গল্পটির মূল ঘটনা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মৃত্যুঞ্জয় একটি অফিসে চাকরি রত। সাধারণত তার অফিস যাবার অবলম্বন বাস বা ট্রাম। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন পায়ে হেঁটে অফিস যাবার পথে অনাহারে মৃত্যু দেখে তার জীবনে ও মানসিকতায় একটি পরিবর্তন সৃষ্টি হয়।
কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের প্রশ্ন উত্তর | কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর pdf

    সাধারণভাবে আমরা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন গল্পগুলিতে মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন লক্ষ্য করতে পারি। ঠিক একই রকম ভাবে কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পটিতে মৃত্যুঞ্জয়ের জীবনে এক মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন ঘটেছে। যে মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের কারণে তার সুস্থ সবল ও সুখী পরিবার জীবন ছেড়ে নিজেকে মন্বন্তরের বুভুক্ষ মানুষদের মাঝখানে নিজেকে দাঁড় করাতে সে দ্বিধাবোধ করেনি।

    এমনকি নিজে না খেয়ে সমস্ত দেশকে হয়তো বা বাঁচানো যেতে পারে এই ধারণা তে সে নিজেই ধীরে ধীরে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয় ও একসময় নিজেই নিজের জীবনটিকে অন্য সকল অনাহারী মানুষের সারিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। 


মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "কে বাঁচায় কে বাঁচে" গল্পের নাম করণের স্বার্থকতা আলোচনা করো 


     সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আর ছোটো গল্পের নামকরণ আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ছোট গল্পের বিষয় তার নাম করণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশিরভাগ গল্প গুলিতে বিশেষ আদর্শ যুক্ত মানুষের প্রতিবাদ শিল্প রূপ লাভ করেছে। 

    কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের কাহিনী অত্যন্ত সাদামাটা এবং এই সাধারণ কাহিনীতে মৃতুঞ্জয়ের জীবন ছবিতে এক ব্যতিক্রমী রূপ ধরা পড়েছে। গল্পটির শুরু হয়েছে  এক অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দিয়ে, আর মৃত্যুঞ্জয় ওই মৃত্যু দেখে অপরাধবোধে পীড়িত হয়। সাথে সাথে আদর্শবাদী মৃত্যুঞ্জয়ের পারিবারিক জীবনে নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া। এমনকি অফিসের সারা মাসের মাইনে টা বন্ধু নিখিলকে দিয়ে রিলিফ ফান্ডে দান করে দেয়।

    ধীরে ধীরে মৃত্যুঞ্জয় ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে শহরের ফুটপাতে দুর্ভিক্ষ পীড়িত দের মাঝখানে। অভুক্ত মানুষ গুলির মধ্য থেকে মৃত্যুঞ্জয় নিজেই প্রতিবাদহীন হয়ে পড়ে এবং আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই লঙ্গরখানার খিচুড়ি খায়, ফুটপাতে পড়ে থাকে।

    অনাহারক্লিষ্ট দের বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয় নিজেই নিজেকে সর্বহারাদের মধ্যে নিয়ে গেছে। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় এইভাবে নিজেকে যেমন বাঁচাতে পারেনি তেমনি অনাহারীদের ও বাঁচাতে পারেনি। তাই অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে গল্পের নায়ক নিজেকে শেষ করে ফেলেছে। সেই কারণে কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পটির নামকরণেে যে সার্থকতা  কোন সন্দেহ নেই।

    অনাহারক্লিষ্ট দের বাঁচাতে গিয়ে গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় নিজেই অনাহারে জীবন সঁপে দিয়েছে, এমনকি তার স্ত্রী অর্থাৎ টুনুর মাকেও সেই পথে যেতে বাধ্য হতে হয়েছে তাই এইসব দিকে বিচার করলে গল্পটির নাম যথাযথভাবেই সার্থক।
-ke


অন্য সকল বাংলা বিষয়ের প্রশ্ন ও উত্তর :