রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।

    দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো

   ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল হল রাজ্যের প্রধান। সংবিধান গত ভাবে তিনি রাজ্যের আনুষ্ঠানিক প্রধানের সকল ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। ভারতীয় সংবিধানের 154 নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত থাকে। এই ক্ষমতা তিনি প্রত্যক্ষভাবে অথবা তার অধীন কর্মচারীদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে বহন করতে পারেন। তিনি রাজ্য সরকারের কার্যকলাপ সূক্ষ্মভাবে সমাধান করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।


রাজ্যপালের ক্ষমতা

        রাজ্যপালের হাতে যে সমস্ত ক্ষমতা গুলি আছে সেগুলি হল যথা —

প্রশাসনিক ক্ষমতা :-   রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কার্যকলাপ রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত থাকে। প্রশাসনিক ক্ষমতার দিক থেকে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্য মন্ত্রী সভার সদস্যদের নিয়োগ করে থাকেন।

রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো
রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা


   তাছাড়া তিনি রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল, রাজ্য সরকারের চাকরি কমিশনের সভাপতি ও সদস্যগণ এবং রাজ্যের হাইকোর্ট ছাড়া বাকি সকল আদালতের বিচারপতি গণকে নিয়োগ করে থাকেন। এমনকি হাইকোর্টের বিচারপতি গণকে নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।


আইনগত ক্ষমতা :-   রাজ্যপাল হলেন রাজ্য আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তিনি রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতে, স্থগিত রাখতে ও সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারেন। এমনকি তিনি রাজ্য আইনসভার নিম্ন কক্ষ বিধানসভাকে ভেঙে দিতে পারেন। তার সম্মতি ছাড়া রাজ্য আইনসভা প্রণীত কোন বিল আইনে পরিণত হতে পারে না। তিনি প্রয়োজনে জরুরি আইন বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন তবে এই ঘোষণাকে বিধানসভার অধিবেশন বসার 6 সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই বিধানসভার অনুমোদন লাভ করতে হয়।


অর্থনৈতিক ক্ষমতা :-   রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। যেমন-(i) তার সুপারিশ ছাড়া কোন অর্থবিল পেশ করা যায় না,(ii) তিনি রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যের বাজেট পেশ করার ব্যবস্থা করেন,(iii) বিধানসভায় প্রণীত অর্থবিল ছাড়া অন্য যে কোন বিল তিনি বিধানসভায় ফেরত পাঠাতে পারেন। কিন্তু অর্থবিলে তাকে অবশ্যই সম্মতি জানাতে হয়। তার সম্মতির ভিত্তিতে অর্থ বিলটি আইনে পরিণত হয়। তাই রাজ্যপালের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।


বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা :-   রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে রাজ্যপাল বিচারসংক্রান্ত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। তিনি রাজ্যের হাইকোর্ট ছাড়া অন্যান্য আদালতের বিচারপতি গনকে নিয়োগ করে থাকেন। এমনকি তিনি বিচারসংক্রান্ত ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। যেমন-(i) তিনি অপরাধীর অপরাধ মার্জনা করতে পারেন,(ii) দণ্ডিত অপরাধের দণ্ড মওকুফ করতে পারেন, (iii) গুরু দণ্ড প্রাপ্ত অপরাধীর দণ্ড বা শাস্তি লঘু করতে পারেন,(iv) এমনকি তিনি মৃত্যুদণ্ড রদ বা বাতিল করতে না পারলেও এই দন্ডকে তিনি কিন্তু স্থগিত রাখতে পারেন। এভাবে তিনি বিচারসংক্রান্ত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে  থাকেন।


অন্যান্য ক্ষমতা :-   রাজ্যপাল আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন, রাজ্য জরুরি অবস্থা বা রাষ্ট্রপতি শাসন (356 নং ধারা) জারি করা হবে কি না সে ব্যাপারে তিনি রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ঘোষিত জরুরি অবস্থা চলাকালীন তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভার পরামর্শ ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকারী। এছাড়াও তিনি রাজ্য আইনসভা প্রণীত বিলে সম্মতি না দিয়ে বিলটিকে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য তার কাছে পাঠাতে পারেন।


Political Science Question & Answere