ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান সর্ম্পকে আলোচনা করো।

   বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনায় ভাষাবিজ্ঞানের তিনটি প্রধান ধারা তে ভাগ করা হয়ে থাকে এগুলি হল বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান, ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এবং তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান। এগুলি আসলে কোন ভাষাকে বিশ্লেষণ করা এবং ভাষার বিভিন্ন উপাদান গুলির বিশ্লেষণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।


ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান

   ভাষাবিজ্ঞানের যে ধারায় ভাষার বিভিন্ন কালের বিবর্তন কে বিশ্লেষণ করা হয় সেই শাখাটিকে বলা হয় ভাষাবিজ্ঞানের ঐতিহাসিক ধারা। যেমন বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে ভাষাটি অতীত থেকে কীভাবে বিবর্তিত হয়ে আজকের বাংলা ভাষায় এসেছে তার আলোচনা করাই হল ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান ভাষার বিভিন্ন উপাদান যেমন শব্দের বিষয়কে বিশ্লেষণ করে থাকে।

ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান সর্ম্পকে আলোচনা করো।
ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান


   যেমন আমি শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান যেভাবে তাকে বর্ণনা করবে তা হল এই শব্দটি কোন শব্দ থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং এই শব্দটি আজকের রূপ গ্রহণ করার আগে মধ্যবর্তী স্তর গুলিতে কিরূপে প্রচলিত ছিল। এখানে আমি শব্দটির ঐতিহাসিক পরিবর্তন দিয়ে বিষয়টিকে সহজে বোঝানো হলো - 


   ঐতিহাসিক পরিবর্তন এর অর্থ হলো কালগত বা সময়গত পরিবর্তন। ভাষাবিজ্ঞানের ধারাতে এই ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান বিভিন্ন শব্দের সেই কালগত পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ করে। বিষয়টি এই প্রকার - 


    আমি শব্দটি সংস্কৃত অস্মাভী শব্দ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। শব্দটি অষ্মদ শব্দের তৃতীয় বিভক্তির বহুবচনের রূপ। এই অস্মাভি শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত ভাষায় হলো আমহাহি, এবং এই অমহাহি শব্দ অপভ্রংশ স্তরে হলো অমহহি । অপভ্রংশ স্তরের পর প্রাচীন বাংলা তে শব্দটিকে পাওয়া গেলো আমহে রূপে। আর এই অমহে শব্দ টি মধ্য বাংলা তে পরিবর্তিত হয়ে উচ্চারিত হলো আক্ষে / আক্ষী রূপে। আর আধুনিক বাংলাতে উচ্চারিত হলো আমি রূপে।


   এখানে বোঝা গেল যে আমি শব্দটি কোথা থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং কালগত কি কি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের এই আমি শব্দটি একটি আধুনিক বাংলার স্বতন্ত্র শব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান শুধু শব্দ নয় বিভিন্ন বিভক্তি অনুসর্গ ইত্যাদি গুলিও ভাষাবিজ্ঞানের এই ঐতিহাসিক ধারা আলোচনা করে থাকে।


   সুতরাং বলা যেতে পারে ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এর কাজ হল ভাষার বিভিন্ন উপাদানের ইতিহাস গত পরিবর্তন কে বিশ্লেষণ করা। বিভিন্ন ঐতিহাসিক কালের বিভিন্ন রূপ এবং তার পরিবর্তন এবং বর্তমানের রূপের সঙ্গে তার অভিন্নতা।