অলৌকিক গল্পের বড় প্রশ্ন ও উত্তর।

      দ্বাদশ শ্রেণীর নির্বাচিত কর্তার সিং দুগ্গাল রচিত অলৌকিক গল্প থেকে যেসকল বড় প্রশ্ন গুলি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এখানে সেই সকল প্রশ্ন গুলি নিয়ে নোট আকারে পাঁচ মার্কের মতো করে আলোচনা করা হলো। তোমরা খুব সহজেই এই সকল নোটগুলি পড়ে উত্তর দিতে পারো খুব ভালো নাম্বার পাওয়ার জন্য।

"অলৌকিক" গল্পের বড় প্রশ্ন ও উত্তর।


"অলৌকিক" গল্পের বিষয়বস্তু 


      কর্তার সিং দুগগাল তার অলৌকিক গল্পের মধ্যে অলৌকিক ঘটনার যুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রথম গল্পটিতে গুরু নানকের প্রিয় শিষ্য মর্দানা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়লে নানক তাকে পাহাড়ের উঁচুতে বসবাসকারী বলি গান্ধারীর কাছে পাঠাই।

     কিন্তু বলী কান্ধারি জানতে পেরে মর্দানা কে তাড়িয়ে দেন। কয়েকবার পরপর বলি কান্ধারী কাছে পৌঁছানোর পরেও সে যখন জল পাই না, তখন অচৈতন্য মর্দানা কে গুরু নানক নিজেই পাথর সরিয়ে জলের ব্যবস্থা করে দেন। এমনকি বলি কন্ধারি পাথর  ছুড়ে মারলো নানক হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বাঁচান সবাইকে।

     লেখক এর কাছে আপাতভাবে এ ঘটনা অসম্ভব মনে হলেও পরে মায়ের বান্ধবীর কাছে শোনা ট্রেন থামানোর কাহিনী শুনে তিনি বিশ্বাসযোগ্যতা খুঁজে পান। পাঞ্জা সাহেবের মানুষেরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বন্দি করে নিয়ে যাওয়ার ট্রেন থামিয়ে ছিল তাদের জীবনের বিনিময়ে।


    এই অবিশ্বাস্য কাহিনী শুনে তিনি ঘটনাটিকে সম্ভব বলে মনে করেছিলেন। আর তিনি এটা অনুভব করেন যে মানুষের ইচ্ছা শক্তি, সাহস আর সংকল্প যে কোনো অলৌকিক ঘটনা কে সম্ভব করে তুলতে পারে। 



"গল্পটা আমাদের স্কুলে শোনানো হল।"  -  গল্পটা কি ? স্কুলে গল্পটা শুনে লেখক এর কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ? 


     

     কর্তার সিং দুগগাল রচিত অলৌকিক গল্পের একটি অলৌকিক গল্পের কথা এখানে বলা হয়েছে। গুরু নানকের শিষ্য মর্দানা আদেশ মত তিনবার পাহাড়ের উপর বলি কন্ধারির কাছে যান। কিন্তু বলি কন্ধারী তাকে গুরু নানকের শিষ্য বলে প্রতিবারই তাড়িয়ে দিয়েছিল। বারবার পাহাড়ে ওঠা আর নামা করতে করতে শিষ্য মর্দানা যখন অজ্ঞান হওয়ার পথে ঠিক তখন গুরু নানক তাকে সামনের একটা পাথর তুলতে বলে। 

     গুরুর আদেশ মত পাথরটি তোলার সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে অনর্গল জল বের হতে থাকে। তখন সেই জল পান করে শিষ্য মর্দানা তার  তেষ্টা মিটিয়ে ছিল, অন্য  দিকে বলি কন্ধারী যখন দেখল তার কুয়োতে একটুও জল নেই তখন রেগে গিয়ে উপর থেকে পাথর গড়িয়ে দিতে লাগল গুরু নানকের দলের উপর। 

    উপর থেকে পাথর নিজের দিকে আসতে দেখে শিষ্য মর্দানা গুরুর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠে। গুরু নানক তখন শিষ্য মর্দানর অসহায় অবস্থা দেখে জয় নিরংকার বলে সেই পাথর কে হাত দিয়ে থামিয়ে দেন ও শিষ্য মর্দানার প্রাণ বাঁচান। প্রশ্নে গল্পটা বলতে এই গল্পটির কথাই বলা হয়েছে। 


     উপরে বর্ণিত এই গল্পটি শুনে লেখক বিশ্বাস করতে পারেনি। বিশ্বাস না করে তিনি মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে রীতিমতো তর্ক জুড়ে দেন। মাস্টারমশাই তাকে যথেষ্ট ভাবে বোঝাতে চেষ্টা করলেও তিনি কখনো বুঝতে চায়নি এবং এই ঘটনার পরে লেখকের মাঝে মাঝে চেঁচাতে ইচ্ছা করতো। 



"ঠিক হলো ট্রেনটা থামানো হবে।"  -  কোন ট্রেন এর কথা বলা হয়েছে ? কিভাবে ট্রেনটি থামানো হয়েছিল তা আলোচনা করো।


     কর্তার সিং দুগগাল এর অলৌকিক গল্প থেকে আলোচ্য লাইনটি নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নে যে ট্রেনের কথা বলা হয়েছে সেটি আসলে বন্দি ভারতীয়দের অন্য শহরে নিয়ে যাওয়ার ট্রেন ছিল। এই ট্রেনের উপরে নির্দেশ ছিল যে বন্দিরা কাতর হলেও ট্রেনটি কোন ভাবে থামানো যাবেনা। 


      পাঞ্জা সাহেবের লোকেরা ট্রেনটি থামানোর নির্দেশকে মানতে পারেনি, কারণ এখানে একটি সংস্কার তাদের এই নির্দেশ মানতে দেয়নি। সংস্কার টি হলো, যে শহরে গুরু নানক মর্দানার জলতেষ্টা মিটিয়েছিলেন সেই গ্রামের উপর দিয়ে ক্ষুধার্ত বন্দীদের নিয়ে যাবে তা তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবে না। 

     অভুক্ত হাজার হাজার বন্দীদের পাঞ্জা সাহেবের গ্রামের উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এই ঘটনা পাঞ্জা সাহেবের গ্রামবাসীরা মেনে নিতে পারেনি। এই কারণে তারা প্রথমেই স্টেশন মাস্টারের কাছে কাতর আবেদন জানান। রীতিমতো টেলিফোন, টেলিগ্রাম পেয়েও কর্তৃপক্ষ কোনো রকম পদক্ষেপ নেয় না। ততক্ষনে পাঞ্জা সাহেবের লোকেরা স্টেশনে রুটি, পায়েস, লুচি, জল ইত্যাদি নানান খাদ্য মজুদ করে।


    এরপর শুরু হয় ট্রেন থামানোর জন্য জীবন মরণের খেলা। ট্রেনটি যখন স্টেশনের দিকে ছুটে আসছে তখন ট্রেনটি থামানোর জন্য শত শত নর-নারী ট্রেন লাইনের উপর শুয়ে পড়ে। নির্বিচারে ট্রেন চলতে থাকে তাদের উপর দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে পাশের সেতুর দিকে রক্তের স্রোত বইতে থাকে। এইভাবে তাদের জীবনের বদলে সেই ট্রেনটিকে তারা থামাতে পেরেছিল। 



"চোখের জলটা তাদের জন্য।"  -  বক্তা কাদের জন্য চোখের জল উৎসর্গ করেছেন ? চোখের জল আসার কারণ টি সংক্ষেপে লেখ। 


     কর্তার সিং দুগ্গাল রচিত অলৌকিক গল্পের উল্লিখিত গল্পকথক এই উক্তিটি করেছেন। পাঞ্জা সাহেবের মানুষ যারা কোনো কিছু ভয় না করে নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে ট্রেন থামিয়ে খিদে কষ্ট পাওয়া বন্দীদের খাদ্য আর জল পৌঁছে দিয়েছিল তাদের জন্য তার এই চোখের জলকে তিনি উৎসর্গ করেছেন।


     ইংরেজ শাসন কালে কোন এক শহরের নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর অত্যাচার করার পর ইংরেজ সৈন্যরা তাদের অন্য একটি শহরে ট্রেনে করে নিয়ে যাচ্ছিল। সমস্ত বন্দীরা ছিল তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত। ওই ট্রেনটি যাওয়ার কথা ছিল পাঞ্জা সাহেব গ্রামের উপর দিয়ে, যে গ্রামে একদিন গুরু নানক তার শিষ্য মর্দনার তৃষ্ণা মিটিয়ে ছিল। 

     এমন একটি গ্রামের উপর দিয়ে খিদে আর তৃষ্ণায় কষ্ট পাওয়া ভারতীয়রা কি করে যাবে এবং এই ঘটনা তারা কি করে সহ্য করবে এর জন্য পাঞ্জা সাহেবের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। কারণ সেই গ্রামের মানুষ হিসাবে এই ঘটনা তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তারা যথারীতি ট্রেনটিকে তাদের গ্রামের স্টেশনে থামানোর জন্য স্টেশন মাস্টারের কাছে আবেদন জানায়, কিন্তু তাতেও তারা সিদ্ধান্ত পাল্টায় না।


     তখন পাঞ্জা সাহেবের লোকেরা নিজেদের প্রাণ কে বলি দিয়ে রক্তের নদী বইয়ে দিয়ে, সেই ট্রেনটিকে থামায় ও অভুক্ত বন্দীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সেই ট্রেনটিকে থামানোর জন্য যে মানুষগুলো তাদের জীবন দিয়েছিল, গল্পকথক তার চোখের জল টুকু তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ।