ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবগুলি কি ছিল ?এই প্রস্তাব গুলি সম্পর্কে ভারতীয়দের কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল

   দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয় থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এখানে সেই সকল প্রশ্ন নিয়ে নোট আকারে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণীর অন্যান্য বিষয়ের সকল নোট এখানে আলোচনা করা হয়।

ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব
ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব

   ইতিহাস বিষয় থেকে পরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোচনা করা হলো যেখানে এই পোস্টটি তে ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবগুলি কি ছিল ?এই প্রস্তাব গুলি সম্পর্কে ভারতীয়দের কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল , প্রশ্নের বিষয়টিকে এখানে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হলো।


ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবগুলি কি ছিল ?এই প্রস্তাব গুলি সম্পর্কে ভারতীয়দের কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?
অথবা, 
ক্রিপস মিশন কি ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবগুলি কি ? ক্রিপস প্রস্তাব গুলি ব্যর্থ হয়েছিল কেন ?



ভূমিকা :- ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল ক্রিপস মিশন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের সমর্থন পাওয়ার আশায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন বিষয়ক রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার ক্রিপস মিশনকে ভারতবর্ষে পাঠায়। যদিও এই মিশন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিষয়ে এগিয়ে গিয়ে ভারতকে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস বা ব্রিটিশ ভুক্ত স্ব-শাসিত এলাকা মর্যাদাদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মাত্র। কিন্তু তবুও ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এই মিশন ছিল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

    1942 সালে 23 শে মার্চ তারিখে স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপস এর নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে এসে পৌঁছালে ভারতের রাজনৈতিক সমস্যাকে দ্রুত সমাধানের জন্য ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সম্পর্কে কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দেন মাত্র। সেগুলি হল যথা —

 ১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ ভুক্ত ডোমিনিয়ন এর মর্যাদা দেওয়া হবে।
 ২) এই ডোমিনিয়নের অন্তর্গত প্রদেশগুলোকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার দেওয়া হবে।
 ৩) প্রদেশ গুলির আইনসভা গুলিকে একটি সংবিধান রচনাকারী সংস্থা গঠন করার অধিকার দেওয়া হবে।
 ৪) ভারতের রাজন্যবর্গকে আইনসভার প্রতিনিধি নিয়োগ করার অধিকার দেওয়া হবে।
 ৫) ভবিষ্যতে ডোমিনিয়ন এর সরকার মন্ত্রিসভা পরিচালিত দায়িত্বশীল সরকারে পরিণত হবে।


ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতা 


     ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবগুলি ব্যর্থ হওয়ার যে সমস্ত দিক গুলি আছে সেগুলি হল —

    ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব কংগ্রেস প্রত্যাখ্যান করার পরে কংগ্রেসের নেতা গান্ধীজীর মানসিকতা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মিস্টার ক্রিপস ভারতের স্বাধীনতা লাভের দাবিকে উপেক্ষা করে ভারতকে ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন মর্যাদা দেওয়ার বহু পুরনো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ প্রস্তাবটিকে জোরালোভাবে উত্থাপন করার জন্য গান্ধীজী ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবকে কঠোরভাবে সমালোচনা করে এবং এই প্রস্তাবকে তিনি “ধ্বংস মুখ ব্যাংকের নামে ভবিষ্যৎ তারিখের চেক” বলে চিহ্নিত করেছেন। এরকমভাবে গান্ধীজী কর্তৃক ক্রিপস মিশন প্রত্যাখ্যান হলে গোটা কংগ্রেস ক্রিপস মিশনকে প্রত্যাখ্যান করে।

    মুসলিম লীগও ক্রিপস মিশনকে প্রত্যাখ্যান করে কারণ মিস্টার ক্রিপস কংগ্রেসের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছিল এই ছিল মুসলিম লীগের অভিযোগ। মিস্টার জিন্না মনে করেছিলেন যে ক্রিপস মিশন ভারতে স্বাধীনতা বিষয়ক রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে আলোচনায় মুসলিম লীগকে মোটেই গুরুত্ব দেননি। তিনি সরাসরি ক্রিপস মিশনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন যে মুসলিম লীগকে টেক্কা দিয়ে কংগ্রেসের সাথে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ গড়ে তুলেছিল। এইজন্য ক্রিপস মিশনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল মুসলিম লীগ। Read  - Sad story in Hindi 

উপসংহার :- কিন্তু তবুও আমাদের স্বীকার করতে হয় যে চূড়ান্ত পরিণামে ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হয়ে গেলেও এই ব্যর্থতা থেকে ভারতবাসীর মনে স্বাধীনতার চেতনা ও মুক্তির স্পৃহা এই লক্ষ্যে বলিষ্ঠ মুক্তির সংগ্রাম গড়ে তোলার চেতনায় সুদৃঢ় হয়ে ওঠে। আর এর ফলে 1942 সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই ভাবেই ক্রিপস মিশন ভারতীয় জনগণের মুক্তির স্পৃহা ও আলোরনময়ী চেতনাকে উদ্দীপিত করে তোলে। এখানেই নিহিত রয়েছে ক্রিপস মিশনের মহিমান্বিত তাৎপর্য।

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের অন্য সকল প্রশ্ন ও উত্তর :