ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও | ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয় ও সমিতির নয় আলোচনা করো।

    দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও | ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয় ও সমিতির নয় আলোচনা করো। এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও।
অথবা,
 ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয় ও সমিতির নয় আলোচনা করো।


     সরকারের কার্যাবলীকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।  যথা- (১)আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কার্য,(২)শাসন সংক্রান্ত কার্য,(৩)বিচারসংক্রান্ত কার্য। এই তিন প্রকার কার্যাবলি সম্পাদন এর দায়িত্ব যথাক্রমে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। এই তিনটি বিভাগের প্রত্যেকেই নিজ নিজ কার্য সম্পাদন করবে এবং অন্য বিভাগের কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তাই সরকারের তিনটি ভগের হাতে তিনটি পৃথক ক্ষমতা নষ্ট করার নীতি হলো ক্ষমতার পৃথকীকরণ বা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি


ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে যুক্তি 

     ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে যে সমস্ত যুক্তিগুলি রয়েছে সেগুলি হল যথা —

নীতিটির বাস্তব প্রয়োগ :-   ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ ঘটেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। 1789 সালে ফ্রান্সের গণপরিষদ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন একটি অপরিহার্য বলে ঘোষণা করে কিন্তু বর্তমানে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো প্রভৃতি রাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়।


বিভাগীয় স্বাধীনতার সংরক্ষন :-   ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা ভাবে কাজ-কর্ম পরিচালনায় একে অপরকে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যার ফলে বিভাগীয় স্বাধীনতা সুদৃঢ় হয়।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি


কর্মকুশলতা বৃদ্ধি :-    ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবায়িত হলে সরকারের তিনটি বিভাগ নিজ নিজ ঐতিহ্য বজায় রেখে স্বাধীনভাবে বিভিন্ন কাজ করে চলতে পারে। যার ফলে তাদের কর্মকুশলতা বৃদ্ধি পায়।


স্বৈরাচারীতা রোধ :-   ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি রূপায়িত হলে সরকারের তিনটি বিভাগ আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ প্রাই সমমর্যাদার অধিকারী হাওয়াই কোন একটি বিভাগ অপর একটি বিভাগের প্রতি স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণ করতে পারে না।


দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি :-    ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগের ফলে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। যার ফলে তাদের ব্যস্ততম কার্যকর্মের দায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।


ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিপক্ষে যুক্তি 

      ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিপক্ষে যেসমস্ত যুক্তিগুলি আছে সেগুলি হল যথা—

বাস্তব প্রয়োগ অসম্ভব :-   সমালোচকদের মতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ সম্ভব নয়। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা আলোচনা করলে দেখা যায় যে সরকারের তিনটি বিভাগ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সরকার পরিচালনা করে থাকে। তাই ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি অনুসৃত হলে প্রত্যেকটি বিভাগ নিজস্ব কাজের ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।


ব্যক্তি স্বাধীনতার রক্ষাকবজ নয় :- স্যাবাইন, গিলক্রিস্ট প্রমূখ সমালোচকদের মতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কখনোই ব্যক্তি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হতে পারে না। কারণ ব্যক্তিস্বাধীনতার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হলো স্বাধীনতার অনুকূল পরিবেশ এবং স্বাধীনতাগামী সদাজাগ্রত জনগণ। তাই কোনো সরকারের পক্ষে সচেতন জনমতকে উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠা সম্ভব নয়।


জৈব মতবাদ :- জৈব মতবাদের সমর্থকরা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তীব্র সমালোচনা করে সরকারকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কারণ জীব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলি যেমন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করতে পারে না তেমনি সরকারি বিভাগ গুলি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাফল্যের সাথে কাজ করতে পারে না।


জনকল্যাণ ব্যাহত হবে :- ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে প্রযুক্ত হলে তিনটি বিভাগ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে বিভাগীয় ক্ষমতা সংরক্ষণের ব্যাপারে অধিক মনোযোগী হবে এর ফলে সংকীর্ণ বিভাগীয় শর্ত এবং সাধারণ শর্ত এবং জনকল্যাণ ব্যাহত হবে।


মন্তব্য :-   সুতরাং কিছু সহজাত ত্রুটি ও দুর্বলতা সত্ত্বেও ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরন নীতিটির গুরুত্বকে আমাদের স্বীকার করতেই হয়। কারণ সচেতনভাবে এই নীতিটি সরকারি কাজকর্মে সাফল্য আনতে পারে, জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও সংহতিকে  সুরক্ষিত করতে পারে। তাই এই নীতি কে বর্জন নয় সজাগ ও সচেতন ভাবে প্রয়োগ করাই একান্ত কাম্য।


Political Science Question & Answere