অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা করো

 দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয় থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এখানে সেই সকল প্রশ্ন নিয়ে নোট আকারে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণীর অন্যান্য বিষয়ের সকল নোট এখানে আলোচনা করা হয়।

অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা করো
অসহযোগ আন্দোলন


   ইতিহাস বিষয় থেকে পরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোচনা করা হলো যেখানে এই পোস্টটি তে অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা করো, প্রশ্নের বিষয়টিকে এখানে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হলো।


অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা করো।

ভূমিকা :- ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল দিকচিহ্ন হল 1920-1921 সালের অহিংস আন্দোলন। ব্রিটিশ সরকারের সাথে সব রকম ভাবে অসহযোগিতা করা এবং তার মাধ্যমে সরকারকে সমস্ত ভাবে দুর্বল করে তাকে ভারতের হাতে স্বাধীনতা অর্পণে বাধ্য করা হলো এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। এই আন্দোলনের পুরোহিত ছিলেন মহতমা গান্ধী এবং তার নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন সারা ভারতে উজ্জ্বল রূপ ধারণ করেছিল।

     1920 সালের 4 ঠা সেপ্টেম্বর তারিখে কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন বসে। গান্ধীজী এই অধিবেশনে অহিংস আন্দোলনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু এই প্রস্তাবে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ,অ্যানি বেসান্ত,চিত্তরঞ্জন দাস, মদনমোহন মালব্য প্রমুখ নেতার সম্মতি ছিল না। কিন্তু ভোটাভুটিতে গান্ধীজীর প্রস্তাবটি জয়যুক্ত হয় এবং আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।

      গান্ধীজীর অসাধারণ সংগঠন,প্রতিভা ও নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনকে সমগ্র ভারতে প্রসারিত করার দুটি কর্মসূচি ছিল। যেমন —(১) গঠনমূলক কর্মসূচি,(২) বর্জন মূলক কর্মসূচি। গঠনমূলক কর্মসূচির দিক থেকে প্রধান কাজ গুলি হল অস্পর্শতা দূরীকরণ,হিন্দু-মুসলমানের মিলন, মদ্যপান নিবারণ,দেশি সুতার বস্ত্র বয়ন এবং তিলকের নামাঙ্কিত তহবিলের জন্য এক কোটি টাকা সংগ্রহ।

      অন্যদিকে,অসহযোগ আন্দোলনের স্বপক্ষে বর্জন মূলক কর্মসূচির মধ্যে ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জন,আদালত বর্জন,আইন সভা বর্জন,সরকারি অনুষ্ঠান বর্জন প্রভৃতি ছিল গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। সঙ্গে সঙ্গে এই আন্দোলনের বর্জন মূলক কর্মসূচির অপর একটি দিক হলো বিদেশি পোশাক বর্জন এবং স্বদেশী পোশাক গ্রহণ।

     অহিংস অসহযোগ আন্দোলনকে জোরদার করে তোলার জন্য গান্ধীজী 1920 সালের 7 ই মার্চ তারিখে সবরমতী আশ্রম থেকে প্রচারিত একটি ইশতেহারে এই আন্দোলনকে খিলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করে। সেই সময় খিলাফত আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক হিংসা প্রয়োগ করা হয়েছিল। আর প্রতিকারের উদ্দেশ্যে তিনি অসহযোগ আন্দোলনকে একটি তীক্ষ্ণ আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলেন এবং সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারকে মানসিকভাবে বিপন্ন করার জন্য অসহযোগ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন

      গান্ধীজীর আহবানে সাড়া দিয়ে উকিল, ব্যারিস্টার,আদালত বর্জন করে আইনসভার সদস্য গন আইনসভা ত্যাগ করেন এবং ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে। গান্ধীজীর আহবানে উদ্বুদ্ধ হয়ে সারা দেশের মানুষ বিলাতি দ্রব্য বর্জন ও পুড়িয়ে ফেলতে শুরু করে। গান্ধীজীর নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে স্বদেশী শিক্ষা শুরু হয়। এই উদ্দেশ্যে কাশিতে কাশি বিদ্যাপীঠ, গুজরাটে গুজরাট বিদ্যাপীঠ এবং বাংলাতে বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গরে উঠতে সাহায্য করেন।

      কিন্তু ঠিক এই সময়ে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামে কৃষকের ওপর পুলিশের যথেষ্ট গুলি চালনায় বিক্ষিপ্ত কৃষকরা চৌরিচৌরা থানায় আগুন লাগিয়ে 22 জন পুলিশ কর্মী নিহত করেন। এই ঘটনায় অহিংস নীতির পূজারী গান্ধীজি অত্যন্ত ব্যথিত হন এবং আন্দোলন প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশ এর ফলে অহিংসা ও অসহযোগ আন্দোলন উত্তেজনাময় অবস্থার অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাই জহরলাল নেহেরু দুঃখ করে বলেন যে ‘একটি ক্ষুদ্র এলাকায় অতিক্ষুদ্র সংখ্যক মানুষের পাশে গান্ধীজী সকল দেশবাসীকে শাস্তি দিলেন।’

উপসংহার :- সুতরাং, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনটি তার প্রবল উদ্দীপনাময় ও রোমাঞ্চকর সময় অকাল মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছিল এবং সমস্ত আয়োজন সত্বেও আন্দোলনটি ইসসিত সাফল্যের মুখ দেখতে পাইনি। তবুও আমাদের স্বীকার করতে হয় যে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গণচেতনা ও গণমুক্তি স্পৃহা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে চির উজ্জ্বল হয়ে আছে। এখানে নিহত আছে এই আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য।

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের অন্য সকল প্রশ্ন ও উত্তর :