জাতীয় ক্ষমতার উপাদানগুলি আলোচনা করো | আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলি কি

দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে জাতীয় ক্ষমতার উপাদানগুলি আলোচনা করো অথবা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলি কি, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


 জাতীয় ক্ষমতার উপাদানগুলি আলোচনা করো।
   অথবা,
 আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলি কি ?

ভূমিকা :- বলাই বাহুল্য যে কোন রাষ্ট্র তার জাতীয় শক্তির ওপর নির্ভর করেই তার বিদেশ নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে থাকে। কোন রাষ্ট্রের জাতীয় শক্তি কতগুলি উপাদানের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে, সেগুলি হল যথা -

জাতীয় ক্ষমতার উপাদান
জাতীয় ক্ষমতার উপাদান


ভৌগলিক উপাদান :- জাতীয় শক্তির অন্যতম প্রধান উপাদান হল ভৌগলিক উপাদান। তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূগোলের ভূমিকা বহু পূর্বেই স্বীকৃতি লাভ করেছে। যার ফলে কোন দেশের পররাষ্ট্র নীতি সেই দেশের ভূগোলের দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং বলা যায় যে দেশের ভৌগলিক উপাদান যত বেশি সমৃদ্ধ সেই দেশ তত উন্নতশীল।


প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলবায়ুগত উপাদান :- কোন দেশের জাতীয় শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেই দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আবহাওয়াগত উপাদানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই জলবায়ু মানুষের কর্ম ক্ষমতা নির্ধারণ করে জাতীয় শক্তিকে প্রভাবিত করে থাকে। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ তীব্র উষ্ণতা অথবা প্রবল শীতলতা জাতীয় শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া জাতীয় শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য।


জনসংখ্যা :-  জাতীয় শক্তির অন্যতম আরেকটি উপাদান হলো জনসংখ্যা। তাই বলা যায় যে দেশের জনসংখ্যা যত বেশি শিক্ষিত, অভিজ্ঞ এবং সামরিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করবে সেই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তত উন্নত হবে।


প্রাকৃতিক সম্পদ :- কোন জাতির শক্তি ও সামর্থ্য সেই জাতির প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে খনিজ সম্পদ, পাহাড়, বনজসম্পদ, বন্যপ্রাণী ও মৃত্তিকার উর্বরতা প্রভৃতিকে  বোঝায়। তাই যে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ যত বেশি আছে সেই দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে তত উন্নত।


অর্থনৈতিক বিকাশ :-  কোন জাতির জাতীয় শক্তির অন্যতম প্রধান উপাদান হলো তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। (অধ্যাপক জোসেফ ফ্রাঙ্কেল অর্থনীতিকে যুদ্ধ ও শান্তি উভয় ক্ষেত্রেই জাতীয় শক্তির পক্ষে একান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।) তাই আধুনিক বিশ্বে শিল্পায়ন কোন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাপকাঠি রূপে কাজ করে। তাই শিল্পসমৃদ্ধ অর্থনৈতিক উপাদান জাতীয় জীবনের প্রতিটি অংশের সাথে অতপ্রত ভাবে জড়িত।


সাংগঠনিক কাঠামো :-  জাতীয় শক্তির অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সাংগঠনিক কাঠামো। সাংগঠনিক কাঠামোর দিক থেকে সরকার ও সামরিক বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সুদৃঢ় কার্যকলাপ ও দৃঢ়তার ওপরে দেশের জাতীয় শক্তির সমৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভরশীল।


সমাজ মনস্তাত্ত্বিক উপাদান :-  জাতীয় শক্তির একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সমাজ মনস্তাত্ত্বিক উপাদান। তাই যে দেশের জনগণ সামাজিক দিক থেকে যত বেশি ঐক্যবদ্ধ সেই দেশের জাতীয় শক্তি ততবেশি সুদৃঢ়। এই কারণে একটি ঐক্যবদ্ধ জনসমষ্টি সম্পন্ন দেশ একটি ঐক্যবিহীন জনগণ সম্পন্ন দেশের থেকে অধিকতর শক্তিশালী।


মন্তব্য :-   সুতরাং আমরা বলতে পারি যে কোন দেশের জাতীয় শক্তি তার ভৌগলিক উপাদান, জলবায়ু, জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থনীতি, সরকার, সামরিক বাহিনী, সমাজ মনস্তাত্ত্বিক ইত্যাদি উপাদানের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। যদিও এই উপাদান গুলির কোন একটি আবার কোন দেশের জাতীয় শক্তি বৃদ্ধি করতে সর্বাংশেই সক্ষম নয়। তবুও আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে এই উপাদান গুলির সমন্বয়ে কোন দেশের জাতীয় শক্তি বলিষ্ঠভাবে গড়ে উঠতে পারে। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।


Political Science Question & Answere