বিশ্বায়নের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং সুফল ও কুফল আলোচনা করো।

দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে বিশ্বায়নের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং সুফল ও কুফল আলোচনা করো, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


বিশ্বায়নের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং সুফল ও কুফল আলোচনা করো

      আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে এক চমকপ্রদ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী দিকচিহ্ন হল বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেশন। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর রাষ্ট্র গুলির মধ্যে সংযোগ গরে ওঠে। রাষ্ট্রগুলি একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় এবং তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন, শিক্ষা সংস্কৃতির মেলবন্ধন এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশে বিশ্বায়ন হলো একটি ম্যাজিক শব্দ তথা জাদুকরী প্রক্রিয়া।


বিশ্বায়নের প্রকারভেদ

 বিশ্বায়নের প্রকৃতিকে বিশ্লেষণ করলে এর কয়েক প্রকার রূপ আমরা লক্ষ্য করে থাকি, যথা —

অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন :-   বিশ্বজুড়ে একই প্রকার অর্থনীতি গঠনের মধ্য দিয়েই অর্থনীতির বিশ্বায়ন ঘটেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলিকে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলির অর্থ সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বিশ্ব ব্যাংক প্রভৃতি অর্থনৈতিক সংস্থা অর্থনীতির বিশ্বায়ন ঘটিয়ে চলেছে।


রাজনৈতিক বিশ্বায়ন :-    পৃথিবীব্যাপী একই ধরনের রাজনীতি,প্রশাসননীতি সমপ্রসারণের পথ ধরেই রাজনৈতিক বিশ্বায়ন ঘটেছে। বর্তমানে বিশ্বায়নের পথ ধরেই পুঁজিবাদী দেশগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর আধিপত্য কায়েম করে রাজনৈতিক বিকাশ ঘটিয়ে চলেছে।


সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন :-   বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন। ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এর সাহায্যে জাতি-রাষ্ট্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বে একই রূপের সংস্কৃতি গড়ে তোলে যার ফলে সাম্য,স্বাধীনতা,মৈত্রী,শান্তি প্রভৃতি সাংস্কৃতিক আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতি সকল দেশেই একান্ত অনুগত।


বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য 

     বিশ্বায়নের যে সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলি আছে সেগুলি হল, যথা —

(১) বহুমুখী সংস্কৃতি ও বহুত্ববাদের প্রসার।

(২) মুক্তবাজার ব্যবস্থা।

(৩) সংকোচিত রাষ্ট্র ধারণার বিকাশ।

(৪) রাষ্ট্র অপেক্ষা বেসরকারি সংস্থার ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ।

(৫) তথ্য চিন্তাভাবনা আদান-প্রদানের অবাধ স্বাধীনতা।


বিশ্বায়নের সুফল 

    বিশ্বায়নের যে সমস্ত সুফল দিক গুলি আছে সেগুলি হল, যথা —

(১) বিশ্বায়নের ফলে কোন অনুন্নত রাষ্ট্রের সাথে উন্নত রাষ্ট্রের মিথস্ক্রিয়া গড়ে ওঠে, এর ফলে উন্নত রাষ্ট্রগুলি থেকে আর্থিক অনুন্নত রাষ্ট্রগুলি তার উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

বিশ্বায়নের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং সুফল ও কুফল
বিশ্বায়নের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং সুফল ও কুফল


(২) এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর যে অংশে মানব অধিকার ও গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটেনি বিশ্বায়নের ফলে সে ক্ষেত্রে মানব অধিকার ও গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে।

(৩) বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন জাতি,গোষ্ঠী ও এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যবধান হ্রাস করে তাদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করে।


বিশ্বায়নের কুফল 

     বিশ্বায়নের যে সমস্ত কুফল দিক গুলি আছে সেগুলি হল' যথা —

(১) বিশ্বায়নের ফলে অপেক্ষাকৃত ধনী দেশ গুলি আমেরিকা,ব্রিটেন প্রভৃতি দেশের নিয়ন্ত্রণ ভারত, শ্রীলংকা প্রভৃতি রাষ্ট্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়।

(২) বিশ্বায়নের ফলে সমস্ত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণের বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক,WTO,IMF এর ইচ্ছা সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে।

(৩) বিশ্বায়নের ফলে এশিয়া,আফ্রিকা,ল্যাটিন আমেরিকার প্রাচীন ঐতিহ্য আজ মরণাপন্ন বলা চলে।


মন্তব্য :-   সুতরাং, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে চিন্তা, চেতনা, মানসিকতা ইত্যাদির বিশ্বব্যাপী সঞ্চালন ও সম্প্রসারণই হলো বিশ্বায়ন। আর বিশ্বায়নের মধ্য দিয়েই বিশ্বের রাষ্ট্র গুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপিত ও সুদৃঢ় হয় যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বিকশিত ও বলিষ্ঠ করে তোলে তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া অসামান্য গুরুত্বের অধিকারী।


Political Science Question & Answere