জোট-নিরপেক্ষ বলতে কী বোঝো ? এর বৈশিষ্ট্য গুলির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।
দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে জোট-নিরপেক্ষ বলতে কী বোঝো ? এর বৈশিষ্ট্য গুলির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
জোট-নিরপেক্ষ বলতে কী বোঝো ?
সংজ্ঞা :- জোট নিরপেক্ষ বলতে কী বোঝায় এই বিষয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়, তাই এ প্রসঙ্গে বারটান বলেছেন যে ‘এই ধারণার মাধ্যমে সেই সকল দেশর পররাষ্ট্রনীতিকে বোঝায় যারা সোভিয়েত সমাজবাদী জোট, মার্কিন পুঁজিবাদ গণতান্ত্রিক জোট কোন জোটে যোগদান করেনি কিন্তু বিশেষ অবস্থার জন্য কোন রাষ্ট্র এই নীতি গ্রহণ করবে।’
জোট নিরপেক্ষ |
মার্শাল টিটো জোট নিরপেক্ষ নীতিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন এই নীতি হলো দুই পরস্পরবিরোধী গোষ্ঠীকে পৃথিবীর শ্বাসরুদ্ধকর মেরুকরণ প্রবণতা তথা বিভাজনের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা।
পন্ডিত জহরলাল নেহরু বলেন আমরা সকল প্রকার চিন্তার প্রভাব ও সকল প্রকার আদর্শের সঙ্গে সংযোগ ও বন্ধুত্বকে স্বাগত জানায়। কিন্তু আমাদের নিজেদের পথচলার অধিকারটিকে আমরাই সংরক্ষিত রাখছি।
জোট নিরপেক্ষতার বৈশিষ্ট্য
বৈশিষ্ট্য :- 1955 সালের বান্দুং সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শুভ সূচনার যে সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলি রচিত হয়েছে সেগুলি হল যথা —
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান :- জোট নিরপেক্ষতা বলতে যেমন নিঃসঙ্গ বোধ ও নিরপেক্ষতাবাদকেই বোঝায় না তেমন আবার দুটি জোটের বাইরে থাকাকেউ স্বীকার করে না। তাই জোট নিরপেক্ষতা হলো সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদ বিরোধী এক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
বিদেশনীতির রূপকার :- জোট নিরপেক্ষতা হলো বিদেশ নীতির একটি চাবিকাঠি। তাই জোট নিরপেক্ষতার মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তি জোটের বাইরে তাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে এবং প্রগতিশীল বিদেশনীতি রূপায়িত করে।
নীরব দর্শক নয় :- জোট-নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলি বিশ্বরাজনীতিতে নীরব দর্শক হয়ে থাকতে চাই না কারণ তারা প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনাকে বিচারবুদ্ধি, যুক্তি, বিশ্বশান্তি ও নিরপেক্ষতার প্রেক্ষাপটে বিচার করে সর্বদা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
ঐক্যের বাতাবরণ তৈরি :- জোট নিরপেক্ষ তার মধ্যে আছে একটি ঐক্যের বাতাবরণ। তাই জোটনিরপেক্ষকারি রাষ্ট্রগুলি পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে শান্তি ও নিরাপত্তার মাতৃ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
জোট বা গোষ্ঠী তৈরী নয় :- জোট নিরপেক্ষতাই বলা হয়েছে যে নির্জোট ভাবে সবকিছু করতে হবে। তাই কোন দেশ তাদের নিজেদের শক্তি কে বাড়িয়ে তুলতে কোন জোট বা গোষ্ঠী তৈরি করতে পারবে না।
শান্তির উপাসক :- শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের উত্তেজনা এবং বিরোধের মীমাংসা করা এর উদ্দেশ্য। তাই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবেশ করে সহযোগিতার পরিমণ্ডলকে বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতি এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধের মীমাংসা করে।
স্বীকৃত উপাদান :- জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ভৌগোলিক অখন্ডতাকে এবং সার্বভৌমত্বকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি স্বীকৃতি উপাদান হিসেবে স্বীকার করা হয়।
মন্তব্য :- সুতরাং, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে তৃতীয় বিশ্বে অনুসৃত জোট নিরপেক্ষ নীতি হলো বিশ্বশান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের এক পরম কল্যাণকর আদর্শ। এই আদর্শ পৃথিবীর রুদ্ধশ্বাস, সামরিক গোষ্ঠী বা জোটের রাজনীতিকে বর্জন করে বিশ্ব শান্তি ও শান্তি সংহতি চেতনাকে তুলে ধরতে চায়। এই কারণে জোট নিরপেক্ষ নীতি তথা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বিশ্ব রাজনীতিতে এক শান্তিকামী নতুন পথের দিশারী, অভিনব আলোকবর্তি স্বরূপ এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
Political Science Question & Answere
- আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলতে কী বোঝো ? এই অধিকারের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও
- সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মধ্যে আলোচনা করো
- জাতীয় ক্ষমতার উপাদানগুলি আলোচনা করো | আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলি কি
- জোট-নিরপেক্ষ বলতে কী বোঝো ? এর বৈশিষ্ট্য গুলির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।
- গান্ধীর চিন্তা ধারার মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো | রাষ্ট্রচিন্তায় গান্ধীবাদ আলোচনা করো।
- উদারনীতিবাদ বলতে কী বোঝো ? উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
- মার্কসবাদের মূল সূত্র গুলি আলোচনা করো।
- ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও
- রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।
- রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।
- ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো।
- ভারতের পার্লামেন্টের | সংসদের | আইনসভার গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।
- লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক আলোচনা করো।
- ভারতীয় লোকসভার স্পিকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো।
- বিশ্বায়নের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং সুফল ও কুফল আলোচনা করো।
- ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।
- ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন