মার্কসবাদের মূল সূত্র গুলি আলোচনা করো।

    দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে  মার্কসবাদের মূল সূত্র গুলি আলোচনা করো, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


মার্কসবাদের মূল সূত্র গুলি আলোচনা করো

    আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মার্কসবাদ এক নব দিগন্ত উন্মোচিত করেছে এবং রাষ্ট্রচিন্তার জগতকে করেছে সম্প্রসারিত ও সম্প্রচারিত। এই মতবাদ হল রাষ্ট্র চিন্তার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত মতবাদ। এই কারণে মার্কসবাদ কোন মুনি ঋষির মুখনিঃসৃত বাণী নয়। তাই লেনিন এর মতে মার্কস এর দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষামালার নাম হল মার্কসবাদ


   মার্কসবাদ মূলত কতগুলি সূত্রের ওপর দাঁড়িয়ে আছে যাদের সন্ধান পাওয়া যায় - কাল মার্কসএঙ্গেলস এর লিখিত ‘কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো’ গ্রন্থে এবং মার্কস লিখিত ‘দাস ক্যাপিটাল’ গ্রন্থ থেকে, সেগুলি হল যথা —

মার্কসবাদের মূল সূত্র গুলি আলোচনা করো
মার্কসবাদ


দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ :-   মার্কসবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হল দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ। যে মতবাদ অনুযায়ী বস্তুর অন্তর্নিহিত পরস্পর বিরোধী শক্তিদুটির দ্বন্দ্বের কারণে বস্তু ও বস্তুজগতের পরিবর্তন ঘটে তাকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বলে। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ অনুযায়ী বস্তুজগতের প্রতিটি বস্তুর মধ্যে দুটি পরস্পরবিরোধী প্রবণতা বা শক্তি থাকে যথা - (১) বাদ (Thesis) ,(২) প্রতিবাদ (Anti Thesis)। বস্তুর অন্তর্নিহিত এই বাদ ও প্রতিবাদের চূড়ান্ত দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষ বাধলেই বস্তুটি তখন মহাসমন্বয় ধর্মী সমবাদে (Synthesis) তথা নতুন বস্তুতে পরিণত হয়।


ঐতিহাসিক বস্তুবাদ :-   মার্কসবাদের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হল ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। ঐতিহাসিক বস্তুবাদ অনুযায়ী সমাজের ধনী-দরিদ্র তথা শোষক ও শোষিত এই দুই পরস্পরবিরোধী শ্রেণীর চুড়ান্ত বিরোধের পথ ধরে সমাজের পরিবর্তন ঘটে। তাই ইতিহাসে দেখা গেছে যে দাস যুগে দাস ও দাস মালিকদের সংগ্রাম, সামন্তযুগে সামন্ত প্রজা ও সামন্তপ্রভুদের সংগ্রাম এবং আধুনিক পুঁজিবাদী যুগে সর্বহারা ও পুঁজিপতিদের সংগ্রামের পথ ধরে যথাক্রমে দাস যুগ, সামন্তযুগ ও পুঁজিবাদী যুগের পরিবর্তন ঘটেছে।


ভিত্তি ও উপরিকাঠামোগত বিষয় :- মার্কসবাদ অনুযায়ী সমগ্র সমাজ যেহেতু অর্থনীতি তথা উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে সেহেতু অর্থনীতি হলো সমাজের ভিত্তি (Base) অনুরূপভাবে ভিত্তি বা ভিতের ওপর নির্ভর করে যা কিছু দাঁড়িয়ে থাকে তাদের বলা হয় উপরিকাঠামো বা Super Stracture। এদিক থেকে অর্থনীতি নামক সমাজের ভিত্তিটির ওপর নির্ভর করে যে সমস্ত কাঠামো দাঁড়িয়ে থাকে তথা ধর্ম, রাজনীতি, শিল্প ও সাহিত্য, শিক্ষা - সংস্কৃতি, দর্শন ইত্যাদি এরাই হল উপরিকাঠামো।


উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব :- মার্কসীয় অর্থনৈতিক চিন্তার একটি অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ দিকচিহ্ন হল উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব। উদ্বৃত্ত মূল্য হল কোন দ্রব্য উৎপন্ন হবার পর বাজারে বিক্রয়লব্ধ অতিরিক্ত অর্থ, অর্থাৎ কোন দ্রব্য উৎপাদনের জন্য তার উপাদান গুলির (জমি, শ্রম, মূলধন, ব্যবস্থাপনা) জন্য ব্যয়িত অর্থই হলো দ্রব্যটির মূল্য। পুঁজিবাদী সমাজে পুঁজিপতি শ্রেণী তাদের শ্রম বিক্রয় করতে বাধ্য হয় কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য মূল্য পুঁজিপতি শ্রেণীর দেয় না।


Political Science Question & Answere