সমাজ সংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।

 দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয় থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এখানে সেই সকল প্রশ্ন নিয়ে নোট আকারে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণীর অন্যান্য বিষয়ের সকল নোট এখানে আলোচনা করা হয়।

সমাজ সংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান


   ইতিহাস বিষয় থেকে পরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোচনা করা হলো যেখানে এই পোস্টটি তে সমাজ সংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো, প্রশ্নের বিষয়টিকে এখানে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হলো।


সমাজ সংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।


ভূমিকা :-  উনিশ শতকে সমাজ সংস্কারক হিসেবে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর নাম বিশেষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয়। তার কাছে মানুষই ছিল মুখ্য তাই মানুষের মুক্তির জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। সাদা ধুতি,চাদর ও চটি পরিচিত এই তেজস্বী ব্রাহ্মণ এর মধ্যে নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার এক অপূর্ব প্রভাব ঘটেছিল। এই কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে — এই ভীরুর দেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র পুরুষ সিংহ।

শিক্ষা সংস্কার :- 1851 খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তিনি শিক্ষা এবং সংস্কারের কাজে ব্রতী হন। পূর্বে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ ও বৌদ্ধ পরিবারের সন্তানরা সংস্কৃত কলেজের ছাত্র হতে পারত। বিদ্যাসাগর এই প্রথা রদ করে সকল বর্ণের ছাত্রদের জন্য সংস্কৃত কলেজের পড়াশোনার পথ উন্মুক্ত করেন।

শিক্ষার বিস্তার :-  জনশিক্ষা বিস্তারের কাজেও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে শিক্ষার অচলাবস্থা দূর করে মানুষকে প্রকৃত মনুষত্বে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি শিক্ষা বিস্তারের জন্য বাংলার বিভিন্ন গ্রামে ও বিভিন্ন অঞ্চলে 33 টি স্থায়ী ও 20 টি মডেল স্কুল বা আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলির মধ্যে অনেকগুলি তিনি নিজেই প্রায় চালাতে।

নারী শিক্ষা :- পূর্বে পর্দার আড়াল থেকে নারী সমাজের মুক্তির জন্য তিনি হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেগুলিতে 1300 ছাত্রী পড়াশোনা করত। তার অন্যতম কৃতিত্ব ছিল ‘মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন’,এখানে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা হত।

বিধবা বিবাহ :- বহু বিবাহ,বাল্য বিবাহ এবং বিধবা বিবাহ রোধ এর জন্য তিনি আন্দোলনে নামেন। 1855 সালে বিধবা বিবাহ প্রচলিত কিনা সে সম্পর্কে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। বিধবা বিবাহ আইন পাস করার জন্য 1000 ব্যক্তির স্বাক্ষর নিয়ে একটি আবেদনপত্র ব্রিটিশ সরকারের কাছে পাঠান। 1856 সালে লর্ড ডালহৌসি বিধবা বিবাহ আইন পাস করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নিজপুত্রকে এক বিধবা পাত্রী সাথে বিবাহ দেন।

বহুবিবাহ :- হিন্দু সমাজে বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। 1855 সালে তিনি বহুবিবাহ প্রথা নিষিদ্ধ করার জন্য অনুমতি জানিয়ে 50 হাজার মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত এক আবেদনপত্র সরকারের কাছে পাঠান।

বাল্যবিবাহের বিরোধিতা :- তৎকালীন হিন্দু সমাজে বাল্যবিবাহ এক অভিশাপের মোচন। এই অভিশাপ মোচনের জন্য আজীবন বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করেন বিদ্যাসাগর। ‘সর্বশুভকরী’ পত্রিকায় প্রথম বাল্যবিবাহের দোষ নামক প্রবন্ধ লেখেন তিনি। বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েরা খুব অল্প বয়সে বিধবা হতো বলে বাকি জীবন দুঃখ কষ্টে বিভিন্ন গালিগালাজ ও কঠোর অনুশাসন এর মধ্যে কাটাতে হতো। তাই এই অল্প বয়সী মেয়েদের জীবনে দুঃখ মোচনের জন্য বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের প্রচলন করতে চেয়ে ছিলেন। তার ফলশ্রুতি রূপে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে এক আইন পাস করে মেয়েদের বিয়ের বয়স 10 বছর ধার্য করেন।


মূল্যায়ন :- সুতরাং,পরিশেষে বলা যায় যে বিদ্যাসাগর রামমোহন রায়ের মতো বিতর্ক পুরুষ না হলেও তার অবদানের মূল্যায়ন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিভিন্ন পন্ডিত বিভিন্ন কারণে বিধবা বিবাহ ও সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সাফল্য হলেও বিধবা বিবাহের পক্ষে আন্দোলনটি তেমন কোনো সাফল্য লাভ করেনি। কিন্তু এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নারী মুক্তির বিষয়টি সমস্ত ভারতের চিন্তাশীল সমাজকে বিশেষভাবে আলোড়িত করেছে।

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের অন্য সকল প্রশ্ন ও উত্তর :