গান্ধীর চিন্তা ধারার মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো | রাষ্ট্রচিন্তায় গান্ধীবাদ আলোচনা করো।

    দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে  গান্ধীর চিন্তা ধারার মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো OR রাষ্ট্রচিন্তায় গান্ধীবাদ আলোচনা করো।, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


গান্ধীর চিন্তা ধারার মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
অথবা, রাষ্ট্রচিন্তায় গান্ধীবাদ আলোচনা করো।


    রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দীপশিখা হলো গান্ধীবাদ। মহাত্মা গান্ধীর সত্য, ন্যায়, অহিংসা, ভালোবাসা, সেবা, ধর্মীয় সততা, নৈতিক পবিত্রতা ও মানসিক সহায়তায় ভিত্তিতে রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করতে চেয়েছিলেন। যার ফলে রাজনৈতিক দর্শন তথা গান্ধীবাদ অনুপম বিশেষত্ব লাভ করেছে।


গান্ধীর চিন্তা ধারার মূল বৈশিষ্ট্য

         গান্ধীজীর রাজনৈতিক দর্শনের মূলবৈশিষ্ট্য গুলি হল যথা —


সকল মানুষের ক্ষমতা :-   গান্ধীজী মানবজাতির সমতার চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন তাই গান্ধীজী এই ধর্মীয় সত্যকে তার রাজনৈতিক চিন্তা ধারায় আমদানি করেছেন তিনি রাজনীতিতে ধনী-নির্ধন, অভিজাত - আমাজন, শ্বেতকায় - কৃষ্ণকায়, বুর্জোয়া ও সর্বহারার মধ্যে কোন পার্থক্য নির্দেশ করেননি। তার মতে সবাই সত্যেরই স্ফুলিঙ্গ। তাই তিনি শুধু পাপকে ঘৃণা করবেন, পাপীকে নয়।


অহিংসাকে গ্রহণ :-   গান্ধীজী ছিলেন অহিংসার পূজারী। তাই তার মতে অহিংসা হলো সবল ও সাহসীর অস্ত্র, ভিরু ও দুর্বলের নয়। কারণ অহিংসা নৈতিক ও আত্মশক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সত্য, প্রেম-ভালোবাসা, সংযম ও আত্ম বলিদান এর মতো মানবিক গুণাবলী অহিংস ধারণার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।


সাত্যানুধাবন :-   গান্ধীজী মনে করেন যে জীবনের প্রধান লক্ষ্যই হলো সত্যকে অনুধাবন করা। তাই সত্যকে অনুধাবন করার পথে হিংসা, অবিচার, অন্যায়, মিথ্যা প্রভৃতি হলো প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। তাই জীবন থেকে এদেরকে দূর করে সর্বদা সদাচার ও সৎকর্ম করা একান্ত প্রয়োজন।


সর্বোদয় :-    সর্ব এবং উদয় এই দুটি শব্দ নিয়ে সর্বোদয় গঠিত। সর্বোদয় এর আক্ষরিক অর্থ হলো সকলের কল্যাণ। সর্বোদয় এর মুখ্য উদ্দেশ্য অহিংসা এবং সৎ উপায়ে সাহায্যের এক উন্নত নৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলা যেখানে সর্বব্যাপী ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ বিরাজ করে।


অছি সম্পর্কিত তত্ত্ব :-   গান্ধীজীর অছি সম্পর্কিত তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো- সমাজের ধনী ব্যক্তিরা তাদের ন্যূনতম চাহিদা মিটিয়ে সম্পদের বাকি অংশটুকু সর্বসাধারণের জন্য দান করবে। তাই অছি ব্যবস্থা ব্যক্তির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ আয় স্থির করে দেয় এবং পুঁজিবাদী সমাজে শোষণ ও বৈষম্য দূর করে সমাজে এক নৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে।


গ্রামীণ পুনর্গঠন এর ধারণা :-   কৃষিপ্রধান ভারতের উন্নয়নের জন্য গান্ধীজী গ্রাম গুলির উন্নতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাই গ্রামীণ ভারতের পূনর্গঠনের জন্য গান্ধীজী সমব্যয় প্রথার প্রচলন, জমিদারি প্রথার সংস্কার, গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব দেন |


রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা :-   রাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে গান্ধীজী “রাষ্ট্রের শক্তি বৃদ্ধি ঘটানাকে সবচেয়ে ভয়ের চোখে দেখেন।” কারণ রাষ্ট্রের শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে হিংসা, বলপ্রয়োগ ও রক্তাক্ত বিপ্লব। তাই তিনি দুঃখ করে বলেন যে মানুষের দুর্বলতার জন্য রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়। তাই গান্ধীজীর মতে রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্র হলো রাম রাজ্য

গান্ধীর চিন্তা ধারার মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো
রাষ্ট্রচিন্তায় গান্ধীবাদ


মন্তব্য :-   সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে গান্ধীজী ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে কোন ভেদাভেদ টানেননি, বরং তিনি উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্কের কথা প্রচার করেছেন। তাই সৎ ও যথার্থ মানব ধর্মই হল রাজনীতির পরিচালিকা শক্তি এবং এই ধর্ম ও রাজনীতির সমস্ত কলঙ্ক কালিমা দূর করে সুস্থ রাজনৈতিক সমাজ সূচিত করে।


Political Science Question & Answere