বাংলার চিত্রকলার ইতিহাস সাজেশন | উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন

       উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের বাংলা চিত্রকলার ইতিহাস থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি গুরুত্বপূর্ণ এবং সাজেশন এর জন্য আমাদের অবশ্যই পড়া প্রয়োজন এখানে সমস্ত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হলো উত্তর সহ। তোমরা অবশ্যই এই প্রশ্ন উত্তর গুলি খাতায় নোট আকারে লিখে নাও। 

বাংলার চিত্রকলার ইতিহাস সাজেশন | উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন



বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের অবদান আলোচনা করো ।


বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে চিত্ত প্রসাদ এক স্মরণীয় নাম। চিত্ত প্রসাদ বর্তমানের পূর্ব বঙ্গের / বাংলা দেশের চট্ট গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম চারু চন্দ্র ভট্টাচার্য। চিত্ত প্রসাদ ছোট বেলায় চট্টগ্রামে বড়ো হয়েছিলেন , তার স্কুল জীবন ও কলেজ জীবন এখানে অতিবাহিত হয়। 

       কলেজ ছাত্র থাকার সময় তিনি চট্টগ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির গণ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। তার চিত্র অঙ্কন ছিল স্বাভাবিক স্বভাব জাত গুন। তার বিখ্যাত চিত্র গুলির বেশির ভাগ বাংলার গ্রাম্য জীবনের বিধ্বস্ত নিপীড়িত চেহারা কে বহন করে। 1942 সালের আগস্ট আন্দোলন ও 1943 সালের  মন্নন্তর এর দুর্ভিক্ষের  পটভূমিতে আঁকা ছবি গুলির জন্য তিনি আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। তার আঁকা মেদিনী পুরের দুর্ভিক্ষের ছবি গুলি ছিল বাস্তব ও জীবন্ত। 

      তার বেশির ভাগ ছবি গুলি যেনো দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর কথা বলে। ভারতের নৌবিদ্রহ ও তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহের ছবি গুলিও তার শিল্প গুণের পরিচয় বহন করে।  ছবি আঁকার মাধ্যম হিসাবে তিনি উড কাঠ ও স্কেচ ব্যাবহার করতেন। তার আঁকা দুটি বিখ্যাত ছবি - ফসলের অধিকার ও তেভাগার প্রতিরোধ, আজও ইতিহাস কে বলিষ্ঠ ভাবে সাক্ষ্য দেয়।


     ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি খুব বেশি সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করতে পারেন নি। তার গরীবতাও এই সমস্ত চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। চিত্র শিল্পীর পরিচয়ে তিনি সুদূর মহারাষ্ট্রের অন্ধেরিতেও জীবন যাপন করেছেন। কিন্তু তার বাস্তব পরিণাম খুব খারাপ ও ভয়ংকর হলে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন, ও তার মৃত্যু হয়। জীবনের প্রথম অধ্যায় শুরু হয় এক আন্দোলনের পটভূমিতে, সারা জীবন তিনি আন্দোলনের সাথে এক হয়ে চিত্র একেছেন। 



বাংলার চিত্রকলার ইতিহাস চর্চায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো ।


    পাশ্চাত্য রীতিকে অবলম্বন করে যে সমস্ত বাঙালি চিত্রশিল্পীরা আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইতালি চিত্রশিল্পী গিলারদি এবং ইংরেজী শিল্পী পামার প্রমুখের কাছে জল রং তেল রং ইত্যাদি অঙ্কন প্রণালী শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু তার বেশিরভাগ চিত্রগুলি ছিল ভারতীয় রীতিতে অঙ্কিত। 
   
    তিনি পাশ্চাত্য রীতিকে গ্রহণ করলেও তাতে তিনি খুশি ছিলেন না। এরপর তিনি ভারতীয় রীতিতে যেসকল চিত্রগুলি অঙ্কন করেছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল - বজ্র মুকুট, বুদ্ধ, ঋতুসংহার, কৃষ্ণ লীলা, সুজাতা ইত্যাদি। এই সকল চিত্রগুলি সবই ছিল ভারতীয় আঙ্গিকের অংকন । পরবর্তী সময়ে তিনি ওমর খৈয়াম চিত্রগুলোতে জাপানি রীতি অনুসরণ করেছিলেন। 

    অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত চিত্রটি ছিল স্বাদেশিকতার প্রতিমূর্তি স্বরূপ ভারতমাতা। তিনি ভারতমাতা টিকে এমনভাবে অঙ্কন করেছিলেন যা খুব সহজেই ওই সময়ে স্বদেশপ্রেমী দের মূলমন্ত্র যোগাতে সাহায্য করেছিল। এই কারণে তিনি ভারত মাতার শিল্পীর নামেও পরিচিত। শেষ জীবনে তিনি কুটুম কাটাম নামে একটি আকার নিষ্ঠ বিমুর্ত প্রতিরূপ চিত্র তৈরি করেন।


    বিখ্যাত এই চিত্র শিল্পীর আঁকা বিভিন্ন চিত্র গুলি লন্ডন প্যারিস জাপান প্রভৃতি দেশগুলিতে প্রদর্শিত হয়। তাঁর আঁকা কয়েকটি বিখ্যাত চিত্র হলো শাহজাদপুর দৃশ্যাবলী আরব্য উপন্যাসের গল্প কবিকঙ্কণ চণ্ডী প্রত্যাবর্তন শাজাহান ইত্যাদি। তিনি শিক্ষকরূপে সারা ভারতে যে নতুন চিত্রাংকন রীতি তৈরি করেছিলেন তা ভারতীয় শিল্পের নবজন্ম নামে পরিচিত। 



বাংলার চিত্রকলার ইতিহাসে নন্দলাল বসুর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো। 


   বাংলার চিত্রকলার ইতিহাসে নন্দলাল বসুর নাম টি স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। পিসতুতো ভাইয়ের পরামর্শে তিনি প্রথম চিত্র অঙ্কন করেছিলেন। সেই চিত্র দেখিয়ে তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছিলেন। ছোটো বেলা থেকে তার অঙ্কনের প্রতি আকর্ষণ ছিল। তিনি কুমোর দের কাজ দেখে খুব সহজেই মূর্তি তৈরি করতে পারতেন। 

     রবীন্দ্রনাথের অনেক বইয়ের চিত্রগুলি তিনি অংকন করেছিলেন। এর ফলে তার জনপ্রিয়তা আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। এছাড়াও তিনি ভগিনী নিবেদিতার বিভিন্ন বইয়ের চিত্র সজ্জা রচনা করেছিলেন। ১৯১১ সালে তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কাছে শিল্পচর্চা অভিজ্ঞতা লাভ করেন। যদিও এর দুই বছর আগে তিনি অজন্তা গুহাচিত্রের নকল কাজ করার জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। 

    নন্দলাল বসুর আঁকা বিখ্যাত সব ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো - শোকার্ত সিদ্ধার্থ, সতী, জগাই মাধাই, নটরাজের তাণ্ডব, জতুগৃহ দাহ, পার্থসারথি, শিব মুখমণ্ডল, মহাপ্রস্থানের পথে যুধিষ্ঠির, উমার তপস্যা, উমার ব্যথা, প্রত্যাবর্তন, সিদ্ধিদাতা গণেশ, শিবের বিষপান, যম ও নচিকেতা ইত্যাদি। তার আঁকা বেশিরভাগ ছবিগুলি ছিল পৌরাণিক বিষয়কে ভিত্তি করে|


    প্রখ্যাত এই চিত্রশিল্পী জগদীশচন্দ্র বসুর অনুরোধে বসু বিজ্ঞান মন্দির অলংকরণ করেছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভাতে তিনি শিল্প চর্চা করার জন্য ডাক পেয়েছিলেন। যেমন গান্ধীর আহবানে লখনৌ, হরিপুরা কংগ্রেস, ফৌজ পুর, ইত্যাদি স্থানে শিল্প চর্চা করেছেন। নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং শিল্পীসত্তা তিনি শিল্পচর্চারুপাবলি নামক দুটি পুস্তকের লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।