রাজসিংহ উপন্যাসের জেবুন্নিসা চরিত্র টি সম্পর্কে আলোচনা করো

   চরিত্র সৃষ্টিতে বঙ্কিমচন্দ্র সিদ্ধহস্ত ছিলেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বিশেষত নারী চরিত্র সৃজন বঙ্কিমের দক্ষতা অবিসংবাদিত। রাজসিংহ উপন্যাসের অন্যতম নারী চরিত্র ঔরঙ্গজেব কন্যা শাহজাদী জেবুন্নিসা চরিত্র চিত্রণে বঙ্কিমের এইরকম কুশলতা লক্ষ্য করা যায়। 


রাজসিংহ উপন্যাসের জেবুন্নিসা চরিত্র

   জেবুন্নিসা একটি ঐতিহাসিক চরিত্র। জেবুন্নিসা ছিলেন ওরঙ্গজেবের কন্যা। তিনি ঔরঙ্গজেবের বোন রৌশনারার ক্ষমতা খর্ব করে মোগল সাম্রাজ্যের একমাত্র শক্তিশালী শাসক হয়ে ওঠেন। তিনি এতো কঠিন ছিলেন যে - তার ঘরে প্রবেশ করতে পারতো দুই ধরনের মানুষ, প্রথমজন যারা তার প্রয়োজন ছিলো আর, দ্বিতীয়ত যারা তাকে খবর বিক্রি করতো।

রাজসিংহ উপন্যাসের জেবুন্নিসা চরিত্র টি সম্পর্কে আলোচনা করো
জেবুন্নিসা চরিত্র

   সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিচন্দ্র তার উপর যে খানিকটা মানবিক দৃষ্টি দিয়েছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জেবুন্নেসা নিতম্ববতী, যৌবনা, ভোগবিলাসের সুদক্ষ কারিগর। উপন্যাস অনুসারে তিনি মোগল সাম্রাজ্যের ও রঙমহল কত্রী হয়েও পিসি দের মতো ফুলে ফুলে মধূপান করে বেড়াতে লাগলেন। এই ইন্দ্রিয় পরায়না জেবুন্নেসা কূটনীতি ও রাজনীতিতে অন্যতম ধারক।


    এই কারণে আমরা রাজসিংহ উপন্যাসে দেখি জেবুন্নেসা চঞ্চল কুমারীর পদাঘাতে ঔরঙ্গজেবের ছবি ভাঙার সংবাদ ওরঙ্গজেব এর প্রেমিকা উদিপুরির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এমনকি সম্রাটকে তিনি প্ররোচিত করার চেষ্টাও করেছেন। এই শাহজাদী সামান্য একজন মনসবদার মোবারককে ভালোবাসে, তবে তা প্রথম স্তরের প্রণয় নয় সে প্রনয়ের মধ্যে ছিল ইন্দ্রিয় প্রগলভতা।


    মোবারক বিবাহিত তার স্ত্রী দরিয়া। এই দরিয়ার উপর তাই জেবুন্নিসা ঈর্ষান্বিত, যখন দরিয়া বিবি বলেছিল মোবারক তার গান শুনে তাকে বিবাহ করেছিল তখন জেবুন্নিসা ফুলের তোড়া ছুড়ে দরিয়াকে আহত করে ও তাকে বিতাড়িত করেছিল। এমনকি জেবুন্নিসা মোবারক কে নির্দেশ দিয়েছিল যে চঞ্চল কুমারী উদিপুরির চাইতে সুন্দরী হলেই যেন তাকে হারেমে আনা হয়।


   মবারক এই পাপকার্য করতে রাজি না হলে জেবুন্নিসা ওরঙ্গজেব কে রূপনগরের সমস্ত ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে জানান। সম্রাট মোবারকের সর্পদংশনে হত্যার আদেশ দেন। মোবারক সর্প দংশনে মারা যাবে এই সংবাদ জেবুন্নেছার কাছে পৌঁছালে জেবুন্নিসা শোকাতুরা হয়ে পড়েন। জেবুন্নিসার এই শোক পরায়নতার মধ্য দিয়ে চরিত্রটি ঐতিহাসিক হওয়া সত্বেও মানব জীবনের রস প্রকাশিত হয়েছে।


    খাঁটি ঐতিহাসিক চরিত্র হওয়া সত্বেও জেবুন্নিসা চরিত্রটি চিরন্তন মানবী হয়ে উঠেছে। ইতিহাসের প্রবাহের মধ্যে জেবুন্নিসা থাকতে না পেরে রাজনীতির জটিল আবর্ত থেকে বেরিয়ে এসে প্রেমের জন্য চিরকাতুর মানবী চরিত্রের প্রকাশ ঘটেছে। যে শাহজাদীর কাছে প্রেম শুধু মাত্র ভোগ বিলাসের উপকরণ মাত্র ছিল তা পরিবর্তিত হয়ে ভাগ্যবঞ্চিত রমণীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটির প্রকাশিত করেছে।


    জেবুন্নিসা শাহজাদী হওয়া সত্ত্বেও পাথরে লুটিয়ে পড়ে চাষার মেয়ের মত কেঁদেছে। তারপর রূপনগরের রাজকন্যা চঞ্চল কুমারীর কথা মতো জেবুন্নেসা দরজা খুলে রাখলে রাতে তাকে মোবারক দেখা দেয়। পরপর দুইদিন শাহজাদী মোবারককে দেখার পর অনুভব করলেন যে সে বেঁচে আছে সাথে এও প্রতিজ্ঞা করলেন তিনি শাহজাদী হয়ে রংমহলে আর থাকবেন না।


    জেবুন্নিসা চরিত্রটি রাজ সিংহ উপন্যাসে এখানেই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, যখন তিনি সমস্ত ঐশ্বর্য ত্যাগ করে সামান্য মনসবদার মোবারককে বিয়ে করেছেন। সুতরাং ঐতিহাসিক সত্য নিয়ে রাজসিংহ উপন্যাসে জেবুন্নিসা চরিত্রটির আগমন ঘটলেও মানবিক জীবনবোধে এই চরিত্রটি অসাধারণ হয়ে উঠেছে, আর এর সাথেই সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র জেবুন্নিসা চরিত্র অঙ্কনে দক্ষতা দেখিয়েছেন।


এছাড়া বাংলা সাহিত্যের রূপ রীতি অনন্য প্রশ্নগুলি -\