গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

    বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তাকে বাদ দেওয়া যায়, বা এমন কোনো অধ্যায় নেই যেখানে তার সাহিত্য কর্ম প্রবেশ করেনি। ঠিক একই রকম ভাবে কবিগুরু লোকও সংস্কৃতির সাথে মনের মাধুরী মিশিয়ে অনেক গান রচনা করেছিলেন। তার রচিত গান গুলি অনেক শাখায় বিভক্ত, তার বিস্তৃত আলোচনা করা হলো --

বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান।


       বাংলা গানের ধারায় যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য শিল্পী দের কথা মনে আসে তাদের মধ্যে অন্যতম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা সাহিত্যে এমন কোন বিষয় নেই যে সেখানে তার যাতায়াত নেই। নাগরিকতার বৃত্তে এসে লৌকিক সংগীতের বিভিন্ন ধারার নতুন রূপ পরিগ্রহণ ইউরোপীয় ভাবধারার প্রচণ্ড অভিঘাত এবং স্বাদেশিকতার অভ্যুত্থান এই সকল প্রেক্ষাপট গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ এর আবির্ভাব হয়েছিল।

        তিনি আনুমানিক মোট ২২৩২ টি গান রচনা করেছিলেন, এই গানগুলি গীতবিতান নামক গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে, এবং স্বরবিতান গ্রন্থে ১৯৩১ টি স্বরলিপি মুদ্রিত হয়েছে। 

Rabindranath Tagore's


      সুরের দিক থেকে রবীন্দ্র সংগীত কে অন্তত পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় -

ধ্রুপদ ও ধামার ::   শৈশবে বিষ্ণুপুর ঘরানার বিখ্যাত শিল্পী যদু ভট্ট এর কাছে তালিম প্রাপ্ত হিন্দি গানের সুর নিয়ে মোট 77 টি ধ্রুপদ রচনা করেন। এরকম একটি বিখ্যাত ধ্রুপদ হল - প্রথম আদি তব শক্তি

খেয়াল ও ঠুং রি ::   উচ্চাঙ্গসগীত ব্যবহার করে প্রায় 300 গান রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টি করেছিলেন। এক্ষেত্রেও হিন্দি খেয়াল ও ঠুং রি অনুসরণে কিছু গান সৃষ্টি হয়েছিল।



টপ্পা ::   হিন্দি টপ্পা র অনুসরণে 14 টি এবং নিজস্ব শৈলীতে 25 টি টপ্পা গান রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছিলেন যেমন - হৃদয়বাসনা পূর্ণ হল

লোকসংগীত ::    রবীন্দ্রনাথের বহু গানে বাংলার লোকসঙ্গীতের ছায়া পড়েছে।বাউল সুরে বাঁধা অজস্র গানের মধ্যে মেঘের কোলে কোলে বা পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে প্রভৃতি গানের নাম করা যায়।

ভাঙ্গা গান ::    শুধু হিন্দি গান নয় ভারতবর্ষের অনান্য প্রাদেশিক সুর এবং পাশ্চাত্য সঙ্গীত থেকেও অনুপ্রাণিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ বহু গান রচনা করেছেন। এই সকল গানকেই ভাঙ্গা গান নাম দেওয়া হয়েছে। যেমন লালন গীতি আমি কোথায় পাব তারে ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা এসব গান কেউ ভাঙ্গা গানের পর্যায়ে রাখা যায়।

       বিষয় ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে রবীন্দ্রনাথের গানের আরো কিছু শ্রেণীবিভাগ করা যায় যেমন -

আধ্যাত্মিক সংগীত ::   রবীন্দ্রনাথ প্রায় ৬৫০ টি গান লিখেছিলেন যেখানে মরমী আধ্যাত্মিকতার অপূর্ব প্রকাশ ঘটেছে। মূলত তার পূজা পর্যায়ের গানগুলি আধ্যাত্মিক সংগীত হিসাবে বেশি কদর পেয়েছে।

প্রেম সংগীত ::   এই ধরনের গানের সংখ্যাও রবীন্দ্রনাথের প্রচুর প্রায় ৪৫০ টি। প্রেম পর্যায়ের একটি বিখ্যাত গান হল - আমি তোমারই সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ


দেশাত্মবোধক গান ::    মূলত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রচিত এই ধরনের গানের সংখ্যা মোট 62 টি। এই জাতীয় গানে মূলত বাউল কীর্তন রামপ্রসাদী প্রভৃতি খাঁটি বাঙালি সুর রবীন্দ্রনাথ ব্যবহার করেছেন।

ভানুসিংহের পদাবলী ::    রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ণব পদাবলী রচনা করেছিলেন যার নাম দিয়েছিলেন ভানুসিংহ এর পদাবলী। এখানে মোট তিনি ব্রজবুলি ভাষায় বাইশটি পদ রচনা করেছিলেন।

হাস্যরসাত্মক গান ::   বিভিন্ন নৃত্য নাট্য গীতিনাট্য ও নাটকের প্রয়োজনে সামান্য কয়েকটি হাস্যরসাত্মক গান রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন। যে গানগুলি চিরকুমার-সভা বা বিনি পয়সার ভোজ প্রভৃতি নাটকে ব্যবহার করা হয়েছিল।