ভারতের পার্লামেন্টের | সংসদের | আইনসভার গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।

দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে ভারতের পার্লামেন্টের | সংসদের | আইনসভার গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


ভারতের পার্লামেন্টের/ সংসদের/ আইনসভার গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো

     ইংল্যান্ডের মতো ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় আইনসভাকে পার্লামেন্ট বলা হয়। ভারতীয় পার্লামেন্টের দুটি কক্ষ রয়েছে- উচ্চকক্ষের নাম হল রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষের নাম হল লোকসভা। আর সেইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতীয় পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃত অর্থে ভারতীয় পার্লামেন্ট হল ভারতীয় গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক।


ভারতের পার্লামেন্টের/ সংসদের/ আইনসভার গঠন

    ভারতীয় পার্লামেন্টের গঠন হলো দুই প্রকারের, যথা —

রাজ্যসভার গঠন :-  রাজ্যসভা হল ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ। সংবিধানে বলা হয়েছে যে সর্বাধিক 250 জন সদস্য নিয়ে রাজ্যসভা গঠিত হবে। এর মধ্যে 12 জন সদস্য সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজসেবা, চারুকলা প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শী ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হবে। আর অবশিষ্ট 238 জন সদস্য বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গুলি থেকে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হবে। বর্তমানে রাজ্যসভার মোট সদস্য সংখ্যা 245 জন। পদাধিকারী বলে উপরাষ্ট্রপতি রাজ্য সভায় সভাপতিত্ব করেন। সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ হল 6 বছর। প্রতি 2 বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্যদের অবসর গ্রহণ করতে হয়।


লোকসভার গঠন:-   ভারতীয পার্লাগেন্টের নিম্নকক্ষের নাম হলো লোকসভা। সংবিধানে বলা হয়েছে যে সর্বাধিক ৫৫২ জন সদস্য নিয়ে লোকসভ গঠিত হবে। বর্তমানে লোকসভার সদস্য সংখ্যা ৫৪৫ জন। এর মধ্য 2 জন ইঙ্গ ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হয়। অবশিষ্টরা অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ। অঙ্গরাজ্য সমূহের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংখ্যা 530 জন এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমূহের প্রতিনিধির সংখ্যা 13 জন।


      লোকসভার সদস্যরা লোকসভার প্রথম অধিবেশনে নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে অধ্যক্ষ বা স্পিকার পদে নির্বাচিত করেন। এই স্পিকার লোকসভা পরিচালনা করেন। এছাড়াও একজন উপাধ্যক্ষ বা সহকারী স্পিকার থাকেন। তিনি স্পিকারের অবর্তমানে যাবতীয় কার্যসম্পাদন করেন। লোকসভার সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ হল 5 বছর জরুরি অবস্থার সময় প্রয়োজন মনে করলে লোকসভার কার্যকালের মেয়াদ 1 বছর বৃদ্ধি করা যায়। তবে এইসব মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই রাষ্ট্রপতি লোকসভায় ভেঙে দিতে পারেন।


ভারতের পার্লামেন্টের | সংসদের | আইনসভার কার্যাবলী

    ভারতীয় পার্লামেন্টের বা সংসদের যে সমস্ত কার্যাবলী গুলি আছে সেগুলি হল, যথা —

আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা :-   আইন প্রণয়ন করা হলো পার্লামেন্টের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সংবিধানের আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয় গুলি 3 টি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যেমন- (i)কেন্দ্রীয় তালিকা,(ii) রাজ্য তালিকা,(iii) যুগ্ম তালিকা। কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয়ে পার্লামেন্ট এককভাবে আইন প্রণয়ন করার অধিকারী। রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে সাধারণ অবস্থায় আইন প্রণয়ন করার অধিকারী রাজ্য আইনসভা। আর যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ে পার্লামেন্ট ও রাজ্য আইনসভা উভয় পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারে। এছাড়াও জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকলে কোন রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা জনিত জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে পার্লামেন্ট রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।


নির্বাচন ও পদচ্যুত করার ক্ষমতা :-   রাষ্ট্রপতি ও উপ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের সদস্যরা অংশগ্রহণ করে থাকে। এমনকি রাষ্ট্রপতি উপরাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করার ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগন, নির্বাচন কমিশনার, মহা হিসাব পরীক্ষক প্রমূখকে পদচ্যুত করার জন্য পার্লামেন্টে প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারে।


বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা :-   পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ আইনসভার অবমাননা কিংবা অধিকার ভঙ্গের অভিযোগে পার্লামেন্টের সদস্য এবং সদস্য নন এমন যে কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দানের ব্যবস্থা করতে পারে। এছাড়াও পার্লামেন্ট যে কোন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের হাইকোর্টের ক্ষমতা ও পরিধি সম্প্রসারণ করতে পারে (230 এর 1 নং ধরায়)।


জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা :-   ভারতের রাষ্ট্রপতি 3 ধরনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে। যেমন- (i) জাতীয় জরুরি অবস্থা (352 নং ধারা),(ii) রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা জনিত জরুরি অবস্থা (356 নং ধারা),(iii) আর্থিক জরুরি অবস্থা(360 নং ধারা)। প্রতিটি জরুরি অবস্থা ঘোষণাকে লোকসভা ও রাজ্যসভা কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয় অন্যথায় বাতিল হয়ে যায়।


রাজ্য গঠন ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত ক্ষমতা :-   পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নতুন রাজ্য গঠন করতে পারে। কোন অঙ্গ রাজ্যের কোন অংশকে বিচ্ছিন্ন করতে কিংবা দুই বা ততোধিক রাজ্যকে একত্রিত করতে অথবা কোন একটি রাজ্যের অংশকে অন্য রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে।

ভারতের পার্লামেন্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো
আইনসভার গঠন ও কার্যাবলী


অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা :-   অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে লোকসভার একক প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেমন -

(১) যেকোনো অর্থবিল লোকসভাতেই উপস্থাপিত হতে পারে।

(2) কোন বিল অর্থবিল কিনা তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন লোকসভার অধ্যক্ষ।

(৩) লোকসভার অনুমোদন ছাড়া সরকার কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারেনা।

(৪) মন্ত্রীদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি নির্ধারণের দায়িত্ব পার্লামেন্টের।


সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা :-   সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ভারতীয় পার্লামেন্ট এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের জন্য অঙ্গরাজ্য গুলি আইনসভা সমূহের সম্মতি প্রয়োজন। এই বিষয়গুলি হলো- রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিষয় এবং সংবিধান সংক্রান্ত সংশোধন পদ্ধতি পরিবর্তন প্রভৃতি।


মন্তব্য :-   সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রকৃত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লোকসভার হাতে থাকে। কারণ এই সভার প্রতিনিধিরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত তায় ভারতের লোকসভা ভারতীয় গণতন্ত্রে জনগণের আশা আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক।


Political Science Question & Answere