বাঙালির বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন

     দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের বাঙালির বিজ্ঞান চর্চা অংশ থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতি বার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা তে আসার মতো সেই সকল প্রশ্ন গুলি এখানে উত্তর সহকারে আলোচনা করা হলো। তোমরা প্রয়োজন অনুসারে এখান থেকে লিখে নিতে পারো। Bangalir-Biggan-Chorcha

বাঙালির বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন


বাঙালির বিজ্ঞান সাধনায় ঠাকুরবাড়ির অবদান আলোচনা করো। 


     বিজ্ঞান সাধনায় ঠাকুরবাড়ির ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়। রবীন্দ্রনাথের জন্মের বহু আগে থেকেই বিজ্ঞান বিষয়ে এই ঠাকুরবাড়ির আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। ঠাকুরবাড়ির প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ উৎসাহ ছিল। এমনকি তার দান করা টাকায় কলকাতা মেডিকেল কলেজের সব ব্যবচ্ছেদ ও রসায়ন এর উন্নতি মূলক কাজে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। 

    এছাড়াও বিজ্ঞান বিষয়ে ঠাকুরবাড়ির দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা ও ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মূলত জীবতত্ত্ব, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে অধিক উৎসাহ প্রকাশ করেন, যা ঠাকুরবাড়ির বিজ্ঞান চর্চায় অন্যতম অগ্রগতি এনে দিয়েছিল। 

    রবীন্দ্রনাথের বড় দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ গণিতের প্রতি বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন। তার মেজ ভাই হেমেন্দ্রনাথ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের স্থূল মর্ম নামে একটি বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাত্র অবস্থাতে বিজ্ঞানের বিষয় অধিক চর্চা করেছেন। মূলত চিত্তের সর্বোদয় ঘটাতেই ঠাকুরবাড়ির বিজ্ঞান সাধনায় নানা বিদ্যার আয়োজন করা হয়েছিল।


    আসলে বাল্যকাল থেকে রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান ও ধর্মের দীক্ষায় দীক্ষিত হওয়ার কারণে সাহিত্যের সত্যের সঙ্গে বিজ্ঞানের সত্যের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটাতে সফল হয়েছিলেন। এই কারণে তিনি লিখেছিলেন - ভারতের কোন বৃদ্ধ ঋষির তরুণ মূর্তি তুমি / হে কার্য আচার্য জগদীশ। 

    তিনি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেছিলেন - বিশেষত ফলিত বিজ্ঞান কে ছিটেফোঁটা নয় গোড়া থেকে ধরিয়ে দিয়ে শেখানোর প্রয়োজন। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন বিজ্ঞান ধর্মী রচনা গুলির মধ্যে অন্যতম হলো - অভিব্যক্তি, প্রাণ তত্ত্ব ইত্যাদি। এইসকল গ্রন্থের কারণে বাঙালির বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে ঠাকুরবাড়ির অবদান অনস্বীকার্য।



বাংলার বিজ্ঞান সাধনায় প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের অবদান আলোচনা করো। 


    বাংলার একজন প্রখ্যাত রসায়নবিদ, শিক্ষক ও দার্শনিক ছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। তিনি একদিকে মারকিউরাস নাইট্রেট আর অন্যদিকে বেঙ্গল কেমিক্যাল এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। আবার পারদ ও নাইট্রোজেন এই দুই বিপরীত বস্তুর মিশ্রণ ঘটিয়ে এক বিশেষ যৌগ আবিষ্কার করে সমস্ত বিশ্বে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। 

    স্কটল্যান্ড এর এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কপার ম্যাগনেসিয়াম শ্রেণীর সম্মিলিত সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ দু বছরের গবেষণা কর্মে নিয়োজিত থেকে পিএইচডি এবং ডি এস সি ডিগ্রী লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য অন্যতম ঘটনা হলো এদেশের রসায়নের ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটানোর জন্য 1898 সালে স্থাপিত বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। 

   তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে কয়েকটি হলো - কলকাতা পটারি ওয়ার্কস, কলকাতা সাবান কারখানা, বেঙ্গল এনামেল ওয়ার্কস লিমিটেড, ন্যাশনাল ট্যানারি ওয়ার্কস ইত্যাদি। তিনি 1924 সালে ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার মোট গবেষণাপত্রে সংখ্যা ছিল 145 টি।


    রসায়ন শাস্ত্রের জগতে তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হল - হিস্ট্রি অফ হিন্দু কেমিস্ট্রি বা হিন্দু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস। এই বিশাল আকার গ্রন্থটি দেশবাসীর কাছে  মূল পাঠ্য রূপে বিবেচিত। 1920 সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করেন। 1919 সালে ব্রিটিশ গভর্মেন্ট তাকে নাইট উপাধি দিয়ে সম্মান প্রদান করে। 



বাঙালির বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো। 


    বাঙালির বিজ্ঞান সাধনা সঙ্গে যে সকল নামগুলি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। 19 শতকের শেষভাগে এক জার্মান বিজ্ঞানী কর্তৃক বিদ্যুত-তরঙ্গ উদ্ভাবন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সাধারণ আলোর অদৃশ্য তরঙ্গের সৃষ্টি করেন। এই মহান বিজ্ঞানীর যেসকল আবিষ্কার গুলি উল্লেখ যোগ্য তা হল - 

    প্রাণী জীবনের কিছু সাদৃশ্য যে উদ্ভিদের মধ্যেও বর্তমান তা তিনি প্রথম পরীক্ষা করে আবিষ্কার করেছেন। উদ্ভিদের বৃদ্ধি মাপার যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ তিনি আবিষ্কার করেন। রিজোনাষ্ট রেকর্ডার যাকে উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ মাপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র হিসাবে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর আবিষ্কার করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ফোটো মিটার, স্ফিগ মো গ্রাফ, ফটোসিনথেটিক বাবলার প্রকৃতি যন্ত্র আবিষ্কার করেন।

    আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু 1895 সালে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি ও তাকে প্রেরণ পরীক্ষায় সফল হন। তিনি 5 মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ সৃষ্টি করেছিলেন।

   পৃথিবীর নানা দেশে তিনি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আমন্ত্রিত হয়েছেন ও সেখানে বৈজ্ঞানিক হিসেবে তার মূল্যবান বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। 1900 খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা কংগ্রেসে তার পাঠ করা বক্তব্যটি রেস্পন্সেস ইন্দি লিভিং এন্ড নন লিভিং নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা আছে।


    1917 খ্রিস্টাব্দে 30 শে নভেম্বর বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠিত ছিল জগদীশচন্দ্র বসুর একটি অসামান্য অবদান। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য তিনি জীবনের সকল সঞ্চিত অর্থ দান করেছিলেন। মূলত বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তার ভারতবাসীর কাছে বিজ্ঞান গবেষণার পথ উন্মুক্ত করার প্রচেষ্টা সফল হয়। 1916 সালে নাইটহুড উপাধি, 1920 সালে রয়েল সোসাইটির সদস্য, 1927 সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি ইত্যাদি ছিল তার জীবনের অন্যতম মাইলফলক। 



বাংলা বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সত্যেন্দ্রনাথ বোস এর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো। 


    বাঙালি বিজ্ঞানী মহলে একটি পরিচিত ও প্রশংসিত নাম হল সত্যেন্দ্রনাথ বোস। তিনি তাঁর অসামান্য কিছু সৃষ্টিকর্মের জন্য আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার বিখ্যাত বোস সংখ্যায়ন গবেষণার জন্য তিনি আজও পৃথিবীতে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছেন। তিনি ভারতীয় হওয়ার পাশাপাশি একজন বাঙালি বৈজ্ঞানিক রূপে গাণিতিক পদার্থবিদ্যার গবেষণা করে খ্যাতি লাভ করেন। 

   সত্যেন্দ্রনাথ বোস যুগ্মভাবে আইনস্টাইনের সঙ্গে বোস আইনস্টাইন থিওরি প্রকাশ করেন। সত্যেন্দ্রনাথের একটি অসামান্য অবদান হল - বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন যা পরবর্তীকালে বোস সংখ্যায়ন নামে পরিচিত হয়। 1924 সালে তিনি প্লাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব কে গ্রহণ করে তার কিছু ত্রুটি দূর করেছিলেন। 

    এছাড়াও সত্যেন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য গবেষণা গুলি হল - বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বল, মহাকর্ষ বল, সতেজ বল ইত্যাদি। এছাড়াও তার গ্যাসের অবস্থার বর্ণনা সংক্রান্ত তথ্য সাহা বোস সমীকরণ বিশেষভাবে খ্যাতি লাভ করে।


    সত্যেন্দ্রনাথ বোস বিভিন্ন সময় নানা বিধ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। যার মধ্যে 1958 সালে তাকে লন্ডনের রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত করা হয়। 1944 সালে তাকে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস এর পদার্থ বিদ্যার শাখার সভাপতিত্ব করা হয়। তাঁর রচিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল বিজ্ঞানের সংকট, আইনস্টাইন ইত্যাদি।