বয়স্ক শিক্ষা কি ? বয়স্ক শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করো। Adult education and aim of adult education.

    বয়স্ক শিক্ষা ভারতবর্ষে শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭৭-১৯৭৮ সালে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারের জন্য যে সমস্ত কর্মসূচীগুলো নেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ১৯৭৮ সালের 2 অক্টোবর জাতীয় বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়।
বয়স্ক শিক্ষা কি ?  বয়স্ক শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

    বয়স্ক শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে অন্যতম লক্ষ্য গ্রহণ করা হয় যে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের 10 কোটি বয়স্ক নিরক্ষর ব্যক্তি কে স্বাক্ষর করে তোলা হবে।



বয়স্ক শিক্ষা কি 


     বয়স্ক শিক্ষা বিষয়টি আমরা এই নামের মধ্য দিয়ে যদিও বুঝতে পারি তবুও এর কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখা হয়েছে যেমন -  কোঠারি কমিশনের মতে "বয়স্ক শিক্ষা হল শিক্ষার জাতীয় প্রক্রিয়ায় একটি স্থায়ী বৃত্তি।

    বয়স্ক শিক্ষা হলো মহান দেশের মহান নাগরিক হিসেবে বয়স্কদের কর্তব্যপরায়ণ উদার দৃষ্টি সম্পন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংহতি মূল্যবোধ ও বিজ্ঞান চেতনায় সমৃদ্ধ ব্যক্তিত্বের অধিকারী করে তোলার শিক্ষা।



বয়স্ক শিক্ষার উদ্দেশ্য


     আন্তর্জাতিকভাবে এবং আমাদের দেশীয়ভাবে বয়স্ক শিক্ষার এই যে সকল পরিকল্পনা হয়েছিল এই পরিকল্পনাগুলোর পিছনে ছিল বয়স্ক শিক্ষার যথেষ্ট উদ্দেশ্য। অর্থাৎ কেন বয়স্ক শিক্ষা শুরু করতে হবে বা কেন বয়স্ক শিক্ষার আমাদের দেশে খুব প্রয়োজন ছিল সেই সম্পর্কে কয়েকটি উদ্দেশ্য রাখা হয়েছিল যেমন - 

শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি:   শিক্ষার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা কোন জাতির পরিচয় পাওয়া যায়। সমস্ত দেশে যখন বয়স্ক শিক্ষার অগ্রগতি ছড়িয়ে পড়বে তখন দেশীয় ক্ষেত্রে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে এই উদ্দেশ্যে বয়স্ক শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

কুসংস্কার দূরীকরণ :   যার মধ্যে শিক্ষার আলো নেই সেখানে কুসংস্কার কাজ করে থাকে। এই কারণে সরকারের অন্যতম চেষ্টা ছিল যে শিক্ষার আলোকে বয়স্কদের মনে প্রবেশ করিয়ে সেখান থেকে কুসংস্কারকে দূর করতে হবে।

সুদূরপ্রসারি চিন্তা :   বয়স্ক শিক্ষা শুরু করার পিছনে বিভিন্ন সুদুরপ্রসারী চিন্তা ছিল, তার মধ্যে অন্যতম হলো যদি কোন বয়স্ক ব্যক্তি শিক্ষিত হয় তবে খুব সহজেই সে তার পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম গুলির শিক্ষার ব্যবস্থা করবে এই উদ্দেশ্যে বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

স্বনির্ভর করে তোলা :   নিরক্ষর ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হয়ে ওঠা অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় এই কারণে বয়স্ক শিক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে অন্যতম উদ্দেশ্য গ্রহণ করা হয়েছিল যাতে প্রত্যেকটি বয়স্ক ব্যক্তি শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে।

সামাজিকীকরণ ঘটানো :   সামাজিক প্রাণী হিসেবে আমরা সকল মানুষই সামাজিক বা সমাজকে নিজের মতো করে গড়ে তোলা আমাদের অন্যতম এবং প্রধান কর্তব্য। শিক্ষার মাধ্যমে বয়স্কদের সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক ঘটিয়ে দেওয়া ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য।

সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ :   পরাধীন ভারত বর্ষ এবং স্বাধীন উত্তর ভারত বর্ষ এই সময়ে কিছু প্রতিভা শিক্ষার আঙ্গিনায় আসতে না পেরে তারা সুপ্ত অবস্থায় ছিল এই কারণে বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে সরকারের অন্যতম চেষ্টা ছিল এই প্রতিভা গুলির বিকাশ ঘটানো।

হীনমন্যতা দূর করা :  সমাজের বয়স্ক শ্রেণীর লোকেরা নিজেদেরকে অন্যদের থেকে হেয় করে দেখতো। এই কারণে বয়স্ক শিক্ষাকে একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে সার্বজনীন করে তোলা হয়েছিল। জাতি শিক্ষার মাধ্যমে বয়স্করা নিজেদেরকে ছোট করে না দেখে।



  • সমস্ত বিশ্বের মতো আমাদের ভারতবর্ষে ও বয়স্ক শিক্ষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।আসলে বয়স্কদের শিক্ষা উপযুক্তভাবে দিতে পারলে তা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে।এই কারণে সেই সময়ে এই বয়স্ক শিক্ষার পরিকল্পনা গুলি নেয়া হয়েছিল যদিও তা বাস্তবে পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হতে পারেনি।