রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো | Educostudy

    দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো

      ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থার অনুসরণে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় ভারতের রাষ্ট্রপতি মর্যাদাসম্পন্ন বা Dignified প্রধান এ পরিণত হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের 52 নং ধারা অনুযায়ী ভারত রাষ্ট্রের সমস্ত প্রশাসনিক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুধু প্রশাসনিক ক্ষমতা নয় ভারতীয় রাষ্ট্রপতি আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। তার এই ক্ষমতা গুলি হল যথা —


প্রশাসনিক ক্ষমতা :-   ভারতের রাষ্ট্রপতি ভারত রাষ্ট্রের সমস্ত প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ভারতীয় প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিগণকে নিয়োগ ও অপসারিত করে থাকেন। যেমন— প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগন এবং কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরি কমিশন, অর্থ কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের সভাপতি ও সদস্যগণ প্রমুখ। মূলত এই নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা গুলো রাষ্টপতির প্রশাসনিক ক্ষমতার দিকচিহ্ন স্বরূপ।


আইনগত ক্ষমতা :-   ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন কেন্দ্রীয় আইনসভা সংসদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। লোকসভা ও রাজ্যসভার মতো তিনি হলেন সংসদের জৈবিক একক বা অপরিহার্য স্তম্ভ বিশেষ। তিনি সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেন স্থগিত রাখেন এবং সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তিনি সংসদের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন এবং উভয় কক্ষে বাণী বা Message প্রেরণ করতে পারেন। তার সম্মতি ছাড়া সংসদ প্রণীত কোন বিল আইনে পরিণত হতে পারে না।


সামরিক ক্ষমতা :-   ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক তিনি ভারতের জল, স্থল ও বিমান বাহিনীর প্রধান ব্যক্তিবর্গকে নিয়োগ করে থাকেন। তার নামে ভারতে যুদ্ধ ঘোষিত হয় এবং শান্তি ঘোষিত হয়, মূলত তাঁর নির্দেশে ভারতের সেনাবাহিনী পরিচালিত হয়।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা


কূটনৈতিক ক্ষমতা :-   ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতবর্ষের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে প্রধান ব্যক্তিত্ব। তিনি বিদেশে ভারতের কূটনৈতিক দূত ও প্রতিনিধিগণকে নিয়োগ করে থাকেন। তিনি বিদেশি দূত গনকে ভারতে গ্রহণ করেন, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ভারতের স্বার্থ ও দাবি দাবাকে তুলে ধরেন।


অর্থনৈতিক ক্ষমতা :-   ভারতের রাষ্ট্রপতি অর্থসংক্রান্ত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। তার সুপারিশ ছাড়া ভারতে কোন কর(Tax) ধার্য করা যায় না। প্রতিবছর সরকারের আয় ব্যয় সংক্রান্ত বিবরণী বা বাজেটকে সংসদে পেশ করার ব্যবস্থা তাকেই করতে হয়। তার সম্মতি ছাড়া কোন বিল আইনে পরিণত হতে পারেনা। সরকারি আয়-ব্যয়কে নিয়ন্ত্রন করার জন্য তিনি মহা নিয়ন্ত্রক ও গণনা পরীক্ষককে নিয়োগ করে থাকেন। তাই তার অর্থনৈতিক ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা :-   ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বিচারবিভাগীয় ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। তিনি সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি গনকে নিয়োগ করে থাকেন। এছাড়াও তিনি কিছু বিচারবিভাগীয় কাজও করেন, যেমন- তিনি অপরাধীর অপরাধ মার্জনা করতে পারেন, তিনি দুর্নীতি ব্যক্তির দন্ড মুকুব করতে পারেন,এমনকি তিনি মৃত্যুদণ্ডকে বাতিলও করতে পারেন।


জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা :-    ভারতীয় রাষ্টপতির একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা হলো জরুরি অবস্থায় সংক্রান্ত ক্ষমতা। এই ক্ষমতার বলে তিনি অনেকটাই প্রকৃত প্রধান হয়ে উঠতে পারেন। ফলে দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করার জন্য ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তিন ধরনের জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন। যেমন-

(১) জাতীয় জরুরি অবস্থা :-   ভারতীয় সংবিধানের 352 নং ধারা অনুযায়ী প্রত্যক্ষ যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র বিদ্রোহের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সমগ্র ভারতবর্ষের জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

(২) রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন :-    ভারতীয় সংবিধানের 356 নং ধারা অনুযায়ী কোন রাজ্যের প্রশাসনের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙ্গ পড়লে রাষ্ট্রপতি সেই রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচল অবস্থা জনিত জরুরি অবস্থা বা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারেন।

(৩) অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা :-    ভারতীয় সংবিধানের 360 নং ধারা অনুযায়ী দেশের চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সংকটের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সর্বভারতীয় স্তরে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে।


পদমর্যাদা :-    সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী তাই তিনি হলেন ভারতীয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তিনি ভারতীয় সংসদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তার সম্মতি ছাড়া সংসদের কোন বিল আইনে পরিণত হতে পারে না। তিনি সামরিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, বিচারবিভাগীয় প্রভৃতি ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। এমনকি সংবিধান গত ভাবে জরুরি অবস্থা জারি করার চূড়ান্ত ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। তবে সংবিধান গত ভাবে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হলেও বাস্তবে তিনি কিন্তু নিজের স্বাধীন ইচ্ছামত ভাবে এই সব ক্ষমতা ভোগ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পরামর্শ ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই ভারতীয় রাষ্ট্রপতি অনেকটাই যেন “জাঁকজমকপূর্ণ সাক্ষীগোপাল বা সোনার খাঁচায় আবদ্ধ পাখি মাত্র।”


মন্তব্য :-    কিন্তু তবুও আমরা একথা অবশ্যই বলতে পারি যে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি যদি উচ্চাকাঙ্ক্ষা, ব্যক্তিত্ববান ও দৃঢ়চেতা সম্পন্ন হন তাহলে তিনি অনেকটাই স্বাধীন হয়ে উঠতে পারেন। যেমন- নিলাম সঞ্জীব রেড্ডি, জৈল সিং, ডক্টর এপিজে আবদুল কালাম প্রমূখ। তাই আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে ব্যক্তিত্ববান, দৃঢ়চেতা ও কর্মমুখী রাষ্ট্রপতি নিছক সাক্ষীগোপাল না হয়ে প্রকৃত প্রধান হয়ে উঠতে পারেন।


Political Science Question & Answere

TAG ::  
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী, ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী, রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা ও পদমর্যাদা, #ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী, ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো, ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা, ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা h. s, ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা b. a, ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা class xii, ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী এবং পদমর্যাদা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর