স্যার সৈয়দ আহমেদ ও তার আলীগড় আন্দোলনের বিবরণ দাও

  দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয় থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এখানে সেই সকল প্রশ্ন নিয়ে নোট আকারে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণীর অন্যান্য বিষয়ের সকল নোট এখানে আলোচনা করা হয়। 

স্যার সৈয়দ আহমেদ ও তার আলীগড় আন্দোলনের বিবরণ দাও
আলীগড় আন্দোলন


   ইতিহাস বিষয় থেকে পরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোচনা করা হলো যেখানে এই পোস্টটি তে স্যার সৈয়দ আহমেদ ও তার আলীগড় আন্দোলনের বিবরণ দাও, প্রশ্নের বিষয়টিকে এখানে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হলো।


স্যার সৈয়দ আহমেদ ও তার আলীগড় আন্দোলনের বিবরণ দাও।
অথবা, 
মুসলমান সমাজের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে আলীগড় আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করো।


ভূমিকা :- 19 শতকে যিনি মুসলিম সমাজের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষায় যুক্তিবাদী ভাবধারার প্রবর্তন করেছিলেন তিনি হলেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁ (1817 থেকে 1898 খ্রিস্টাব্দ)। তিনি বুঝেছিলেন ভারতে মুসলমানদের অনগ্রসরতার অন্যতম কারণ ব্রিটিশ বিদ্বেষ। মুঘল শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য মুসলমান সমাজ ইংরেজদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। এমনকি আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ কেও ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে। অপরদিকে,অভিজাত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হিন্দুরা পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করে দ্রুত উন্নতির পথে অগ্রসর হয়। এই সমস্ত কারণে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত সৈয়দ আহমেদ মুসলমান সমাজকে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন তার আলিনগর আন্দোলনের মাধ্যমে।

আলীগড় আন্দোলনের উৎপত্তি :-   সৈয়দ আহমেদ খান তখন ‘The Loyal Mohamedans’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে মহাবিদ্রোহের সময় যত মুসলমান বিদ্রোহীরা সমর্থন করেছিলেন তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক মুসলমান ইংরেজ সরকারের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছিলেন। তিনি মুসলমান সমাজকে একথা বোঝান যে ইংরেজ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের ওপর তার উন্নতি একান্তভাবে নির্ভরশীল। মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য ভাবধারা ও বৈজ্ঞানিক যুক্তি প্রসারের জন্য সৈয়দ আহমেদ যে কর্মসূচি গ্রহণ করে তা অসাধারণ ভাবে আলীগড় আন্দোলন নামে খ্যাত।

পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের প্রয়াস :-  1864 খ্রিস্টাব্দে স্যার সৈয়দ আহমেদ মাতৃভাষা উর্দুর মাধ্যমে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রসারের জন্য ‘Sintific Socity’নামে একটি সমিতি স্থাপন করে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ ছিল ইংরেজি ভাষায় রচিত গ্রন্থ গুলি উর্দুতে অনুবাদ করে মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে সহায়তা করা। এই উদ্দেশ্যে স্যার সৈয়দ আহমেদ 1857 খ্রিস্টাব্দে আলিগড়ে ‘Mohamedan Anglo Oriantal Collage’ স্থাপন করেছিলেন যা পরবর্তীতে ‘আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে পরিচিত হয়েছিল। এই কলেজে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিল আলীগড় আন্দোলন। 1864 খ্রিস্টাব্দে তিনি গাজীপুরে একটি ইংরেজী বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

স্যার সৈয়দ আহমেদ ও মুসলিম সমাজ সংস্কার :-   স্যার সৈয়দ আহমেদ দেশ প্রেমিক হলেও জাতীয় কংগ্রেসকে অত্যন্ত শত্রু বলে মনে করতেন। জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর 1886 খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘Mohamadan Education Congres’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পড়ে ‘Mohamadan Education Confarance’ নামে পরিচিত হয়।এরপর তিনি গঠন করেন ‘United Petrotyatie Assocaition’ (1888)। এই সংস্থার প্রধান কাজ ছিল জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধিতা করা। এরপর তিনি স্থাপন করেন ‘Mohamadan Anglo Oriantal difrence’ (1863)। এই সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল— (i) মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা করা,(ii) ইংরেজ শাসন কে সমর্থন করা,(iii) ইংরেজ শাসনের প্রতি অধিকতর মুসলমানদের অনুগত সৃষ্টি করা।

   তিনি উর্দু পত্রিকা ‘তহজিব-আল- আখলাক’ ও ইংরেজি ‘পাইওনিয়ার’ পত্রিকার মাধ্যমে তার মত প্রচার করেন।

আলীগড় আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা :-  স্যার সৈয়দ আহমেদ খান মুসলমানদের মধ্যে এই আশঙ্কা প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিলেন যে ভারতে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও উন্নততর হিন্দুরা অধিক ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। 1888 খ্রিস্টাব্দে তিনি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন যে ভারতীয় কংগ্রেস ভারতের সকল সম্প্রদায়ের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হতে পারে না।


 অবশ্য প্রথম দিকে তিনি হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতার কথা প্রচার করেন, তিনি বলেছিলেন যে হিন্দু ও মুসলমান দুটি চক্ষু এর একটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে অপরটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু ক্রমশ তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক ও স্বতন্ত্র জাতী ও তাদের স্বার্থ পরস্পর বিরোধী এই দ্বিজাতি তত্ত্বের বীজ রোপন করেন।

আলীগড় আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব :-   স্যার সৈয়দ আহমেদ অনুন্নত সমাজের নবজাগরণ এনেছিলেন এইজন্য তাকে রাজা রামমোহন রায়ের সাথে তুলনা করা হয়  তার কার্যকলাপের ফলে ভারতের রাজনীতিতে মুসলমানদের গুরুত্ব ইংরেজ সরকার ক্রমশ অনুভব করেন। দ্বিজাতি তত্ত্ব ও বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রসারে আলিগড় কলেজের অধ্যাপক থিওডোর ব্রেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। তিনি আলিগড় থেকে প্রকাশিত ‘ইনস্টিটিউট গেজেট’ নামে সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এতে এমন সব প্রবন্ধ হতে থাকে যার ফলে আরে আলীগড় আন্দোলন ক্রমশ সাম্প্রদায়িকতার পথে অগ্রসর হয়েছিল। এই সাম্প্রদায়িকতার ফলশ্রুতি হিসেবে ভারতবর্ষের বুক ভেদ করে পাকিস্তান নামক নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের অন্য সকল প্রশ্ন ও উত্তর :