প্রচেষ্টা ও ভুল কৌশল কি এর পরীক্ষাটি লেখ এবং মুখ্য সূত্রগুলির শিক্ষাগত গুরুত্ব আলোচনা করো।

  মনোবিদ থনডাইকের মতে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে প্রকৃত সংযোজন ছাড়া সম্ভব নয়। প্রচেষ্টা ও ভুল তত্ত্ব টি এই সংযোজনবাদ এর উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। সংযোজনবাদ এর দুটি প্রধান উপাদান এক উদ্দীপক ও দুই প্রতিক্রিয়া। থনডাইকের মতে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার নির্ভুল সংযোজনী হলো শিখন। 

প্রচেষ্টা ও ভুল কৌশল কি এর পরীক্ষাটি লেখ এবং মুখ্য সূত্রগুলির শিক্ষাগত গুরুত্ব আলোচনা করো।


থনডাইকের প্রচেষ্টা ও ভুল পরীক্ষা:

     থনডাইকের মতে প্রাণী শেখে প্রচেষ্টা ও ভুল এর মাধ্যমে। প্রথম অবস্থায় প্রাণী কোন কিছু বিষয় শিখতে গেলে ভুল করে এবং ধীরে ধীরে সেই ভুলের মাত্রা কমে ও তার প্রকৃত আচরণের পরিবর্তন এর মাধ্যমে শিখন লাভ ঘটে। প্রচেষ্টা ও ভুল পরীক্ষাটি করার জন্য তিনি একটি বিশেষ বক্সের নির্মাণ করেছিলেন যার নাম দিয়েছেন পাজল বক্স। এর নির্মাণ টি বিশেষ প্রযুক্তি দিয়ে গড়া যার ছোট ছোট গলিপথ যুক্ত কয়েকটি দেওয়াল এবং এর একটি দরজা থাকে নির্দিষ্ট গুলি ব্যবহার করলে প্রাণী বক্সের দরজার কাছে পৌঁছাতে পারে এখানে দরজা খোলার জন্য একটি যান্ত্রিক বোতাম থাকে এবং এই বোতামে চাপ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে যায় ও প্রাণী তার সমস্যা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।

     প্রাণীর এই সমস্যামূলক পরিস্থিতির তিনটিউপাদান থাকে এক ক্ষুধার্ত বিড়ালের খাদ্যের চাহিদা 2 খাদ্যবস্তু জাফরানি লক্ষ্য এবং তিন চাহিদা এবং লক্ষ্য এর মধ্যে বাধা আর এই বাধা গুলি হল ওই বক্সের মধ্যে সরু সরু গলিপথ ও দরজাটি। 
     পরীক্ষাটি তে প্রথমে ক্ষুধার্ত বিড়ালটিকে পাজল বক্স এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয় ও বাইরে খাবার রাখা হয় বিড়ালটি খাবার খাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকলে সে ওই সরু গলি পথ গুলো দিয়ে বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করে আর এটাই তার সমস্যাগুলো পরিস্থিতি এবং এই সমস্যাগুলো পরিস্থিতি থেকে সে বাইরে আসার চেষ্টা করলে বারবারই তার ভুল হতে থাকে এবং কিছু সময় পরে সে নির্দিষ্ট দরজার সামনে এসে বোতামে চাপ দিয়ে বাইরে আসতে পারে। পরবর্তী সময় যখন বিড়ালটিকে আবার ওই একই রকম সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে দেওয়া হয় তখন বিড়ালটি অতিরিক্ত সমস্যা সম্মুখীন না হয় খুব সহজেই বোতামে চাপ দিয়ে বাইরে চলে এসে খাবার সংগ্রহ করতে পারে। 
       অর্থাৎ এখানে মনোবিদ থনডাইক পরীক্ষা করেছেন যে কোন প্রাণী নতুন কোন পরিস্থিতিতে উপস্থিত হলে সে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং সেই সমস্যা থেকে যদি একবার বেরিয়ে আসে তাহলে তার আচরণের পরিবর্তন ঘটে ও নতুন শিখন লাভ হয় পরবর্তী কোন সময় ওই একই ধরনের আচরণে পড়লে তখন সে সমস্যামূলক পরিস্থিতি থেকে খুব সহজেই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে এবং এর মাধ্যমে প্রাণীর নতুন লাভ হয়।
    কিন্তু এই প্রচেষ্টা ও ভুল শিখন তত্ত্বের মধ্যে তিনি একটি সূত্রের অবতারণা করেছেন যার পাঁচটি গৌণ সূত্র ও মূল তিনটি মুখ্য সূত্র। তার মতে এই সূত্রগুলোকে যদি যথাযথভাবে পালন উপস্থাপন করা যায় তবে প্রাণীর সমস্যামূলক পরিস্থিতির মাধ্যমে শিখন লাভ করতে সমর্থ হবে।


শিক্ষা ক্ষেত্রে থনডাইকের মূলসূত্র গুলির গুরুত্ব:

Thorndike এর  সমস্ত সূত্রগুলি শিক্ষা ক্ষেত্রে খুব ই গুরুত্বপূর্ণ, এখানে মুখ্য তিনটি সূত্র নিয়ে এবং তার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো -


প্রস্তুতির সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য

থর্ণডাইক তার শিখনের প্রস্তুতির সুত্রে বলেছেন— শিখনের পূর্বে শিক্ষার্থীদের জৈব-মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন। শিক্ষার্থী শেখার ক্ষেত্রে জৈব-মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকলে, শিখন তার কাছে সন্তোষজনক হবে। অন্যথায় শিখন শিক্ষার্থীর মধ্যে সন্তোষ আনতে ব্যর্থ হবে। তাই শিক্ষকের উচিত শিক্ষাদানের পূর্বে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান আহরণের উপযোগী করে প্রস্তুত করা।

ফললাভের সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য

থর্ণডাইকের শিখন সংক্রান্ত ফললাভের সুত্র অনুযায়ী শিখনের ফল শিক্ষার্থীর কাছে আনন্দদায়ক হলে সেই শিখন কার্যকরী হবে এবং শিখনের ফল বেদনাদায়ক হলে সেই শিখন ব্যর্থ হবে। তাই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর শিখনকে কার্যকরী করতে পাঠ্যবিষয়বস্তু ও তার ফল উভয়কে তাদের কাছে আনন্দদায়ক করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ধনাত্বক আচরণের পরিপেক্ষিতে পুরস্কার বা প্রশংসা প্রদান করে তাদের উৎসাহিত করবেন।

অনুশীলনের সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য

থর্ণডাইক তার শিখন সংক্রান্ত অনুশীলনের সূত্রে বলেছেন—উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ সাধনের ফলে প্রাণীর মধ্যে যে শিখন হয় তাকে প্রাণীর মধ্যে ধরে রাখতে শিখনলব্ধ অভিজ্ঞতাটির মাঝে মাঝে চর্চা বা অনুশীলন করা প্রয়োজন। পরবর্তীকালে চর্চা বা অনুশীলনের অভাব হলে শিখন ব্যর্থ হয়ে যায়। এই নীতিকে বিদ্যালয়ে শিখনের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে কার্যকর করতে শিক্ষার্থীদের সদ্য লাভ করা অভিজ্ঞতাকে তাদের দিয়ে চর্চা বা অনুশীলন করাতে হবে। এইভাবে অনুশীলন করলে শিখন অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীর মধ্যে দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে।