হাত বাড়াও প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর | আমার বাংলা | সুভাষ মুখোপাধ্যায়

     সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত আমার বাংলা প্রবন্ধ গ্রন্থের অন্যতম প্রবন্ধ হাত বাড়াও থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের সাজেশন এর জন্য পড়তে হবে বা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে আমাদের পড়ার দরকার এখানে সেই সকল প্রশ্ন গুলি নিয়ে যথাযথ উত্তর সহ আলোচনা করা হলো। এ সকল প্রশ্নের উত্তরগুলো তুমি খাতায় নোট আকারে লিখে নিতে পারো। 

হাত বাড়াও গল্পের প্রশ্ন উত্তর


হাত বাড়াও গল্পের বিষয়বস্তু : 


     লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় বাংলার প্রায় সমস্ত স্থান দর্শন করার বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা তার আমার বাংলা প্রবন্ধের তুলে ধরেছেন। আমার বাংলা প্রবন্ধ গ্রন্থের অন্যতম একটি প্রবন্ধ হাত বাড়াও। এই প্রবন্ধ থেকে আমরা বাংলায় পঞ্চাশের মন্বন্তরের এক অভিশাপ এর ছবি দেখতে পেয়েছি। 

    লেখক শীতের কুয়াশা ঘেরা এক সকালে ফরিদপুরের গাড়ি ধরার জন্য রাজবাড়ীর বাজারে বসে ছিলেন। হঠাৎ করে দূরে তার চোখে আসে জ্বলজ্বল চোখের একটি ভয়ঙ্কর ও অদ্ভুত জন্তু। জন্তুটি তার কাছে আসতে তার ভুল ভাঙে, তিনি দেখেন সে কোন জন্তু নয় মানুষের পুত্র। যেন খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে রাস্তায় পড়ে থাকা চাল আর ছোলা। 

    এই কঠিন দৃশ্য দেখে লেখক সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে আসেন স্টেশনের ভিড়ে। কিন্তু তার সেই স্মৃতি যেন আজও চোখে জাজ্বল্যমান। সেই দৃষ্টি তাকে আজও তাড়া করে বেড়ায়। তাকে আজও তিনি অনুভব করেন নিঃশ্বাসের শব্দ নদীর জলের শব্দে।


     সেই করুণ চোখদুটি দেখে লেখকের মনে হয়েছে সে যেন শুধু শান্তি চাই। আর তার সরু লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে সে বারবার খুনিদের শনাক্ত করতে চাইছে। গল্পের শেষে তিনি কামনা জানিয়েছেন তাদের প্রতি সদয় হওয়ার জন্য তাদের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। 


"কিন্তু আজও সেই দুটো জ্বলন্ত চোখ আমাকে থেকে থেকে পাগল করে।"  -  কোন দুটি চোখের কথা বলা হয়েছে ? কেন তিনি পাগল হয়ে ওঠেন তা আলোচনা করো। 


👉      প্রখ্যাত লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের হাত বাড়াও প্রবন্ধে উল্লিখিত অমৃতস্য পুত্রা মানুষের জ্বলন্ত চোখ এর কথা বলা হয়েছে। 


👉    লেখক ফরিদপুরে ফেরার জন্য বাস ধরবেন বলে রাজবাড়ীর বাজারে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ করে তার চোখে মিলিটারি ছাউনির কাছে কোন জন্তুর জ্বলন্ত চোখ ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে সেই জন্তুটি তার কাছে আসতে তার ধারণা পাল্টে যায়। তিনি যাকে জন্তু বলে অনুভব করেছিলেন তা আমাদের মতনই মানুষের সন্তান।


    বাংলার পঞ্চাশের মন্বন্তরের ফলে এক দুর্ভিক্ষের হাতছানি গ্রাম বাংলার উপরে বিরাজ করেছিল । মানুষের সন্তান হয়েও আজ এই জন্তুর মতো অবস্থার কারণ সেই মন্বন্তর। কিন্তু যাদের জন্য সাধারণ গ্রামবাংলার মানুষের আজ এই পরিস্থিতি তারা এদের থেকে অনেক ভালো আছে। এরা আজ সামান্য বুভুক্ষ প্রাণীর মতো বাজারে রাস্তায় পড়ে থাকা চাল আর ছোলা খুঁটে খায়। 

  • Toolkit কি ? 
  •     লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় নিজের চোখে এই দৃশ্য দেখে সহ্য করতে পারেননি। এই কারণে তিনি সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে জনগণের ভরা স্টেশনে চলে আসেন। অনেকদিন হয়ে গেলেও লেখক সেই জ্বলজ্বল করা চোখ দুটি আর লিকলিকে সরু আঙুল গুলোওর কথা ভুলতে পারেননি। সেই বুভুক্ষ আদিম জন্তুর ছবি আজও তার চোখে ভেসে ওঠে। আর যখনই সেই জ্বলন্ত চোখ দুটি লেখকের মনে পড়ে তখন তিনি পাগল হয়ে ওঠেন এটা ভেবে যে, আজও পর্যন্ত তাদের দিকে মানুষের কোন সহানুভূতি নেই। 



    "ছুটে পালিয়ে এলাম স্টেশনে" । বক্তা কে ? তিনি ক্যান ওয়ে স্টেশনে পালিয়ে এলেন ? 


    👉    লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের হাত বাড়াও রচনা থেকে উল্লিখিত এই উক্তিটির বক্তা স্বয়ং নিজে। 


    👉    হাত বাড়াও প্রবন্ধের লেখক আমাদের জানিয়েছেন তিনি ফরিদপুর ফেরার জন্য রাজবাড়ির বাজারে অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় তিনি একটি দুরের মিলিটারি ছাউনির পাশে একটি অদ্ভুত জন্তু দেখেন। চারপায়ে এগিয়ে আসা সেই জন্তুটি সঙ্গে তিনি চেনা কোন জন্তুর মিল হঠাৎ করে খুঁজে পাননি।

        কুয়াশার মধ্যে জ্বলজ্বল করছিল সেই জন্তুর চোখ দুটি। লেখক সেই জ্বলজ্বল করা চোখ দুটির মধ্যে এক মায়াবী দৃষ্টি অনুভব করতে পেরেছিল। সেই জন্তুর জ্বলজ্বল করা চোখের দৃষ্টি যেন বুকের বুকের রক্ত হিম করে দিচ্ছিল। লেখক আরো চমকে গেলেন যখন জন্তুটি তার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। 

        তিনি দেখলেন সে কোনো জন্তু নয় মানুষেরই পুত্র। মাজা পড়ে যাওয়া 12 - 13 বছরের এক উলঙ্গ প্রতিবন্ধী ছেলে যে কিনা জানোয়ারের মত চলতে চলতে রাস্তার সামনে এসেছে। লেখকের আরও দেখেন সে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা চাল আর ছোলা খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে।


        লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় অনুভব করেছেন তার সেই হাতের লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে তিনি যেন খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। তার লোমশ হীন শরীর যেন প্রতিবাদের এক স্বরূপ হয়ে লেখকের চোখে ধরা দিয়েছে। মানবদরদি লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের এই রূপ দেখে সহ্য করতে পারেননি, সেই কারণে তিনি সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে স্টেশনে চলে এসেছিলেন। 



    "সরু লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে সেইসব খুনিদের সে শনাক্ত করছে।" -  এখানে খুনিদের বলতে লেখক কাদের বুঝিয়েছেন ? সনাক্ত করেছে বলার কারণ কি ? 


    👉     হাত বাড়াও প্রবন্ধের লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় রাজবাড়ির বাজারের কাছে একটি অদ্ভুত জীব দেখেছিলেন। যাকে তিনি পরে বুঝতে পারেন সে কোন জন্তু নয় মানুষের সন্তান। 12 - 13 বছরের মাজা পড়ে যাওয়া শীর্ণকায় বীভৎস চেহারার যে ছেলেটিকে লেখক দেখেছিলেন, তাকে দেখে লেখক এর মনে হয়েছে সে যেন খুনিদের শনাক্ত করেছে। 

        মানুষের সেই সন্তানটি সরীসৃপ প্রাণীর মতো বুকে হেঁটে হেঁটে রাস্তার ধারে এসে রাস্তার উপর পড়ে থাকা চাল আর ছোলার টুকরো খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। তার সেই হাতের লিকলিকে আঙ্গুল দেখে লেখক এর মনে হয়েছে সে যেন খুনিদের শনাক্ত করছে তার হাতের আঙ্গুল দিয়ে। যারা শহরে-গ্রামে বন্দরে বিভিন্ন মানুষের হত্যা করেছে এমনকি মানুষের মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে সেই সমস্ত খুনিদের সে লিক লিকে আঙ্গুল দিয়ে শক্ত করে চলেছে। 


    👉    যে সবুজ বাংলাদেশকে দেখে লেখকের মনেপ্রাণে বাংলাদেশের প্রতি আবেগ জন্মেছিল কোন এক ভোরের দিনে লেখকের সেই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে। সুজলা সুফলা বাংলাদেশের বুকে তিনি লক্ষ্য করেছেন মন্বন্তরের কালো ছায়া। মানুষের পুত্র মানুষ হয়েও সে আজ চার পায়ের জান্তব বুভুক্ষ প্রাণী।


        যে প্রতিবন্ধী ছেলেটিকে লেখক সেদিন রাজবাড়ির কাছে দেখেছিলেন তার চোখ দেখে লেখক এর দুর্ভিক্ষের করাল মূর্তি মনে হয়েছে। আর বাংলাদেশের মন্বন্তরের চেহারার পিছনে লুকিয়ে আছে অমানুষিক সভ্যতার হাতছানি। লেখকের মনে হয়েছে সেই মাজা পড়ে যাওয়া ছেলেটি যেন তার হাতের আঙ্গুল দিয়ে তাদেরকে শনাক্ত করতে চাইছে যাদের জন্য তাদের এই অবস্থা।