মঙ্গলকাব্য কি ? মঙ্গলকাব্য সৃষ্টির কারণ আলোচনা - pdf

   মধ্যযুগের উল্লেখযোগ্য বাংলা সাহিত্য গুলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো মঙ্গলকাব্য। বিভিন্ন দেব দেবীর কাহিনী ও মাহাত্ম্য ব্যঞ্জক বিষয় নিয়ে রচিত হয়েছিল এই সকল মঙ্গলকাব্য গুলি। সমগ্র মধ্যযুগ জুড়ে বিভিন্ন ধারার ও বিভিন্ন প্রকারের মঙ্গলকাব্য পাওয়া যায়। এই সকল মঙ্গলকাব্য গুলি সৃষ্টির পিছনে যে কারণগুলি খুব উল্লেখযোগ্য বাংলা সাহিত্যে তাঁর যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। এই কারণে মঙ্গলকাব্য সৃষ্টির বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

মঙ্গলকাব্য কি ? মঙ্গলকাব্য সৃষ্টির কারণ আলোচনা
Educostudy.in/মঙ্গলকাব্য 


মঙ্গলকাব্য সৃষ্টির কারণ


রাজনৈতিক কারণঃ

   তুর্কি আক্রমণের পরবর্তীকালে বাংলায় এক বিশেষ ধরণের পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল যে পরিবর্তনের সুর বাঁধা হয়েছিল প্রথাগত হিন্দু সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় হিন্দুর বদলে মুসলিম সামন্তের আবির্ভাবে। স্বাভাবিকভাবে তুর্ক-পাঠান শাসকরা বাংলার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে হাতে নিলেন। তার ফলে দেখা গেল হিন্দু মুসলিম রাষ্ট্রিক সংঘর্ষ, যার মধ্যে হিন্দু শাসকরা প্রত্যক্ষত মুসলিম শাসকদের সঙ্গে বা বিপরীত ভাবে মুসলিম শাসকরা হিন্দু শাসকদের সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতা বা নেতৃত্ব দখলে অবতীর্ণ হল।


   ফলত রাজনৈতিক জীবনে এক অস্থিরতা সৃষ্টি হল। নতুন শাসকদলের আগমনে বাংলায় সামাজিক জীবনে এক ভিন্ন স্বাদ ছড়িয়ে গেল। মঙ্গলকাব্য উদ্ভবের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক ভূমিকা ছিল এই যে হঠাৎ করে গতানুগতিক হিন্দু সমাজ লক্ষ করল এই পরিবর্তনের ফলে যে নতুন বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে শক্তি বা ক্ষমতার দিক থেকে তারা অসহায় এবং অনেকতা পরাধীন। সেই রাষ্ট্রিক দুর্যোগ থেকে মুক্তি পেতে নিজেদের শক্তির প্রতি যখন অবিশ্বাস জন্মাল তখন তারা দেবতার কাছে শক্তিলাভের প্রত্যাশায় সাধনায় বসল।


সামাজিক কারণঃ

    বল্লালী বাংলা সমাজে বর্ণবিভেদের জন্য উচ্চ ও নিম্ন এই দুই বর্ণের আবির্ভাব হয়েছিল জন্ম বা কুলসূত্রে। উচ্চবর্গের মানুষেরা ধর্মের নামে, শাস্ত্রের প্রথার নামে নিম্নবর্গের মানুষদের উপর যৎপরোনাস্তি অত্যাচার করে চলল। নতুন মুসলমান শাসকগোষ্ঠী এসে নিম্নবর্গের মানুষদের ইসলামধর্মে দীক্ষিত করে বোঝাবার চেষ্টা করল যে তাদের জীবনের দুর্বিপাক ও দুর্যোগ কেটে যাবে।


প্রশ্নটির উত্তর পিডিএফ আকারে পেতে এখানে ক্লিক করুন 

 এই প্রতিশ্রুতির ফলে সমাজে যখন শুরু হল ধর্মান্তর, তখন উঁচুবর্গের মানুষেরা বুঝল নীচু বলে যাদের নিচে ফেলা হয়েছে তাদের কাছে টানতে হবে। আপন করতে হবে নতুবা দেশীয় সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে। মঙ্গলকাব্যের উদ্ভব নিম্ন উচ্চের বিভেদ মোচনের এক নির্মীয়মান সমাজে যার দৃষ্টান্ত প্রথম দিকের অনেক মঙ্গলকাব্যে ছড়িয়ে আছে।


অর্থনৈতিক কারণঃ

    নদীমাতৃক বাংলার মানুষ চিরদিনই কৃষিনির্ভর জীবিকায় জীবনযাপন করত। মুসলিম শাসকের আগমনেও এই জীবনধারায় কোন পরিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু অর্থনোইতিক ব্যবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই একটা নতুন পদ্ধতি প্রবর্তিত হচ্ছিল, যেখানে জমি পরিমাপ করা হচ্ছে, জমির বন্দোব্যস্ত দেওয়া হচ্ছে। জমিদারের সঙ্গে কৃষকের সম্পর্কের নতুন চিন্তাভাবনা, মুদ্রাব্যবস্থার সুফল কুফল দুই-ই আছে। দরিদ্র কৃষকের উন্নতির কথা কেউ ভাবেনি। সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকেই গেছে। এই অর্থনৈতিক বৈষম্য কবি কল্পনায় দেবমঙ্গল বা মনসামঙ্গলে স্পষ্ট ভাবেই আছে।


সাংস্কৃতিক কারণঃ

    এক নতুন সাংস্কৃতিক আবহাওয়া যখন সৃষ্টি হয়েছিল তখন হিন্দু পুরাণে দুটি ধারা এসে মিলিত হল। এক-অহিন্দু, দুই-মুসলিম। এই ধারায় বৌদ্ধসংস্কৃতি এল, এল উপজাতীয় সংস্কৃতি। এতদিন পর্যন্ত হিন্দুর শিব, সূর্য, রুদ্র, চণ্ডী এদের রাজত্ব ছিল। এদের সঙ্গে অনার্য দেবতা এসে মিশে হিন্দু সংস্কৃতি অপরদিকে অহিন্দুর সংস্কৃতির মিলনে একটি বিমিশ্র সাংস্কৃতিক জীবন নির্মিত হল। তাই মঙ্গলকাব্যে চাণ্ডী থেকে চণ্ডী প্রভৃতি কত লৌকিক দেবদেবীর ভিড়। সমৃদ্ধ পুরাণ কথা উজান ঠেলে এই ঘাটে উপস্থিত হয়েছে এই নতুন কাব্যের কবিরাও তাদের গ্রহণ করেছে, পূজা করেছে।


👉👉   মঙ্গলকাব্য গুলি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ এই সকল মঙ্গলকাব্য গুলি স্বতোৎসারিত ভাবে সৃষ্টি হয়নি। কাব্যগুলি সৃষ্টির পিছনে যে সকল কারণগুলি গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে আমরা উপরে আলোচনা করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন বাংলা সাহিত্যের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পাওয়ার জন্য নিচে দেওয়া লিঙ্ক গুলোতে ক্লিক করতে পারেন।


প্রশ্নটির উত্তর পিডিএফ আকারে পেতে এখানে ক্লিক করুন