন। কিন্তু অসুস্থ থাকার জন্য সুভাষ মুখোপাধ্যায় ফিরিঙ্গি পাড়ার এক ভাড়া বাড়িতে এসে উঠেছিলেন। নিজে সুস্থ হওয়ার পর যখন রাস্তায় নেমে আসলেন তখন তার চোখে নতুন এক কলকাতার চেহারা ধরা দিয়েছিল। 

    তিনি যখন অসুস্থ হয়েছিলেন তখন সমস্ত কলকাতা তে স্বাধীনতা আন্দোলনের জোয়ার চলছিল চারিদিকে বন্দেমাতরম ধ্বনিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল কলকাতার আকাশ বাতাস। কিন্তু অসুস্থতা থেকে ফিরে এসে তিনি দেখলেন কলকাতা একদম নিস্তব্ধ সেখানে বাস আর ট্রাম্প এখন পাল্লা দিয়ে চলে। কোথাও আর বন্দেমাতরম ধ্বনি শোনা যায় না। 

     তিনি নতুন কলকাতাতে আরো দেখেছেন চিনা পাড়ার মদের দোকানের সিজ করার ঘটনা। আবার তাকে বাঁচানোর জন্য জুতোর দোকানের মালিক চিং থায় জামিনদার হয়েছে। লেখক কখনো কখনো রাস্তা দিয়ে যাওয়া মোটর গাড়ির নাম্বার গুনতে থাকেন। কখনো বা ইহুদিদের রাস্তার উপর উৎসব পালন করা কে দেখেছেন। রবিবারের দিন হলে গির্জার সামনে খ্রিস্টানদের সংগীত, আর মঙ্গল সমাচার মতিউর পাট শুনেছেন।


     এ রকম অবস্থার মধ্যেও তিনি প্রেসিডেন্সি জেলে গেছেন রামদুলাল বাবুর দাদাকে দেখার জন্য। জেলের মধ্যে ঢুকে তিনি সুভাষচন্দ্র কে দেখেছেন। বন্দেমাতরম ধ্বনি তে সমস্ত জেলখানা কেঁপে উঠতে দেখেছেন। আর পরাধীন ভারতবর্ষের সুভাষচন্দ্র বসুর দেশ প্রেমিক সত্বাকে উপলব্ধি করেছেন। তার কিশোর বয়সের সেই দেশপ্রেমিক সত্তাকে বাঙালির মনে প্রাণে তিনি উপলব্ধি করেছেন। 



"ছেলেটার মুখ থুবরে মাটিতে পড়ে গেল।"  -   ছেলেটি মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার আগের ঘটনা টি লেখ। ছেলেটি মুখ থুবরে পড়ে যাওয়ার পর কি ঘটেছিলো। 


👉    প্রখ্যাত লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় তার কলের কলকাতা গল্পে স্বাধীনতাকামী সময়ের কলকাতার উত্তাল ঘটনাকে বর্ণনা করেছেন এই রচনার মধ্যে। স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনরত একটি বাচ্চা ছেলে কার্জন পার্কের রাস্তা পার হয়ে সাহেবদের হোটেলের মধ্যে একটি জ্বলন্ত মশাল ছুড়ে ফেলে। এর ফলে সঙ্গে সঙ্গে সেই হোটেল দাও দাও করে জ্বলতে থাকে আর সাহেবদের আত্ম ক্রন্দন শোনা যায়। 

    ছেলেটির সেখান থেকে ফিরে যখন চৌমাথায় পৌঁছায় তখন একটি কমলালেবুর খোসা ছাড়াতে থাকে, হঠাৎ করে একটি গুলির শব্দ হয়। আর সেই শব্দের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি মুখ থুবরে রাস্তার উপর পড়ে যায়। 


👉    এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষতবিক্ষত চেহারাটি কে আরো ভালোভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা ভারত মায়ের সন্তান গুলো একে একে মেডিকেল কলেজে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভর্তি হয়েছিল। এরকমই এক সন্তান ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে যায় তখন অনেকে তাকে বাধা দেয়।

    তাদের বাধাকে উপেক্ষা করে তিনি তার ক্ষতটি দেখায়। যে ক্ষত দিয়ে অনর্গল রক্ত বেরিয়ে তার সমস্ত ধুতি-পাঞ্জাবি ভিজে যাচ্ছিল। যদিও তার সেই গুলিটি পিঠে লেগেছিল তবুও তার জন্য কোন আক্ষেপ ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্ট্রেচারে করে এমার্জেন্সি তে নিয়ে যাওয়া হয়। ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তির সামান্য আত্মমর্যাদায় লেগেছিল গুলিটি তার পিঠের লাগার জন্য।