ভারতের নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো

  দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয় থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এখানে সেই সকল প্রশ্ন নিয়ে নোট আকারে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণীর অন্যান্য বিষয়ের সকল নোট এখানে আলোচনা করা হয়।

Raja-Ram-mohan-Roy
Raja Ram Mohan Roy


   ইতিহাস বিষয় থেকে পরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোচনা করা হলো যেখানে এই পোস্টটি তে ভারতের নবজাগরণের রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো , প্রশ্নের বিষয়টিকে এখানে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হলো।


ভারতের নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো।
অথবা,
উনবিংশ শতাব্দীর ভারতবর্ষে শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা উল্লেখ করো।


ভূমিকা :- আধুনিক ভারতে যেসব সংস্কারক জন্মগ্রহণ করেছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম ছিলেন রাজা রামমোহন রায় (1772 — 1833 খ্রিস্টাব্দ)। তাকে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বা আধুনিক ভারতের জনক নানা আখ্যায় অভিহিত করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাকে ভারত পথিক বলে সম্মান জানিয়েছেন। পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর মতে তিনি হলেন ভারতের জাতীয়তাবাদের জনক। তাই আমাদের সাহিত্য, ধর্ম, শিক্ষা বিজ্ঞান,সমাজনীতি,রাষ্ট্রনীতি যাকে আমরা আধুনিক বলি না কেন রাজা রামমোহন হলেন তার অগ্রদূত।

বহুমুখী প্রতিভা :- 1772 খ্রিস্টাব্দের 22 মে হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে এক ধনী রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। অসাধারণ ধীশক্তি ও প্রতিভা বলে খুব অল্প বয়সে তিনি আরবি ফারসি ও সংস্কৃত ভাষায় এবং হিন্দু,মুসলিম, বৌদ্ধ,খ্রিস্টান বিভিন্ন ধর্ম শাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ দ্বারা তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত হন। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সমন্বয়ে নবভারত গঠনের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।

ধর্ম সংস্কার :- বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পাঠের ফলে তিনি একেশ্বরবাদী নিরাকার ব্রাহ্মণ বাদের সমর্থক হয়ে ওঠেন। তিনি বেদ,উপনিষদ প্রভৃতি গ্রন্থ ব্যাখ্যা করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে পৌত্তলিকতা, পুরোহিততন্ত্র,মূর্তিপূজা,লোকাচার হিন্দু ধর্মের মূল কথা নয়। 1803 খ্রিস্টাব্দে বহুদেববাদের বিরুদ্ধে এবং এক ঈশ্বর বাদের সমর্থনে ফরাসি ভাষায় তিনি একটি পুস্তিকা রচনা করেন তার নাম ‘তুহাৎ-উল-মুয়াহিদ্দিন'। কেবলমাত্র তাই নয় তিনি বাংলা ভাষায় বেদান্তের ভাষ্য রচনা করেন এবং ইস,কট,কেন,মন্ডুক,মান্ডুক্য এই পাঁচটি উপনিষদের বাংলা অনুবাদ করেন। 1815 খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় তার বন্ধু ও তার অনুগামীদের নিয়ে আত্মীয় সভা স্থাপন করেন। এমনকি 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করেন।

সমাজ সংস্কারক :-  রামমোহন সমাজ মুক্ত যুক্তিবাদী হিন্দু সমাজে প্রচলিত বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। এগুলি নিবারণের জন্য তিনি সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রতিবাদে সচ্চার হন। 1818 খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন এবং জনমত গঠনে ব্রতী হন। রামমোহন রায়ের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতায় শেষপর্যন্ত গভর্নর জেনারেল বেন্টিং 1829 খ্রিস্টাব্দে 4 ঠা ডিসেম্বর এক আইনের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথাকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন।

শিক্ষা সংস্কার :-  তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে একজন উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। তিনি মনে করতেন যে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে নবজাগরণ গড়ে উঠবে। ডেভিড হেয়ারের বিদ্যালয় ও রামমোহনের প্রতিষ্ঠিত বেদান্ত কলেজে পাশ্চাত্য, সমাজ বিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যার শিক্ষা দেওয়া হতো। 1823 খ্রিস্টাব্দে লর্ড আমহার্স্টকে লিখিত এক পত্রের মাধ্যমে তিনি ভারতবর্ষে গণিত,প্রকৃতিক বিজ্ঞান,রসায়ন প্রভৃতি শিক্ষার দাবি জানান।

সংবাদপত্রের প্রকাশনা :- রামমোহন ছিলেন ভারতীয় সাংবাদিকতার অগ্রদূত। তিনি বাংলা,ইংরেজি ও ফারসি ভাষায় বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সংবাদ কৌমুদী ছিল উল্লেখযোগ্য এবং ফারসি ভাষায় উল্লেখযোগ্য ছিল ‘মীরার-উল-আখরার'


মূল্যায়ন :-  পরিশেষে বলা যায় যে রামমোহন এর কৃতিত্ব নিয়ে বিভিন্ন মতামত থাকলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রামমোহনকে ‘ভারত পথিক' বলে অভিহিত করেছেন,অধ্যাপক দিলীপ কুমার বিশ্বাস বলেছেন ‘বিশ্বপথিক', ডক্টর স্পিয়ার তাকে ‘আধুনিক ভারতের স্রষ্টা' বলে অভিহিত করেছেন, ডক্টর বিপিনচন্দ্র বলেছেন ‘উনিশ শতকে ভারতের গগনে রামমোহন রায় উজ্জ্বলতর নক্ষত্র রূপে ভাস্কর ছিলেন’। তাই রাজা রামমোহন রায়কে অসাধারণ শক্তি ও প্রতিবাদের অধিকারের জন্য আমরা তাকে ভারতের নব যুগের প্রবর্তক,আলোর দিশারী, প্রদীপ্ত প্রমিথিউস নানান ভাবে অভিহিত করে থাকি।

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের অন্য সকল প্রশ্ন ও উত্তর :