বাংলা সাহিত্যের সূচনা হয়েছিল চর্যাপদ এর হাত ধরে সেই প্রাচীন যুগে তারপর সেই চর্যাপদ এর বিভিন্ন ভাষা ভাব সমাজ রীতিনীতি সব কিছু পরিবর্তিত হয়ে আজকের বাংলা তে পরিণত হয়েছে তাই বাংলা ভাষার সাহিত্যে চর্যাপদ এর অবদান অনস্বীকার্য।
|
Educostudy.in/Charjapad |
চর্যাপদ থেকে যে সকল প্রশ্ন BA ক্লাস বা মাস্টার ডিগ্রির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হল যে সকল প্রশ্ন নিয়ে এখানে চর্যাপদ থেকে আলোচনা করা হবে সেগুলি নিচে লেখা হলো তোমরা প্রয়োজন অনুসারে প্রশ্নটিই লিখে নিতে পারো।
- চর্যাপদে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে তার নাম কি ? এই ভাষার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ ।
- চর্যাপদের ধর্মতত্ত্ব বিশ্লেষিত হয়েছে তা আলোচনা করো।
- চর্যাপদের সাহিত্যমূল্য বিচার করো ।
- চর্যাপদে সমকালীন সমাজ জীবনের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা আলোচনা করো।
চর্যাপদে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে তার নাম কি ? এই ভাষার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ ।
ভাষাতাত্ত্বিক দের মতে মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাচীন যুগে এই বাংলা ভাষার একমাত্র নিদর্শন হল চর্যাপদ। চর্যাপদের ভাষা বাংলা ভাষা হলেও হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় এর রহস্যময়তার জন্য নাম দিয়েছেন সান্ধ্য ভাষা এবং প্রবোধচন্দ্র বাগচী এর নাম দিয়েছেন সন্ধ্যা ভাষা। যার অর্থ হলো সম্যকভাবে যাকে অনুধাবন করা যায়। চর্যাপদের এই ভাষায় যে সকল বৈশিষ্ট্য গুলি ছিল তা হল -
- এর, অর বিভক্তির দ্বারা সম্বন্ধ পদের সৃষ্টি হয়েছে।
- গৌণ কর্ম সম্প্রদানে রে, কে, ক বিভক্তির ব্যবহার দেখা যায়।
- তে বিভক্তি দিয়ে অধিকরণ এর অর্থ প্রকাশ।
- মাঝ, অন্তর, ইত্যাদি অনুস্বর্গ পদ রূপে ব্যবহার।
- ইল যোগে অতীতকালের ক্রিয়াপদ গঠন।
- ইব যোগে ভবিষ্যৎকালের পদ গঠন।
- ইলে, ইতে, ইয়া যোগে অসমাপিকা পদ সৃষ্টি।
- চর্যাপদ এ বাংলা ভাষার নিজস্ব বিশিষ্ট ইডিয়ম প্রয়োগের নিদর্শন প্রচুর।
- চার্জার ভাষায় অর্বাচীন অপভ্রংশ ভাষায় কিছু চিহ্ন আছে।
চর্যাপদের ধর্মতত্ত্ব বিশ্লেষিত হয়েছে তা আলোচনা করো।
বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পর বুদ্ধদেবের বাণী ও আদর্শ নিয়ে মতভেদ হয় এর ফলে হীনযান ও মহাযান নামে দুটি দল বিভক্ত হয়ে যায়। মহাযান সম্প্রদায় আবার বজ্রযান ও সহজযান এই দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। এই সহজ জানি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাধনার সংগীত হলো চর্যাপদ। চর্যাপদে সহজিয়াদের সাধনতত্ত্ব বিবৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে বদি চিত্রের বৈশিষ্ট্য হলো তিনি করুণা ও আনন্দময়।
এই করুণা ও আনন্দের সহজাত বোধ নিয়েই সহজিয়াদের সাধনা। দেহ সাধনার দ্বারা সিদ্ধাচার্য রা জন্ম মৃত্যু ও জাগতিক সুখ-দুঃখের অতীত নির্বিকল্প সুখ উপভোগ করতে চান। মহাসুখ বা নির্বাণ লাভেই নির্বাণ লাভের মূল সাধনা। তাদের মতে এই মহাসুখ লাভ করতে গেলে গ্রুপে অবলম্বন করতে হবে।
মানুষের দেহের প্রধান তিনটি নাড়ি আছে। এই তিনটি নাড়ি হলো - ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না। ইড়া-পিঙ্গলা গতি হল নিম্নাভিমুখী আর সুষুম্না গতি হলো নাবি দেশ থেকে মস্তিষ্কের ঊর্ধ্ব দিকে। ইড়া পিঙ্গলা, সুষুম্না কে সবসময় নিম্ন দিকে টেনে রাখে । সাধক ইড়া পিঙ্গলার প্রভাব থেকে সুষুম্না কে মুক্ত করে মস্তিষ্কের ঊর্ধ্ব দিকে নিয়ে যায় এর ফলে মহা সুখ লাভ হয়। সমস্ত চর্যাপদের পদগুলো তে আলো-আঁধারি ভাষায় বৌদ্ধ সাধকদের এই সাধনার ধর্ম তত্ত্বটি প্রকাশিত হয়েছে।
চর্যাপদের সাহিত্যমূল্য বিচার করো ।
সহজিয়াপন্থী নামে পরিচিত একশণীর বৌদ্ধ সাধক তাদের সাধনার গুঢ় তত্ত্ব কে লৌকিক জীবনের আধারে রূপক ও সংকেত এর সাহায্যে প্রকাশ করতেই চর্যাপদ রচনা করেছিলেন। তাই চর্যাপদ ধর্ম বিষয়ক রচনা হলেও গানগুলির সাহিত্যমূল্য কে একেবারে অস্বীকার করা যায় না।
বহুবিচিত্র অনুভব ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় চর্যাপদ এ , যার কোন কোন একটি পদ মানবিক আবেদনে রসসিক্ত। যেমন কুক্কুরী পাদের একটি পদে পাওয়া যায় -
"ফেটলিউ গো মাত্র অন্ত উড়ি চাহি"।
- অর্থাৎ মাগো আমি প্রসব করেছি এখন দরকার একটি আঁতুড়ঘরের। দুখিনী নারীর এই কাতর আর্তি একালের পাঠকের মনকে ছুঁয়ে যায়। আবার ঢেন ঢোন পাদের একটি পদে আমরা দেখতে পাই নিঃসঙ্গ আর বিড়ম্বিত জীবন কত বেদনার -
টালত মোর ঘর নাহি পড়বেষী।
হাড়িত ভাত নাহি নীতি আবেশী।।
চর্যাপদ গুলি মূলত গান হওয়ার ছন্দের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও এর শিথিলতা আছে। তা সত্ত্বেও প্রাকৃত পাদাকুলক ছন্দের আদর্শকে যথাসম্ভব অনুসরণের চেষ্টা এই পদ গুলির মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। কাজেই পদের আঙ্গিক সম্পর্কে পদকর্তা যে সচেতন ছিলেন এ কথা বলা যেতেই পারে।
সব মিলিয়ে চর্যাপদ কে উৎকৃষ্টমানের কাব্যের মর্যাদা না দিলেও বলা যায় ধর্মতত্ত্বের কাঠিন্য ভেদ করে তার মধ্যে কাব্যরসের উৎস ধারা প্রবাহিত হয়েছে। আর বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন রূপে নয় তার সমাজ দর্শন বাংলা সাহিত্যকে পথ দেখাতে যথেষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে
চর্যাপদ দিয়ে যার পথ চলা শুরু আধুনিক যুগেও সেই চর্যাপদের নতুন নতুন করে সৃষ্টি হয় কাব্যকলা লাভ করেছে।
চর্যাপদের ভাব আর ভাষা এযুগের কবিরাও অনুকরণ করেছে। যেমন চর্যাপদের দ্ব্যর্থকতা আমরা মধ্যযুগের কাব্য কবিতা এমনকি আধুনিক যুগের আধুনিক কবিতা গুলির মধ্যে লক্ষ্য করতে পারি। চর্যাপদ শুধু প্রাচীন যুগের কাব্যকলা নয় তা আধুনিক যুগের কাব্য কলার প্রাণপুরুষ। চর্যাপদে যে সমাজ দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে তা পরবর্তী বাংলা দেশের সমাজকে বর্ণনা করতে সাহায্য করেছে।
যদি সাহিত্য সমাজের দর্পণ হয়ে থাকে তবে চর্যাপদ সাহিত্যের প্রাণ রূপে সমস্ত সমাজের ইতিহাসকে সাহিত্যের মধ্যে তুলে ধরেছে । তাই সে দিক থেকে বিচার করলে চর্যাপদ প্রাচীন সাহিত্যের একমাত্র নিদর্শনই নয় তা বাংলা সাহিত্যের এক মাইলফলক তারপর দাঁড়িয়ে সাহিত্য এত গৌরব লাভ করেছে।
চর্যাপদে সমকালীন সমাজ জীবনের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা আলোচনা করো।
বিশুদ্ধ সাহিত্য সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে চর্যাপদ রচিত না হলেও চর্যাপদের কবিগণ বাস্তব জীবনের বিভিন্ন চিত্র কে রুপক হিসাবে ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন চার্জার পদগুলিতে। সমাজের বিভিন্ন রীতিনীতি সংস্কার সাহিত্যের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে। প্রাচীন যুগের সময় কালে বাংলার জনজাতি বিভিন্ন শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হলে সে কাহিনী যে কোন সাহিত্যে উঠে আসবে না তা কখনো হতে পারে না।
এই কারণেই খুব স্বাভাবিকভাবেই সমাজের বিভিন্ন ঘটনা
চর্যাপদ এর বিভিন্ন পদে বারবার উঠে এসেছে। যদিও থাকে বৌদ্ধ সহজিয়া পন্থীরা দ্ব্যর্থবোধক ভাষায় পদগুলিতে উল্লেখ করেছেন তবুও তার মধ্যে আমরা চর্যাপদের সমকালীন সমাজ জীবন কে পরিস্কার ভাবে উপলব্ধি করতে পারি। চর্যাপদ গুলিতে সেই সময়কার সমাজ জীবনের যেসকল রীতিনীতি প্রথা ধরা পড়েছে সে গুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো -
বর্ণভেদ :: চর্যাপদের পদ গুলিতে নিম্নবর্গীয় মানুষের জীবনযাপন সংক্রান্ত তথ্যই বেশি প্রতিফলিত হয়েছে। নিচু জাতি রা যেমন ডোম, শবর ইত্যাদি চর্যাপদ এর স্থান পেয়েছে ঠিক তেমনভাবে উচু জাতির কথাও চর্যাপদ বিবৃত করা হয়েছে। চর্যাপদ থেকে জানা যায় নিচু শ্রেণীর মানুষেরা সমাজের উঁচু স্তর থেকে দূরে বসবাস করত। এমনকি তারা পাহাড়ের ঢালে ঘর বেঁধে বসবাস করত। সমাজের উঁচু বর্ণের মানুষেরা এইসব নিম্নবর্ণের মানুষদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করত।
জীবিকা :: প্রাচীন বাংলার মানুষের যে কয়েকটি জীবিকার উল্লেখ আছে এই গ্রন্থে তা হল - তাঁত বোনা, চাঙ্গারি তৈরি, পশু শিকার করা, নৌকা বাওয়া, মাছধরা, মদ তৈরী জঙ্গলের গাছ কাটা প্রভৃতি।
আহার্য :: চর্যাপদের সমাজ ও আজকের দিনের সাধারণ বাঙালি সমাজের মত ছিল তা সেই সময়কার খাবার-দাবারের পরিচয় জানলে খুব সহজেই বোঝা যায়। তখনকার দিনে প্রধান খাদ্য হিসাবে ভাত ছিল। আর দুধ মাছ ও মাংসের উল্লেখ পাওয়া যায় বিভিন্ন চর্যাপদ এর মধ্যে।
বিনোদন :: বিভিন্ন চর্যাপদে বারবার বিনোদনের বিষয়টিকে দেখা গেছে। সমাজ জীবনে যেমন দুঃখ ছিল কষ্ট ছিল ঠিক তেমনি এই বিনোদন থেকে দেখে মনে করা হয় তারা সমাজ জীবনের মধ্যে সবকিছু সঙ্গে বিনোদন কেউ এক করে নিয়েছিল। সেকালে মাদল, পটোহ, ডমরু, বাঁশি,একতারা, বীণা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র ছিল। অবসর বিনোদনের জন্য নব বল বা দাবা খেলা হতো।
দৈনন্দিন উপকরণ :: সেকালের একান্নবর্তী পরিবার গুলির দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় উপকরণ রূপে ব্যবহৃত হতো কুঠার, আয়না, তালা চাবি, হারি প্রভৃতি।
উৎসব অনুষ্ঠান :: চর্যাপদ এর যুগে বাজনা বাজিয়ে বরের বিবাহ করতে যাওয়ার প্রচলন ছিল। এমনকি যৌতুক প্রথার উল্লেখ পাওয়া যায়। সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবে নাচ গান ও অভিনয়ের প্রচলন ছিল। একটি পদে নাটকের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চৌর্যবৃত্তি :: আলো-আঁধারি ভাষায়
চর্যাপদ এর কয়েকটি পদে বিভিন্ন ভাবে চুরি মূলক আলোচনা করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় সেই সময়কার দিনেও চোর ডাকাতের উপদ্রব ছিল।
খুব ভালো, খুব উপকার হলো তথ্য গুলো পেয়ে
উত্তরমুছুনDhonyabad
মুছুনত
উত্তরমুছুনআমি যদি এখন নুতন প্রশ্ন করি তবে কি উওর দেবেন?
উত্তরমুছুনহ্যা, আপনি প্রশ্ন দিন
মুছুনjomok ar utprakha ki
উত্তরমুছুনরবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা তে মাস্টার ডিগ্রী পড়ছি প্রথম বর্ষ (২০২০-২০২১) । পরীক্ষায় আসন্ন কিছু প্রশ্ন উত্তর সাজেশন দিতে পারলে খুব উপকৃত হব 🙏
উত্তরমুছুনCharyapader ashol nam ki
উত্তরমুছুনDownload korbo ki bhabe
উত্তরমুছুনচর্যাপদের কয়েকটি পদের কাব্যসৌন্দর্য্য আলোচনা করো ।।
উত্তরমুছুনAii question tar ans akhon dite parben ???