ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীর অবদান বা ভূমিকা লেখ।

     দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয় থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এখানে সেই সকল প্রশ্ন নিয়ে নোট আকারে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণীর অন্যান্য বিষয়ের সকল নোট এখানে আলোচনা করা হয়। 

নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীর অবদান
নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনী

   ইতিহাস বিষয় থেকে পরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোচনা করা হলো যেখানে এই পোস্টটি তে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীর অবদান বা ভূমিকা - প্রশ্নের বিষয়টিকে এখানে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হলো।


ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীর অবদান বা ভূমিকা লেখ।


    ভারতের মুক্তি সংগ্রামে নেতাজীর আজাদ হিন্দ বাহিনী নামক জাতীয় বাহিনীর ভূমিকা অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী। প্রকৃতপক্ষে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম ভারতের ব্রিটিশ সরকারের শাসন ক্ষমতার ভিত কাঁপিয়ে দেয় যা ভারতের স্বাধীনতা লাভের ত্বরান্বিত করেছিল।

    1939 সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়াই সুভাষচন্দ্র বোস দেখেন যে ভারতে মুক্তিযুদ্ধের মহাসুযোগ উপস্থিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির প্রবল চাপে ব্রিটিশ শক্তি এক অভাবনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। নেতাজি পরিস্থিতিকে ব্যবহার করার মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হলে ব্রিটিশ সরকার 1940 সালের 4 ঠা জুলাই তাকে কলকাতায় গৃহবন্দী করে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারকে ফাঁকি দিয়ে ছদ্মবেশে 1941 সালের 17 ই জানুয়ারি দেশ ত্যাগ করেন। প্রথমে কাবুল ও তারপর রাশিয়ার মস্কো হয়ে জার্মানির বার্লিনে উপস্থিত হন।

    জার্মানিতে এসেই তিনি জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপ এর সঙ্গে দেখা করেন এবং ইউরোপের মাটি থেকে ভারতীয় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যে জার্মান প্রবাসী বিপ্লবী ভারতীয় রাজবিহারী বসু সেই সময়ে উদ্যোগী হন। 1942 সালের 4 জুন তারিখে ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ গঠন করেন। এবার তিনি নেতাজিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সফর করার জন্য আহ্বান করেন।

    ইতিপূর্বে জাপানের হাতে সিঙ্গাপুরের পতনের পর যুদ্ধবন্দী ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। 1942 সালের 1 লা সেপ্টেম্বর আজাদ হিন্দ বাহিনী প্রকাশ্যে হয়ে গঠিত হয়। 40 হাজার সৈন্য এই বাহিনীতে যোগ দেয়। তারপর নেতাজি ও আজাদ হিন্দ বাহিনী নাগাল্যান্ডের উদ্দেশ্যে জার্মানি ত্যাগ করে জাপানের টোকিওতে এসে উপস্থিত হয়।

    এরপর সিঙ্গাপুরে এসে তিনি আজাদ হিন্দ বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং নেতাজি নামে ভূষিত হন। নেতাজি প্রথমে আজাদ হিন্দ বাহিনীর শৃঙ্খলা বিধানে সচেষ্ট হন। তার নেতৃত্বে এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ে। নেতাজি এই বাহিনীকে তিনভাগে বিভক্ত করেন, যেমন—(১) গান্ধী ব্রিগেড,(২) নেহেরু ব্রিগেড,(৩) সুভাষ ব্রিগেড এবং নারী সৈন্যদের জন্য ঝাঁসির রানী ব্রিগেড গঠন করেন। প্রতি বাহিনীকে নিজে প্রশিক্ষণ দেন।

    এরপর নেতাজি সিঙ্গাপুরে 1943 সালের 21 শে অক্টোবর ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ অধিবেশনে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন। এই সরকারের মূলধনী ছিল “জয়হিন্দ ও দিল্লি চলো”। এর সদস্য হলেন নেতাজি, এ.সি চট্টোপাধ্যায়, লক্ষ্মী স্বামীনাথন, রাজবিহারী বসু প্রমূখ। কংগ্রেসের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকাকে আজাদ হিন্দ সরকার জাতীয় পতাকার মর্যাদা দেন।

     এইদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় জাপান, জার্মান ও আরো চারটি রাষ্ট্র আজাদ হিন্দ সরকারের স্বীকৃতি দেয় ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো ভারতীয় মুক্তিযুদ্ধে আজাদ সরকারকে জাপানে সাহায্যদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে সমর্পণ করেন। এরপর মনিপুর,ইম্ফল অধিকার করে এবং নাগাল্যান্ডের কহিমা অবরুদ্ধ রাখে ও ঠিক হয় বর্ষার শেষের পরে আজাধীন বাহিনী আসাম এর ভিতরে দিয়ে বাংলা আক্রমণ করবে।

    দিল্লি চলো অভিযানে অগ্রসর হয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈন্যদল কহিমায় এসে পৌঁছায়। তখন বিশ্বযুদ্ধে জাপানের সামরিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়ে এবং জাপান যুদ্ধ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু ইতিপূর্বে বর্ষা শুরু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয় খাদ্য ও অন্যান্য রসদ, গুলিগাল্লা সরবরাহ ব্যাহত হয়। এমন পরিস্থিতিতে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর সৈন্যদল রণাঙ্গন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

মূল্যায়ন :- সুতরাং,বলা যায় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের সামরিক পরিস্থিতি ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে যেতে থাকে। এমনকি রাশিয়া জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। 1944 সালের 15 ই আগস্ট তারিখে জাপান আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সুভাষচন্দ্র বসু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় থাকা নিরাপদ মনে করলেন না,তাই তিনি সাইগন থকে এক জাপানি বিমানে হবিবুর রহমানের সাথে টোকিওর দিকে রওনা হন। কিন্তু 1944 সালের 18 ই আগস্ট তারিখে জাপানের তহকুক বিমানবন্দরে বিমানটি আগুন লেগে ভস্মীভূত হওয়ার খবর আছে জনসম্মুখে।

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের অন্য সকল প্রশ্ন ও উত্তর :