বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা লেখ

  দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয় থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এখানে সেই সকল প্রশ্ন নিয়ে নোট আকারে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণীর অন্যান্য বিষয়ের সকল নোট এখানে আলোচনা করা হয়।

বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা লেখ
নবজাগরণের প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা


   ইতিহাস বিষয় থেকে পরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোচনা করা হলো যেখানে এই পোস্টটি তে বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা লেখ, প্রশ্নের বিষয়টিকে এখানে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হলো।


বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা লেখ।

ভূমিকা :- পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রভাবে উনবিংশ শতকে বাংলার শিক্ষা ক্ষেত্রে যে ব্যাপক অগ্রগতি শুরু হয় তার ফলে বাংলার এক নবযুগের সূচনা হয়,এই ঘটনা বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত। বাংলার নবজাগরণের দ্বারা রামমোহন রায়ের সংস্কারমূলক কর্মসূচি থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃজনশীল কাজ কর্ম পর্যন্ত অব্যাহিত থাকে। তাই উনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণকে কোন ঐতিহাসিক পঞ্চদশ শতকের ইতালির নবজাগরণ এর সাথে তুলনা করেন।

বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি :- উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে নানা বিতর্ক আছে সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল —

বাস্তব নবজাগরণ :- উনিশ শতকে বাংলায় প্রকৃত নবজাগরণ ঘটে বলে অনেকে মনে করেন। তাই বাংলার সংস্কৃতিক ও বৈদ্ধ্যতিক জাগরণকে স্যার যদুনাথ সরকার দ্বিধাহীনভাবে রেনেসাঁস বা নবজাগরণ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন বাংলার নবজাগরণ ইতালির নব জাগরণের চেয়ে ব্যপক,গভীর ও বৈপ্লবিক। শোভন সরকার, অবলান দত্ত প্রমুখরা বাংলার জাগরনে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এটিকে প্রকৃত নবজাগরণ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তথাকথিত নবজাগরণ :- সেন্সাস কমিশনার অশোক মিত্র মনে করেন এই জাগরণ শহর কলকাতার মানুষের মধ্যে আবদ্ধ ছিল তাই গ্রামীণ বাংলার জনগণকে তার স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি 1951 সালে আদমশুমারি রিপোর্ট এ বাংলার নবজাগরণকে তথাকথিত নবজাগরণ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে সুপ্রকাশ রায়,বরুণ দে, ডক্টর সুমিত সরকার প্রমুখরা বাংলার নবজাগরণকে তথাকথিত নবজাগরণ বলে স্বীকার করেন।

নবজাগরনের স্রষ্টা :- বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি স্রষ্টা কারা তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক আছে। বাংলার নবজাগরণে স্রষ্টা রামমোহন রায় বা ডিরোজিও যেকোনো কর্তৃককে মার্কিন গবেষক ডেভিড এ কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু এই অভিমত যথার্থ নয়। তাই ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে পাশ্চাত্য সভ্যতার সমন্বয়ে ভারতবাসীর অন্তরে নবজাগরণের সূচনা হয়।


সীমাবদ্ধতা :- বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতির সীমাবদ্ধতাই যে সব দিক গুলি দায়ী করা যায় সেগুলি হল যথা —

 1) বাংলার নবজাগরণ ছিল সীমাবদ্ধ নবজাগরণ। এই নবজাগরণ কেবলমাত্র সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
 
 2) বাংলার নবজাগরণে হিন্দু সমাজের বৃহত্তর নিম্নবর্গের মানুষ। কৃষক সমাজ ও মুসলিম সমাজের সাথে নবজাগরণের কোন সম্পর্ক ছিল না। এই জন্য ডঃ অনিল শীল একে এলিটস আন্দোলন বলে অভিহিত করেন।
 
 3) কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলার নবজাগরণের সময় কলকাতা ও বাংলা ছিল ব্রিটিশ এর কাছে পরাধীন। তাই এই আন্দোলন এর ব্যাপকতা ও বিশালতা খুব একটা সুপ্রসর ছিল না।

 4) বাংলা নবজাগরণ এর প্রেক্ষাপট এক রূপ প্রকৃতির ছিল বলে ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠী মনে করেন এই এক রূপ হওয়ার জন্য বাংলার নবজাগরণ শুধুমাত্র একটা শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

 5) বাংলার নবজাগরণে ইতালির নবজাগরণের মত গতিবেগ,উদ্যম ও বহুমুখী সৃজনশীলতা লক্ষ্য করা যায়নি। যার ফলে এই আন্দোলন সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও কিছু ঐতিহাসিক এর মতে এটি বাংলার প্রকৃত নবজাগরণ নামে অভিহিত।

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের অন্য সকল প্রশ্ন ও উত্তর :