জ্ঞানদাস কে চন্ডীদাসের ভাবশিষ্য বলা হয় কেন। চন্ডীদাস ও জ্ঞানদাসের তুলনামূলক আলোচনা - pdf

    বৈষ্ণব পদাবলীতে কবি জ্ঞানদাস কে সাহিত্য সমালোচকেরা চন্ডীদাসের ভাবশিষ্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। আসলে জ্ঞানদাস ও চন্ডীদাসের ভাব ও কবিত্ব অনেক ক্ষেত্রে মিলেমিশে একাকার হয়েছে। এই কারণেই স্বভাবতই এই দুই বৈষ্ণব কবির মধ্যে কিছু সাযুজ্য লক্ষ্য করা যায়। আমরা এখানে আলোচনা করব কেন জ্ঞানদাস কে চন্ডীদাসের ভাবশিষ্য বলা হয় এবং চন্ডীদাস - জ্ঞানদাস এর তুলনামূলক আলোচনা। 

জ্ঞানদাস কে চন্ডীদাসের ভাবশিষ্য বলা হয় কেন
Educostudy.In/জ্ঞানদাস ও চন্ডীদাস


চণ্ডীদাস ও জ্ঞানদাসের তুলনামূলক আলোচনা


অনেকেই জ্ঞানদাসকে চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য বা উত্তরসাধক মনে করেছেন। কিন্তু আমরা যেন ভুলে না যাই এর অর্থ এই নয় যে সবক্ষেত্রেই জ্ঞানদাস চণ্ডীদাসের পদাবলী অনুসরণ করে চলেছেন। ভাবে-ভাষায় প্রকাশরীতিতে এমনকি গঠনকৌশলের দিকেও উভয়ের সাদৃশ্য আছে। দুজনেই সহজ ভাষায় সহজ ভাবের অনাড়ম্বর কবি। 


 দুজনের রাধাই অনুভূতির প্রগাঢ়তায় দুঃখের অতলান্ত গভীরতায় মানবজীবনের সীমানা ছাড়িয়ে ভাবাদর্শের ঊর্ধ্বলোকে বিচরণ করেন। রূপানুরাগ পর্যায়ের পদে কিন্তু জ্ঞানদাস চণ্ডীদাসের থেকে আলাদা। চণ্ডীদাসের রাধা কৃষ্ণের রূপ বর্ণনায় সাধিকা। জ্ঞানদাসের রাধার এই আত্মবিস্মৃতি নেই।


  তাই চণ্ডীদাসের রাধা – এলাইয়া বেণী ফুলের গাঁথুনি’ – চুল খসিয়ে সেখানেই যখন কৃষ্ণকে খোঁজেন তখন জ্ঞানদাসের রাধা রূপদর্শনের উল্লাসে বলে ওঠেন –‘এক অঙ্গে এত রূপ নয়নে না ধরে’। চণ্ডীদাসের রাধার নিরাভরণ ভঙ্গীটুকু রেখেও জ্ঞানদাসের রাধা দেহচেতনা বিবিক্ত নয়। দেহমিলনের আকুতি তার কণ্ঠে আছে – ‘প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর’।


   মিলনের পর্যায়ে চণ্ডীদাসের কোন পদ নেই। জীবনের দুঃখগভীর যার অনুভূতির ইন্দ্রজালে ধরা পড়ে, মিলনের আনন্দঘন মুহূর্ত তিনি যে বর্ণনা করবেন না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জ্ঞানদাসের রাধা তার প্রেমিকসত্তার আবেগকে দেহকেন্দ্রিক উন্মোচন দিতে পেরেছেন বলেই জ্ঞানদাসের মিলনের পদে কাব্যসৌন্দর্যের রসলোকের মধুর উপলব্ধি ধরা আছে। চণ্ডীদাসের রাধা তার প্রেমের স্বরূপ প্রকাশ করতে গিয়ে বলছেন –


এক তনু হইয়া মোরা রজনী গোঁঙাই
সুখের সাগরে ডুবি অবধি না সই।


জ্ঞানদাসের রাধাও প্রায় একই সুরে বলেন –


আসলে চণ্ডীদাস এবং জ্ঞানদাস উভয়েই বেদনার কবি উভয়েই ভাবতন্ময়। কিন্তু চণ্ডীদাসের রাধা যেখানে আদ্যন্ত বিষাদপ্রতিমা, জ্ঞানদাসের রাধা সেখানে কখনো আনন্দমূর্তি, কখনও বেদনাময়ী। চণ্ডীদাস শিল্পসৃষ্টিতে যতটা উদাসীন জ্ঞানদাস ততটা নন। রূপের সাগরে ডুবে চণ্ডীদাস অরূপরতন সন্ধান করেছেন। রূপের মর্ত্যভূমি থেকে জ্ঞানদাস অরূপলোকের সঙ্গে সেতুবন্ধন করিয়েছেন।