স্বাধবার একাদশী নাটকে অটলবিহারী চরিত্র | স্বাধবার একাদশী | দীনবন্ধু মিত্র

  বাংলা নাটকের প্রাণ প্রতিষ্ঠার যুগের অন্যতম শ্রেষ্ট নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র, তার সধবার একাদশী নাটক সেই যুগের অন্যতম সামাজিক দলিল।  এই নাটক খানির অন্যতম বিতর্কিত চরিত্র অটলবিহারী, এখানে এই চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

স্বাধবার একাদশী নাটকে অটলবিহারী চরিত্র ? 


    দীনবন্ধু মিত্র তার নাটকে চরিত্র রূপায়নের ক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতার সূত্র প্রয়োগ করেছিলেন। 'নীলদর্পন' নাটকের ক্ষেত্রে এর প্রমান মেলে এবং একই সুরে বলা যায় স্বাধবার একাদশীর ক্ষেত্রে তৎকালের নব্য বঙ্গের ইংরেজি শিক্ষিত যুব সমাজের অধঃপতনের দিকে লক্ষ্য রেখে দীনবন্ধু  নিমচাঁদ ও অঞ্চলের ন্যায় চরিত্র সৃজন করেছেন।

স্বাধবার একাদশী নাটকে অটলবিহারী চরিত্র


   মনে রাখতে হবে নিমচাঁদ চরিত্রের পূর্বসূরী যদি মধুসূদনের একেই কি বলে সভ্যতা নবকুমার হয় তবে অটল অবশ্যই কালিনাথের সঙ্গে তুলনীয়। কিন্তু স্বাধবার একাদশীতে অটলকেই নায়ক হিসাবে Project করতে চেয়েছিলেন দীনবন্ধু। সমকালের কলকাতার নগর সভ্যতার রুচি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিহীন ধনাঢ্য সমাজে রূপ বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন দীনবন্ধু। তাই উক্ত সমাজে অর্ধশিক্ষিত বা হস্তিমূর্খ মদ্যপ স্বেচ্ছাচারী ও চরিত্রহীন ধ্বনির নন্দন হিসাবে পরিবল্পিত চরিত্র অটলবিহারী।

      অটল ‘আলালী'  যুবক মা-বাবার সন্তান স্নেহকে blackmail করে নিজের ধ্বংসসাধনের পথে নির্লজ্জভাবে চলেছে।  দীনবন্ধুর অটল তার মুর্খতা, উচ্ছৃংখলতা ও নির্লজ্জতা নিয়ে যথাযথ ঊনিশ শতকীয় কলকাতার বাবু কালচারের প্রতীক ও প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে।

      নীচতা ও স্বার্থপরতার উল্লেখযোগ্য নিদর্শন অটল। তার লালসা ও নির্লজ্জতা সীমাহীন আপাতভাবে চরম বোকা হলেও নিম্নগামী অটলের জীবন বৃত্তির চাহিদাতে উপলব্ধি করেছে। মাকে স্বপক্ষে রাখতে পারলে বাবাকে দিয়ে সকল কাজ হাসিল করা সম্ভব,সম্ভবত সেই সূত্রেই কাঞ্চনের মত একজন বেশি বয়সী বারবনিতাকে অটল সহজেই বৈঠকখানায় নিয়ে আসতে পেরেছে। শুধু তাই নয় এমন তরল লালসা ভোগের চরম অবনতিতে কাঞ্চনের কাছে অপমানিত হয়ে অটল আপন খুড়শাশুড়িকে বাগান বাড়িতে নিয়ে গিয়ে লালসা মেটাতে চেয়েছে। এভাবে অটল চরিত্রের মধ্যে চরম অধঃপতনের একটি পট নির্মাণ করেছেন দীনবন্ধু

     আপাতদৃষ্টিতে অটলের ইংরেজি স্কুলে পড়ার সুবাদে অল্পশিক্ষিত ধনীর দুলালের ন্যায় সুন্দরী স্ত্রী নিয়ে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত হতে পারতো কিন্তু সময় এবং সাহসের উদ্যমতা বাবু কালচার অটলকে গ্রাস করেছে। মদ্যপ শিক্ষিত যুবক নিমচাঁদ নিজস্বার্থে নিজের মদ্যপানের খরচের যোগানদার এর খোঁজে অটলকে পাকড়াও করেছে। অটল প্রথম দিকে একটু নিমরাজি হলেও পরে দামি মদ্যপান ও কাঞ্চন এর মত বারবণিতার জন্য সর্বদায় উন্মুখ থেকেছে। নিমদত্তের ভাষায়, মদের গোপাল অটলও মদ না খাওয়ার কথা বলছে। অটল জানিয়েছে — “আমি মদ খাবো না সকলে বলে একবার ধরলে আর ছাড়া যায় না”

      অর্থাৎ প্রথম অঙ্কের প্রথম গর্ভাঙ্কে পটলের মধ্যে মদ্যপান নিয়ে কিছুটা দ্বিধা ছিল। অথচ এই অংকের দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কে অটল নির্লজ্জের মত পিতার গলায় দড়ি দেওয়া প্রসঙ্গে তেরাত্রে শ্রাদ্ধ করার কথা বলে নিরলিপ্ত ভঙ্গিতে। শুধু তাই নয় কাঞ্চনের কথা টেনে ছড়া শোনায় সে —

      “ বেরয়ে ত্রলেন, বেশ্যা হলেন
         কুল করলেম খয়
         এখন কি না ভাতার শালা
         ধমকে কথা কয়,”

      তবে অটলের বিদ্যাবুদ্ধির জোর খুব সামান্য সে নীমচাঁদের মতো ‘I Need English,Write English,Talk English’ বলতে পারে না। সে নিমচাঁদ এর বিপরীত পীঠ বা অন্ধকার পীঠ। নিমচাঁদ তার পয়সায় মদ্যপান করে আবার মনে মনে অটলের মত নির্বোধকে তাচ্ছিল্যও করে,সুযোগ পেলে অবজ্ঞা প্রকাশ করে সরাসরি। যেমন নকুলবাবু প্রসঙ্গে অটল লম্পট শব্দ প্রয়োগ করলে নিমচাঁদ অটল কে জিজ্ঞাসা করেছে,‘লম্পট মানে জানো’? Telugu Movie Review

       দিনবন্ধু স্বাধবার একাদশীতে অটল চরিত্র নির্মাণে তেমন শিল্পবোধের পরিচয় দিতে পারেননি,এমন মন্তব্য করেছেন কোন কোন আলোচক। কেননা চরিত্রটি বিকাশ ও বিবর্তনের নাটকীয় পারম্পর্য যথাযথ বজায় থাকেনি এবং সবশেষে গোকুল বাবুর স্ত্রীর জায়গায় ছদ্দবেশী অটলের কাছে অটলের স্ত্রী কুমুদিনীকে ধরে আনলে কোনরকম মনস্তাত্ত্বিক সংঘাত ফুটে ওঠেনি। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন অটলের মত নির্বোধ অধঃপতিত বেশ্যাশক্ত ধনীর দুলালের মানসিক সংঘাত ও বেদনাবিদ্ধ করুণ মনোভাব ফুটিয়ে তোলা চরিত্র রূপায়নের ক্ষেত্রে কি যথার্থ হত ? আমরা মনে করি না। সেইজন্য লক্ষ্য করি মদ ছেড়ে দেবার কথা বললে নিমচাঁদ অটলকে তীব্রভাবে ব্যঙ্গ করেছে —“ তুই যদি কিছুমাত্র লেখাপড়া জানতিস তোর কথায় আমি রাগ করতাম। তোর কথায় রাগ করলে মূর্খতার সম্মান করা হয়। কিন্তু আজ অব্দি প্রতিজ্ঞা, এই সুরাপান নিবারণী সভায় নাম লেখাতে হয় সেও স্বীকার, তোর মতন অধম আত্তা পামোরের সঙ্গে আর আলাপ করব না, Not even for wine। ”

       তার পরই দেখা গেল অটল কাঞ্চনের প্রতি মোহের বিকারে বিকারগ্রস্ত এবং বাবার অনুপস্থিতির সুযোগে নিমচাঁদকে নিয়ে বাগান বাড়িতে গিয়ে আকাঠ ব্রান্ডি পান করে বেদনা কমাতে চায়। ত্রহেন অটলকে গণিকার প্রতি বলে তিরস্কার করা ছাড়া নিমচাঁদের আর কী বা করার থাকে। যথার্থই অধম আত্তা পামর করে অটলকে এঁকেছেন দীনবন্ধু। 


এছাড়া বাংলা সাহিত্যের অনন্য প্রশ্নগুলি 

TAG ::  সধবার একাদশী নাটক, সধবার একাদশী, সধবার একাদশী নাটকের সমাজ চিত্র, সধবার একাদশী নাটকের নিমচাঁদ চরিত্র, সধবার একাদশী দীনবন্ধু মিত্র, সধবার একাদশী কাঞ্চন চরিত্র, অসাধারণ কমেডি নাটক, কমেডি নাটক, বাংলা স্নাতকোত্তর, দীনবন্ধু মিত্র, বাংলা সান্মানিক, sadhabar ekadashi, sodhobar ekadoshi, sadhabar ekadashi natak, sadhabar ekadashi by dinabandhu mitra, sadhabar ekadashi natak question answer, dinabandhu mitra natak sadhabar ekadashi, bengali literature, bengali honours, bangla