বৈষ্ণব পদাবলীর অনুরাগ কি ? বৈষ্ণব পদাবলীর অনুরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি সম্পর্কে আলোচনা করো - pdf

    বৈষ্ণব পদাবলীর অন্যতম একটি পর্ব অনুরাগ পূর্বরাগের পরে ঘটে। অনুরাগ বিষয়টি রাধা এবং কৃষ্ণ উভয়ই হতে পারে। এখানে আমরা আজ বৈষ্ণব পদাবলীর অনুরাগ কি এবং এই অনুরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি সম্পর্কে বিশেষ আলোচনা করে জেনে নেব। যদি এই নোট আপনার প্রয়োজন হয় তবে আপনি খাতায় লিখে নিতে পারেন। এছাড়াও বৈষ্ণব পদাবলী নিয়ে বিশেষ আলোচনা আমাদের ওয়েবসাইটে এর আগে প্রকাশিত হয়েছে। Onurag



অনুরাগ কি ? 


  শ্রীরূপগোস্বামী তাঁর ‘উজ্জ্বলনীলমণি গ্রন্থে অনুরাগের সংজ্ঞা দিয়েছেন এইভাবে –


“সদানুভূতমপি যঃ কুর্য়ান্নবনবং প্রিয়ম্‌
রাগো ভবন্নবনবঃ সোহনুরাগ ইতীর্থতে।”

অনুরাগ কি ?  বৈষ্ণব পদাবলীর অনুরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি
Educostudy.in/অনুরাগ 


(অর্থাৎ যে রাগ নিত্য নবায়মান হয়ে সর্বদা অনুভূত প্রিয়জনকেও নতুনভাবে অনুভব করিয়ে প্রেমকে নবীনতা দেয় তাকেই বলে অনুরাগ।) বৈষ্ণব শাস্ত্র অনুসারে এই অনুরাগের চারটি লক্ষণ –


  1. পরস্পর বশীভাব
  2. প্রেম বৈচিত্র্য বা আক্ষেপানুরাগ
  3. অপ্রাণীতেও জন্মলাভের বাসনা
  4. বিরহের বিষণ্ণ অবস্থাতেও কৃষ্ণের অনুভব।

অনুরাগে প্রেম চিরনবীন। যে প্রিয়জনকে দিনরাত দেখতে পাওয়া যায়, যাকে চিনতে কখনই অসুবিধা হয় না, ভালোবাসার আকুলতা তাকেই আপন করে নেওয়ার প্রবল আবেগ এই কবিতার মূল কথা। এখানে ভালোবাসা কখনই বিমর্ষ নয়, কখনই দুর্বল নয়। সমস্ত বিঘ্নবিপদ তুচ্ছ করে কৃষ্ণের সাথে মিলনের জন্যে এক প্রবল আকুতি অনুরাগ পর্যায়ের পদগুলিতে প্রেমকে দেহের সীমা ছাড়িয়ে এক অশরীরী আবেদনে উত্তীর্ণ করে দিয়েছে।



অনুরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি


অনুরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি নিঃসন্দেহে জ্ঞানদাস। তাঁর রূপানুরাগের পদ এককথায় অসামান্য। কৃষ্ণরূপে আকৃষ্ট রাধা কৃষ্ণের অমিয় রূপ দর্শনের ইচ্ছায় চোখ দিয়ে জল ঝরে পড়ছে। কৃষ্ণের প্রতিটি অঙ্গের অনয়ে রাধার প্রতিটি অঙ্গ ক্রন্দনাতুর। এই অন্তহীন প্রেমরক্ত বাসনার অপূর্ব আর্তস্বর যেন নিখিল মানবের অসীম ভালোবাসার সমুদ্র মন্থন করে এক মানবী কণ্ঠে ধরা দিয়েছে। রাধা ও কৃষ্ণ একাত্ম, এক সত্তা।


  বিধাতার ভুলেই যেন দুই ভিন্ন দেহ সৃষ্টি। জ্ঞানদাস দ্বৈত ও অদ্বৈতভাবের অভিব্যক্তিতে সমস্ত শাস্ত্র ধর্ম দর্শনকে জীবনের রসে পরিপূর্ণ করে তুলেছেন। প্রেমের অভিন্নাত্মক ভাবপ্রকাশে জ্ঞানদাস ব্যাখ্যাতীত অনির্বচনীয়তাকে রসসিক্ত করে তুলেছেন –


“রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুনে মন ভোর।
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর।।
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে।
পরাণ পীরিতি লাগি থির নাহি বান্ধে।।”


জ্ঞানদাস এভাবেই বেদনার কণ্টকবৃত্তে পদ্মপুষ্পের সৌন্দর্য মাধুর্য সুবিস্তৃত করে দিয়েছেন। রাধা-কৃষ্ণকে একান্ত আপন করে নিতে চেয়েছেন। এমনকি এজন্যে তিনি কৃষ্ণের প্রতি তীব্র অনুযোগ করেছেন মৃদু স্বরে –


“অন্যের আছয়ে 		অনেক জনা
আমার কেবলি তুমি
শিশুকাল হৈতে  		মায়ের সোহাগে
সোহাগিনী বড় আমি।”

রাধার জীবনের সুখ-দুঃখ ইহকালের পরম সাথী একমাত্র কৃষ্ণই। কৃষ্ণপ্রেমে জীবনে সার্থকতা অর্জনের জন্য রাধা সুঃখের সাধনা করেছেন। কিন্তু সব সময়ই বিপরীত ফল ফলেছে- কাঙ্ক্ষিত আশা মেটেনি। অথচ রাধার কৃষ্ণরূপ দর্শনের আকাঙ্ক্ষায়, গভীর প্রেমানুভূতিতে, অলংকার বিরল ভাবতন্ময়তায় কবির রচিত পদগুলি ময়ূরের মতো শত বরণের ভাবোচ্ছ্বাসে কলাপ বিস্তার করেছে।


 কৃষ্ণের দর্শন, স্পর্শন পাওয়ার জন্য, কৃষ্ণের মধুঝরা লঘু হাস্য দেখার জন্যে রাধার শরীর ব্যাকুল। সমাজের মাঝখানে সতর্ক গুরুজনদের প্রহরায়, সখীদের আনন্দিত উপস্থিতিতে সর্বত্রই কেবল কৃষ্ণ প্রসঙ্গে রাধার শরীর রোমাঞ্চিত। সেই আনন্দ গোপনের চেষ্টা আরো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে অনর্গল আনন্দ অশ্রুতে। রাধার মর্ত্যচারীপ্রেম এই উপলব্ধির গভীরতায় দেহের দেহলীতে দাঁড়িয়েও দেহাতীত ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে তা এই দুই পংক্তিতে পরিস্ফুট –


“দেখিতে যে সুখ ওঠে কি বলিব তা।
দরশ পরশ লাগি আউলাইছে গা।।”


প্রশ্নটির উত্তর পিডিএফ আকারে পেতে এখানে ক্লিক করুন 

এই প্রেম অতল গভীর মর্মস্পর্শী অলৌকিক প্রেম। এই প্রেম জাগতিক সুখ শান্তি দেয় না। এই প্রেম অসীম অতল হৃদয় রহস্যের ব্যাপার বলে এতে এক যন্ত্রণাকর শূন্যতায় প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে কোথায় মিলিয়ে যায়। তাই অলংকার বিরল এই কয়েকটি পংক্তিতে ইন্দ্রিয়লব্ধ প্রেমানুভূতি এক অতীন্দ্রিয় মহিমা লাভ করেছে। প্রতিমুহূর্তে জপের মাধ্যমে জাপকের প্রেমের যে আকুতিকে বেদনা মাধুরীর রসায়নে প্রকাশ করেছেন কবি, সাহিত্যে তা বিরল দর্শন। তাই অনুরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠত্বের অবিসংবাদিত আসনটি জ্ঞানদাসের জন্যই রক্ষিত।


👉👉  বৈষ্ণব পদাবলীতে রাধা ও কৃষ্ণের অনুরাগ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় একটি পর্ব। রাধা ও কৃষ্ণের অনুরাগ কি এবং বৈষ্ণব পদাবলীতে অনুরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি সম্পর্কে উপরে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করেছি। এই আলোচনা থেকে আপনি একটি নোট নিজের ইচ্ছামত রচনা করতে পারেন। যদি আপনার ভালো লাগে অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এছাড়াও বাংলা সাহিত্যের অনান্য প্রশ্ন গুলি দেখুন।