দ্বাদশ শ্রেণীর নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর সাজেশন 2021

      দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পাঠ্য নানা রঙের দিন নাটক থেকে যেসকল বড় প্রশ্নগুলির পরীক্ষা তে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো। দ্বাদশ শ্রেণীর এই নানা রঙের দিন নাটকের সাজেশন প্রশ্ন উত্তর গুলি তুমি এখান থেকে খাতায় লিখে নিতে পারো। নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন উত্তর

নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর


নানা রঙের দিন নাটকের বিষয়বস্তু 


     নানা রঙের দিন নাটকের অন্যতম এবং প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত বাবু তার জীবনের উত্থান ও পতনের সাক্ষী হয়ে নাটকে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। প্রতিটি প্রাণীর জীবনে শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য এই তিনটি দশা বাঞ্ছনীয় ভাবে এসে থাকে। রজনী বাবুর জীবনে যখন যৌবন ঠিক তখন তিনি নাটকে ভালোবেসে ছিলেন।নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন উত্তর

    তার নাটকের প্রতিভা ছিল তীরের ফলার মতো ধারালো, যা দেখে তার প্রেমিকা তার প্রেমে পড়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রেমিকার বাবা বলেছিল তার মেয়েকে বিয়ে করতে হলে নাটক ছাড়তে হবে। কিন্তু রজনী বাবু নাটক কে ছাড়তে পারবেন না প্রেমকে পরিত্যাগ করতে পারলেও। সুতরাং তার জীবনে নাটক বড়ো হয় থাকলো।

    কিন্তু জীবনের শেষে দাঁড়িয়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন আজ আর তিনি নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন না তিনি মানুষকে হাসানোর জন্য দিলদারের অভিনয় করতে ব্যস্ত। তার অভিনয় জগতের এই প্রশ্নের সঙ্গে নিজের জীবনের অনেক মিল তিনি লক্ষ্য করতে পেরেছিলেন। প্রতিটি মানুষের জীবন ঠিক একই রকম তার উত্থান ও পতন দুই ই অনিবার্য। তাই রজনী বাবু থিয়েটার শেষ হওয়ার পরে অন্ধকার ঘরে তার 68 বছরের জীবনকে অতিবাহিত হতে দেখেছেন।নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন উত্তর


নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর 

    এখানে নানা রঙের দিন থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষায় আসার মত শুধুমাত্র সেই সকল প্রশ্ন গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো তোমরা প্রয়োজনে এই সকল প্রশ্ন গুলি ও তার উত্তর খাতায় নোট আকারে লিখে নিতে পারো।

     যদি নোটস গুলিতে কোনরকম বানান ভুল বা বাক্যগুলোতে অসঙ্গতি থাকে তাহলে তা অনিচ্ছাকৃত। লেখার সময় ঠিক করে লিখতে হবে আর নিচে কমেন্ট করলে তারপরে ঠিক করে দেওয়া হবে।নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন উত্তর



"নানা রঙের দিন নাটক" অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।


     নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় নানা রঙের দিন নাটকে যে ঘটনার ঘনঘটা তৈরি করেছেন তার একমাত্র মুখ্য চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। সমস্ত নাটকে তার জীবনের উত্থান যৌবন পতন মূল বিষয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। নাটকে রজনীকান্ত 68 বছর বয়সের এক বৃদ্ধ অভিনেতা। তারপর ৪৫ বছরের নাট্য জীবনে সে আজ অভিনয় শেষে দিলদারের বেশে মাতাল।নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন উত্তর

     রজনীকান্তের জীবনের যন্ত্রনা নাটকের অন্যতম বিষয়। আপন বলতে এই সংসারে তার কেউ নেই তাই অভিনয় শেষে বাড়ি ফেরার কোনো তাড়া থাকে না। এই আক্ষেপ তার জীবনকে খুব কষ্ট দেয়। জন্মগতভাবে তিনি বাংলার প্রাচীন ভদ্র বংশের সন্তান। অভিনয় শুরুর প্রথমে পুলিশের চাকরি পান কিন্তু নাটকের প্রতি ভালোবাসা তাকে ওই থিয়েটারে আসতে বাধ্য করেছিল।

    রজনী বাবুর জীবনে থিয়েটারেই ছিলো তার প্রথম প্রেম। দুজনের সেই গভীর প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভালোবাসার থিয়েটার। দীর্ঘ অভিনয় জীবনের শেষে আজ রাতে যেন তিনি জীবনের হিসাবটা কালিনাথ সেনের সাথে বুঝে নিতে চেয়েছেন।নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন উত্তর


    যে থিয়েটার তার জীবনে পবিত্র শিল্পের মতো এসেছিল যাকে তিনি পবিত্র শিল্প বলে মনে করতেন, তিনি অনুভব করেছেন সেই থিয়েটার থেকে যথার্থ মর্যাদা তিনি পাননি। বরং অবহেলা আর অবজ্ঞার সম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের প্রতি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস তিনি শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাননি। তাই তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন - " হায়রে প্রতিভা কোথায় গেলো বলতো ?" । নাটকে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় যে দুঃখ, যে সুখ পেয়েছেন তা ট্রাজিক নায়কের মতোই নাট্যমঞ্চ হয়েছে তার জীবনের শেষ রঙ্গ মঞ্চ।




"আমার দিন ফুরিয়েছে" - কে কোন প্রসঙ্গে এই উক্তিটি করেছেন ? এই উক্তি করার আসল কারণ কি বলে তোমার মনে হয় ?


     নানা রঙের দিন নাটকে ট্রাজিক নায়ক রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নিজের জীবন সম্পর্কে এই উক্তিটি করেছেন। তার বর্ণময় জীবন থিয়েটার জীবনে আজ ক্রমশ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। নায়ক চরিত্র থেকে আজ তিনি সামান্য মাত্র দিলদারের মত চরিত্রে অভিনয় করছেন। এই নেতিবাচক মনোভাবের ফলে তার জীবনে নেমে এসেছে চরম হতাশা, এই হতাশা থেকে তার এই উক্তিটি।নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন উত্তর

    45 বছরের থিয়েটার জীবনের শেষে মধ্যরাতের শূন্য স্টেজে দাঁড়িয়ে রজনী বাবু নিজের জীবনের হিসাব নিকাশ উপলব্ধি করতে চেয়েছেন। একে একে তার মনে পড়েছে হারিয়ে যাওয়া পুরনো দিনগুলোর কথা - যখন তার জীবনে অভিনয় ছিল একমাত্র বস্তু। থিয়েটার জীবনের জন্য সে প্রেমকে প্রত্যাখ্যান করতে দ্বিধা করেনি।

    তার অভিনয় প্রতিভায় সে একদিন নক্ষত্র ছিল। এই প্রসঙ্গে সে মনে করেছে বক্তিয়ার কিংবা ঔরঙ্গজেব চরিত্রকে। কি তেজ, কি প্রতিভা, কি দীপ্তি ছিল তার সেই সকল অভিনয় করা চরিত্র গুলির মধ্যে। কিন্তু সে নক্ষত্র আজ আলোহীন হয়ে পড়েছে, কারণেই বার্ধক্য বয়সে অভিনয় প্রতিভা ধীরে ধীরে তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।


    তার প্রতিভা হারিয়ে যাওয়ার জন্য সেই অভিনয় তিনি আর আজ ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন না। ধীরে ধীরে তার অভিনয় জীবনের মৃত্যু ঘটে চলেছে বলে তিনি আক্ষেপ করেছেন। একজন মৃত্যুপথযাত্রী যেমন বুঝতে পারে তার মৃত্যুর কথা তিনিও ঠিক জীবনের অন্তিম খানকে উপলব্ধি করেছেন। নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন উত্তর


নানা রঙের দিন নাটকের প্রম্পটার কলিনাথ সেনের চরিত্র আলোচনা করো।


    নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুদিত নাটক নানা রঙের দিন এ 60 বছরের কাছাকাছি একটি চরিত্র হলো কালিনাথ সেন। গভীর রাতে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় যখন নেশার ঘোরে মত্ত হয়ে একা মঞ্চেপাগলের মত বকে চলেছেন ঠিক তখনই ময়লা পাজামা পরা কালো চাদর গায়ে এলোমেলো চুলের কালিনাথ সেনের প্রবেশ ঘটে।

     নিজস্ব বাসস্থানহীন কালিনাথ এর ব্যক্তিগত জীবনে রজনীকান্তের মত দুঃখের। কিন্তু সারা জীবনের সমস্ত হতাশা, না পাওয়া, আক্ষেপের সঙ্গে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। এখানেই হয়তো এই চরিত্র দুটির মধ্যে পার্থক্য। গভীর রাতে নেশাগ্রস্ত হয়ে যখন রজনীকান্তের গলায় হতাশার সুর বেজে উঠেছে, তখন কালিনাথ বাবু থাকে পুরনো দিনগুলোর কথা মনে না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

     কালিনাথ সেন আসলে নাট্যমঞ্চের একজন প্রম্পটার, তিনিও নাটককে জীবনের থেকেও বেশি ভালোবেসেছেন। তার ভালোবাসার কারণেই অনেক সহজেই রজনী বাবুর সঙ্গে তিনি মঞ্চের উপর উঠে নাটকের সংলাপ দক্ষতার সাথে অভিনয় করে তুলেছিলেন।

    কালিনাথ সেনের চরিত্রে এক মানবিকতার লক্ষণ ফুটে উঠেছে। অবসাদগ্রস্ত রজনীকান্তের অবস্থা বুঝতে পেরে তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এমনকি গভীর রাতে রজনী বাবুকে সে বাড়ি পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। রজনী বাবুকে অতি নিচে শ্রদ্ধা সহকারে ভালোবাসতেন তা আমরা বুঝতে পারি। নানা রঙের দিন নাটকের প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় কে উজ্জ্বল করে তোলার জন্য কালিনাথ সেনের এই পার্শ্ব চরিত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।



"শিল্পকে যে মানুষ ভালোবেসেছে - তার বার্ধক্য নেই..." -  মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখ।


     বিখ্যাত নাট্যকার আন্তন চেখভের সোয়ান সং অবলম্বনে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা নানা রঙের দিন নাটকটি স্মৃতির পথ ধরে একজন অভিনেতা নিজের জীবনকে দেখার চেষ্টা করেছেন। নাটকের প্রধান চরিত্র বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় 68 বছর বয়সে এসে তার অভিনয় জীবনের চূড়ান্ত উত্থানকে স্মরণ করে দুঃখ অনুভব করেছেন।

    বর্তমানে বয়সের কারণে রজনী বাবুকে দিলদারের মত গৌণ চরিত্রে অভিনয় করতে হচ্ছে। কিন্তু তার মনে এখনও ঔরঙ্গজেব সুজা বক্তিয়ার এসকল উজ্জ্বল চরিত্রের দীপ্তি স্পষ্ট। শূন্য প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে প্রোমোটার কালিনাথ সেনকে সামনে রেখে সেই সকল চরিত্রের উক্তি আজ তিনি অনায়াসে অভিনয় করতে পারেন।

     এই কারনে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় মনে করেছেন যার প্রতিভা আছে বয়স তার কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। এই অভিনয় কে ভালোবাসতে গিয়ে তার একমাত্র ভালবাসার মানুষটি তাকে ছেড়ে গিয়েছে। জীবনের শেষ পর্বে দাঁড়িয়ে মানুষটির নিঃসঙ্গ একা তবুও অভিনয় কে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছেন।


    সম্রাট শাহজাহান যেমন শেষ জীবনে সমস্ত অলংকার এর বাইরে থেকে একা একা জীবন যাপন করেছিলেন ঠিক তার অবস্থাও একই রকম। তবুও রজনীকান্ত বাবু বয়সকে মেনে নিলেও শিল্পকে চূড়ান্ত সত্য বলে ঘোষণা করেছেন - শিল্পকে যে মানুষ ভালোবেসেছে তার বাধ্যক্য নেই। কারণ শিল্পীসত্তা থাকে হৃদয়ে বয়স সেখানে ছাপ ফেলতে পারেনা।