ছাতির বদলে হাতি প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর | আমার বাংলা | সুভাষ মুখোপাধ্যায়

     দ্বাদশ শ্রেণীর আমার বাংলা প্রবন্ধ গ্রন্থের ছাতির বদলে হাতি প্রবন্ধটি একটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। ছাতির বদলে হাতি প্রবন্ধ থেকে উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের যে সকল প্রশ্ন গুলি গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন হিসাবে পড়তে হবে, নিচে সে গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তোমরা এই গল্পটির জন্য প্রয়োজনীয় এই প্রশ্নগুলি নোটস আকারে লিখে নিতে পারো। 

"ছাতির বদলে হাতি" প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর



"ছাতির বদলে হাতি" প্রবন্ধের বিষয়বস্তু 


     লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় বাংলাদেশে ভ্রমণকালে যেসকল ঘটনাগুলি প্রত্যক্ষ করেছিলেন সেই সকল ঘটনা গুলি তিনি আমার বাংলা প্রবন্ধ গ্রন্থের বিভিন্ন প্রবন্ধে লিপিবদ্ধ করেছেন। এ রকমই একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনার সাক্ষী তিনি রেখেছেন ছাতির বদলে হাতি নামক প্রবন্ধ টি তে। জমিদারের অত্যাচারে একজন অসহায় সাধারণ চাষীর কি অবস্থা হতে পারে তার চরম সাক্ষী হলো এই ছাতির বদলে হাতি গল্পটি। 

    বাংলাদেশের এক হালুয়াঘাট নামক বন্দর এর ঘটনা এই গল্পে তিনি উল্লেখ করেছেন। চেং মান নামে এক সাধারণ ব্যক্তি একদিন বাজারে বাজার করতে আসলে অকালে বৃষ্টি নামে।  এই ঘটনাকে লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় প্রায় 30 থেকে 35 বছরের আগেকার ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। এদিকে প্রায়ই দিনের শেষ হতে শুরু করল কিন্তু সেই বৃষ্টি কোনভাবেই থামতে চায় না। তখন সে মনমোহন মহাজন দোকানের ঝাঁপির তলায় আশ্রয় নেয়। 

    চেং মানের অসহায় অবস্থা দেখে মনমোহন যেন দয়ালু হলেন, তাকে একটি ছাতা দিয়ে বললেন এই ছাতা নিয়ে বাড়ি যেতে আর পরে বাজারে এলে তাকে ফিরিয়ে দিতে। চেং মান কয়েক মুহুর্ত ভেবে সেই ছাতাটি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরে। এই ঘটনার পরে যতবারই চেং মান বাজারে যাই তখন ছাতার প্রাপ্য টাকা মহাজনকে দিতে গেলে মহজন বারবারই তাকেে ব্যস্ত হতে বারণ করে।


    চেং মান মহাজনের বুদ্ধির কাছে অনেকটা ইঁদুর কল এর মত আটকে পড়েছে তা সে বুঝতে পারে। ঠিক যখন চেংমান একদিন সেই ছাতির কথা ভুলে গেছে ঠিক তখন মহাজন' তার লাল খাতা বের করে সব হিসাব সমেত সমস্ত টাকা শোধ করতে জোর করে। ইতিমধ্যে সেই ছাতার দাম কয়েক বছরের মধ্যে শুধ - আসল সহ 1000 টাকায় পৌঁছেছে। এই কারণে লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় গল্পটির নাম সামান্য ছাতির বদলে হাতি রেখেছেন।



"ছাতির বদলে হাতি" প্রবন্ধে চাষীদের উপর মহাজন দের অত্যাচারের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। 


   আমার বাংলা প্রবন্ধ গ্রন্থের ছাতির বদলে হাতি প্রবন্ধটিতে লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় প্রায় 30 থেকে 35 বছর আগেকার একটি মহাজন অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। ছাতির বদলে হাতি এই গ্রন্থটি পড়লে বোঝা যায় কিভাবে একজন সামান্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ মহাজনদের অত্যাচার এর ফলে শোষিত ও নিপীড়িত হয়ে সর্বহারা তে পরিণত হতো। 

    পাহাড়ের ঢালের এক ছোট ব্যাবসায়ী চেং মান হালুয়াঘাট বন্দরে  একদিন বাজার করতে আসলে বৃষ্টিতে আটকে পড়ে। তখন অসহায় অবস্থা দেখে সে বাজারের এক মুদি দোকানি মনমোহন মহাজন ঝাঁপের তলায় আশ্রয় নেয়। বৃষ্টি না থামতে দেখে মনমোহন মহজন সদয় হয়ে তার নতুন ছাতাটি চেং মানের মাথায় মেলে ধরে । এই ঘটনার পর চেং মান তার ছাতার জন্য টাকা মহাজনকে দিতে গেলে মহাজন' তাকে তাড়াহুড়ো করতে বারণ করে। কিন্তু কয়েক বছর পরে সেই ছাতার টাকা কয়েকগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়ে 1000 টাকায় পরিণত হয়। যে টাকা চেং মান কে  শোধ করতে হয়েছিল। 

    আরেকটি ঘটনা এই গল্প থেকে জানতে পারি - কুমার গাতির ব্যবসায়ী নিবেদন সরকার তার ব্যবসার জন্য টাকা ধার করেছিল মহাজন কুটিশ্বর সাহার কাছ থেকে । সেই ধারের টাকা শোধ করতে নিবেদন সরকারের ছেষট্টি বিঘে জমি নিয়ে নিয়েছিল কুটিস্বর সাহা।


    লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় আরেকটি মহাজন অত্যাচারের কথা উল্লেখ করেছেন তাহলো - এক চাষী বাকিতে একটি কোদাল এক মহাজনের কাছ থেকে কিনেছিল। সময় মতো সেই চাষী টাকা শোধ করতে না পারার জন্য সেই চাষির 15 বিঘা জমি মহাজন' নিজের করে নিয়েছিল।  এই সকল মহাজন অত্যাচার তৎকালীন বাংলার নির্মমতার পরিচয় বহন করে।



"আর এক - রকমের প্রথা আছে" - এখানে কোন প্রথার কথা বলা হয়েছে ? কিভাবে সেই প্রথার অবসান ঘটেছিল ?


    সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ছাতির বদলে হাতি নামক প্রবন্ধ এ আমরা মহাজনদের অত্যাচার এর বিভিন্ন রকম কাহিনী জানতে পারি। এই সকল মহাজনেরা যেসব প্রথার তৈরি করেছিল তার মধ্যে একটি ছিল 'নানকার প্রথা' ।


    প্রাচীন বাংলার গ্রামের বিভিন্ন মহাজনরা নিজেদেরকে আরো প্রতিপন্ন করে তোলার জন্য অনেক রকম প্রথা চালু করেছিল। এই সকল প্রথার মাধ্যমে ভূমিহীন চাষিরা চাষ করতে পারলেও উদ্বৃত্ত কিছু ভোগ করতে পারত না। জমিদারের যেসকল চাকর স্বত্ব হীনভাবে জমি ভোগ করতো তাদের বলা হতো নানকার প্রজা। এরা ছিল সাধারণ প্রজাদের থেকে আরও গরিব। 

    চাষের জমি পেয়ে তারা চাষবাস করতো কিন্তু আসলে তাদের কোনো অধিকার ছিল না। কিন্তু সময়মতো খাজনা দিতে না পারলে তাদেরকে কাছারিতে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হতো এমনকি গুদাম ঘরে আটকে রাখা হতো। এই ঘটনার পর নিলাম ডেকে তার বিভিন্ন সম্পত্তির দখল করে নিত জমিদার বা তালুকদারেরা। কিন্তু এই নানকার প্রথা একসময় অবসান ঘটে।


    গারো পাহাড়ের উপত্যকায় দুমনাকুরা, ঘোষপাড়া, নওয়াপাড়া, ভুবন কড়া, এসব এলাকায় বসবাসকারী ডালু উপজাতির লোকেরা একজোট হয়েছিল তালুকদার দের বিরুদ্ধে। তারা জমিদারদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তারা জমির ধান আর জমিদারের খামারে তুলবে না। তারা সিদ্ধান্ত মতো কাজ করতে থাকে। চাষীদের জব্দ করার জন্য থানা পুলিশ হলেও তাতে কাজ হয়নি। এর ফলস্বরূপ জমিদার বা তালুকদারদের একদিন এই নানকার প্রথা তুলে নিতে বাধ্য হতে হয়।