ভাষাবিজ্ঞান থেকে বড় প্রশ্ন ও উত্তর । উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা ভাষাবিজ্ঞান সাজেশন

     উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের ভাষা বিজ্ঞান অধ্যায় থেকে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি পরীক্ষা তে আসার জন্য পড়তে হবে এখানে সেই সকল প্রশ্ন গুলি নিয়ে উপযুক্ত উত্তর সহ আলোচনা করা হলো। ভাষাবিজ্ঞান অধ্যায়ের প্রশ্নগুলির উত্তর খুব কম বা অল্প বিস্তর আলোচনা করতে হয়। এখানে দেওয়া উত্তর গুলির থেকে প্রয়োজন অনুসারে উত্তর লিখতে হবে এবং তা গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু।



ভাষাবিজ্ঞান থেকে বড় প্রশ্ন ও উত্তর । উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা ভাষাবিজ্ঞান সাজেশন



ভাষাবিজ্ঞান কি ? ভাষাবিজ্ঞানের প্রচলিত ধারা গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো ।


👉   ভাষাবিজ্ঞান সর্ম্পকে বলা যেতে পারে যে, বিজ্ঞানের যে শাখায় ভাষার বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ বর্ণনা পরীক্ষা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয় সেই বিজ্ঞানকেই ভাষাবিজ্ঞান বলা যেতে পারে। 

    ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনার তিনটি শাখা বা ধারা আছে। এগুলি প্রত্যেকটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে নিচে আলোচনা করা হলো। 


বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান 

    ভাষার মূল উপাদান হল ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ইত্যাদি। বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানে ভাষার উপাদান গুলির একটি নির্দিষ্ট সময়ের গঠন ও রূপকে বিশ্লেষণ ও বর্ণনা করা হয়। মূলত বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান এ একটি যুগের বিভিন্ন ভাষার রূপ গুলিকে বিশ্লেষণ করা হয়। ভাষাবিজ্ঞানের এই ধারাতে ভাষার অতীত ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয় না।

    এই ধারাতে ভাষার ব্যবহারগত দিক, বিভিন্ন গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। যেমন বাংলায় একটি সর্বনাম হলো আমি। এই শব্দটির বিভিন্ন রূপ অর্থাৎ বর্তমানের এই আমি শব্দটি কিভাবে গঠিত হয়েছে তার বর্ণনা করা হলো বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান এর কাজ। কিন্তু এই শব্দটির অতীত কেমন ছিল তা জানার কোন প্রয়োজন নেই / থাকে না। 


ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান 

    ভাষাবিজ্ঞানের এই ধারাটি যেকোনো ভাষার বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে থাকে। অর্থাৎ বলে যেতে পারি কোন ভাষা কিভাবে বিবর্তিত হয়ে বর্তমানের রূপলাভ করেছে তা আলোচনা করাই হলো ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এর কাজ। যদি আমরা পূর্বের উদাহরণ অর্থাৎ আমি শব্দটির ধরে আলোচনা করি তাহলে ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এর কাজ হবে আমি শব্দটি কোন শব্দ থেকে তৈরি হয়েছে ও কীভাবে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে আমি শব্দটি রূপ লাভ করেছে তার আলোচনা করা।

   যেমন এই আমি শব্দটি সংস্কৃত অস্মাভি শব্দ থেকে পরিবর্তিত হয়ে আজকের বাংলায় আমি শব্দে পরিণত হয়েছে। এই ইতিহাস বর্ণনা করা হলো ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এর কাজ। অস্মাভি শব্দটি হলো অস্মদ শব্দের তৃতীয় বিভক্তির বহুবচনের রূপ। এই শব্দটি প্রাকৃত ভাষায় পরিবর্তিত হয়ে হয় অমহাহি। তার থেকে প্রাচীন বাংলায় হলো আমহে। মধ্য বাংলায় রূপ লাভ করল আখখে / আক্ষে, এবং এই আক্ষে থেকে আধুনিক বাংলায় আমি হলো। 


তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান 

    ভাষাবিজ্ঞানের এই ধারাটি কোন বিশেষ দুটি ভাষার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করে থাকে। এই ধারার মাধ্যমে ভাষাবিজ্ঞানের সহজাত বা সহোদর ভাষা গুলি সম্পর্কে খুব সহজে ধারণা লাভ করা যায়। যদি আমরা এই তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান ব্যবহার করি তবে বাংলা ভাষার সহোদর ও সমকালীন ভাষা গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে পারি। অনেক ভাষাবিজ্ঞানী এই তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান কে গ্রহণ করতে চাননি।

    1786 সালে স্যার উইলিয়াম জোন্স সংস্কৃত, গৃক, লাতিন ও ফারসি ইত্যাদি ভাষার মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। এই মিলের সূত্র থেকেই তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের সূত্রপাত। তার মতে এই সকল ভাষাগুলি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং এরা সকলেই একটি মূল ভাষা থেকে উৎপন্ন। বিভিন্ন আলোচনার ও চর্চার মাধ্যমে তিনি এই সকল ভাষার মূল ভাষা টির নাম দিয়েছিলেন ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা। ভাষাবিজ্ঞানের এই শাখাটি ইউরোপ ও আমেরিকায় বহুল প্রচলিত একটি শাখা।




শৈলীবিজ্ঞান কি ? শৈলী ভাষাবিজ্ঞান সর্ম্পকে আলোচনা করো।


👉   কোন লেখক এর একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা অনুভব উপলব্ধি এবং তার বহিঃপ্রকাশ হলো শৈলী। ইংরেজিতে যাকে আমরা স্টাইল বলে জেনে থাকি বাংলা অভিধানে তাই হল শৈলী। শৈলীর মাধ্যমে কোন লেখক এর নিজস্বতা বা স্বতন্ত্রতা ধরা পড়ে। এই বিশেষ প্রকাশভঙ্গি বার শৈলী সম্পর্কে যে বিধিবদ্ধ আলোচনা তাই হল শৈলীবিজ্ঞান


👉   বর্তমানে ভাষাবিজ্ঞান চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো শৈলীবিজ্ঞান। যিনি সাহিত্য রচনা করেন তার সাহিত্যের প্রকাশভঙ্গি নিজস্ব। সাহিত্যিক এর ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার বিভিন্ন উপাদান গুলির নির্দিষ্ট নীতি ও নির্দেশ থাকে। কখনো কখনো লেখক এর ব্যক্তিগত প্রবণতা ব্যক্তিত্বের বৈচিত্র সামাজিক পরিবেশ ইত্যাদি প্রচলিত গতানুগতিক সাহিত্যের নিয়ম মেনে চলে না। 

    সাহিত্যিক নিজের মতো করে শব্দের ব্যবহার করে থাকেন। যার কারণে আমরা এই স্টাইল বা শৈলী থেকে খুব সহজেই রবীন্দ্রনাথ বা মাইকেল মধুসূদন এর লেখা কে চিনে নিতে পারি। আবার সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যের সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের কাব্য ভাবনা ও চিন্তা ভাবনা যে আলাদা তা আমরা তাদের লেখা দেখে বুঝতে পারি।

    বলে যেতে পার শৈলীর ক্ষেত্রে যে বৈচিত্র ও ব্যতিক্রম গুলি ঘটে তার মৌলিক কারণ খোঁজা, বিশেষ প্রকাশ রূপটির মধ্যে ধ্বনি শব্দ ও বাক্য গঠনের কোন বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে আছে তার বিশ্লেষণ করা হলো শৈলীবিজ্ঞান এর আলোচনার বিষয় । 



অভিধান বিজ্ঞান কি ? অভিধান বিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করো ।


 👉    অভিধান সংকলন ই হলো অভিধান বিজ্ঞান। প্রাচীন ভারতে বেদাঙ্গ শাস্ত্রের যে নিরুক্ত ছিলো সেটি হলো ভারতের প্রথম অভিধান এবং যার সূত্রপাত হয়েছিল যাস্কের হাত ধরে। 1538 সালে স্যার টমাস এলিয়াট তার লাতিন ইংরেজি অভিধানে প্রথম ডিকশনারি শব্দটি ব্যবহার করেন। এখান থেকে ধীরে ধীরে শুরু হয় লেক্সিকোগ্রাফি বা অভিধান বিজ্ঞান


👉   অভিধান হলো ভাষা বিজ্ঞানের একটি সংযোগমূলক বিভাগ। প্রাচীনকাল থেকেই এই অভিধনে বিভিন্ন রকম শব্দের অর্থ তার প্রতি শব্দ, সমার্থক শব্দ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।  আর আধুনিককালের অভিধান বিজ্ঞানের এই সকল বিষয় গুলির সঙ্গে আরো নতুন নতুন শব্দের বৈচিত্র কতগুলো যুক্ত করা হয়েছে। এই সকলের উপর নির্ভর করে ভাষাবিজ্ঞানের দিক থেকে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে - 


এক ভাষী ::  অভিধানের এই ধারাতে শব্দের অর্থ বা তার বিভিন্ন বর্ণনা যেকোনো একটি ভাষার উপর এই বোঝানো হয়। অর্থাৎ শব্দটি যে ভাষাতে থাকবে তার অর্থ ও বর্ণনা সেই ভাষাতেই লেখা হবে। যেমন, বাংলা থেকে বাংলা। 

দ্বি ভাষী ::   এই ধরনের অভিধান এর দুটি ভাষাকে ব্যবহার করা হয়। একটি ভাষার শব্দ কে অন্য ভাষায় বিশ্লেষণ ও বর্ণনা করা হয় এই দ্বিভাষিক অভিধান। যেমন বাংলা থেকে ইংরেজি বা ইংরেজি থেকে বাংলা ইত্যাদি।

ঐতিহাসিক অভিধান ::   যেকোনো ভাষার শব্দের উৎপত্তি বিবর্তন এই সকল ইতিহাসগত দিকটি এই ধরনের অভিধান বিজ্ঞানের বর্ণনা করা থাকে। উৎপত্তি সময় শব্দের অর্থ তার উচ্চারণগত পরিবর্তন কিভাবে ঘটল শব্দের বর্তমান রূপ ইত্যাদি এখানে বর্ণনা করা হয়। 


সমাজ ভাষাবিজ্ঞান কি ? সমাজভাষাবিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করো ।


 👉   সামাজিক অবস্থান করে একটি ভাষা সম্প্রদায়ের মধ্যে মানুষের ভাষার যে বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায় তাই হলো সমাজ ভাষা। আর সমাজভাষাবিজ্ঞান হল সেই সমাজের ভাষার বিজ্ঞান।

👉    ভাষাবিজ্ঞানীরা সমাজ ভাষাবিজ্ঞান কে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন - বর্ণনাত্মক সমাজভাষাবিজ্ঞান, পরিবর্ত মান বা সচল সমাজভাষাবিজ্ঞান এবং প্রয়োগমূলক সমাজভাষাবিজ্ঞান। 

  ভাষার বিভিন্ন বৈচিত্র বর্ণনা করে থাকে বর্ণনাত্মক সমাজভাষাবিজ্ঞান। বর্ণনাত্মক ভাষাবিজ্ঞান এর মত অনুযায়ী বক্তা শ্রোতা ও উপলক্ষ এই তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে সমাজ ভাষাবিজ্ঞান এর আসল রূপ। 

   আবার কোন বিশেষ সমাজ ভাষার বিকাশ বা সৃষ্টি বিবর্তন এবং তার বিস্তার বা সংকুচিত দ্বারা আলোচনা করে পরিবর্তমান সমাজভাষাবিজ্ঞান। এই ভাষাবিজ্ঞান এর অন্তর্গত হল মিশ্র ভাষা দ্বিভাষিকতা ইত্যাদি।

   আবার সামাজিক কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে সমাজ ভাষা কে ব্যবহার করা হলো প্রয়োগমূলক সমাজ ভাষাবিজ্ঞান এর কাজ। ভাষাবিজ্ঞানের এই অধ্যায়ে মাতৃভাষা ও দ্বিতীয় ভাষা শেখানোর পদ্ধতি অনুবাদ তার নীতি নির্ধারণ বিভিন্ন বর্ণমালার সৃষ্টি তার পরিবর্তন বিভিন্ন বানান সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।