কোঠারি কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, গঠন বা কাঠামো, পাঠক্রম এবং শিক্ষা কেন্দ্র সম্পর্কে আলোচনা।

প্রথাগত শিক্ষার দ্বিতীয় স্তর হলো মাধ্যমিক শিক্ষা। কোঠারি কমিশনের মতে এই শিক্ষা মানব জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর। এই কারণে কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কাঠামো পাঠক্রম এবং শিক্ষা কেন্দ্র সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হলো - 
কোঠারি কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, গঠন বা কাঠামো, পাঠক্রম এবং শিক্ষা কেন্দ্র সম্পর্কে আলোচনা।

কোঠারি কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য


দৈহিক বিকাশ :  দৈহিক বিকাশ যথাযথভাবে না হলে শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশ এর ক্ষেত্রে তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণে মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীদের দৈহিক বিকাশ ঘটানো।

নৈতিক বিকাশ :  সামাজিক রীতিনীতি বিশ্বাস আচার-আচরণ ও মূল্যবোধ প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকলে সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে চলা কঠিন তাই মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো নৈতিক শিক্ষা।

জাতীয়তাবাদের বিকাশ :  প্রতিটি শিক্ষার্থীর মানবজীবনে দেশাত্মবোধ জাতীয়তাবোধের বিকাশ অত্যন্ত জরুরী। এই জাতীয়তাবোধের বিকাশ এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী নিজেকে দেশের জাতির অংশ হিসাবে মনে করতে পারে।

সুনাগরিক বোধের বিকাশ :  নাগরিক হলো দেশের বড় সম্পদ এই সম্পদ এর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ এর প্রয়োজন তাই মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক করে গড়ে তোলা।

সামাজিক বিকাশ :  মানুষ হিসাবে আমরা সামাজিক জীব তাই সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধ থাকতে হয়। তাই মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হবে শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

পরিবেশ বোধের বিকাশ :  বর্তমানে পরিবেশ দূষণ এক বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই দূষিত পরিবেশ মানব জীবনকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিতে পারে তাই মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীদের কে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।



কোঠারি কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার গঠন / কাঠামো

কোঠারি কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার দুটি অংশ হবে যার একটি হলো নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে আর অন্যটি উচ্চতর মাধ্যমিক পর্যায়। প্রথম পর্যায়ে কি নবম ও দশম শ্রেণী কে নিয়ে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে টি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী কে নিয়ে গঠিত হয়েছে। কমিশনের মতে সারাদেশে এই মাধ্যমিকের স্তর হবে এক এবং অভিন্ন। 

     শিক্ষার্থীরা উচ্চতর প্রাথমিক শিক্ষার পর নিম্নতর নবম ও দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য সুযোগ পাবে এবং নিম্ন মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর তারা উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য সুযোগ পাবে। এই স্তরে কমিশন বৃত্তিমুখী এবং সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার কথা বলেছেন। কমিশনার ও স্পষ্ট করে বলেছে মাধ্যমিক শিক্ষা কিছুটা বৃত্তিমুখী হলে তা সুফল আনতে পারে। 



কোঠারি কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম

    কোঠারি কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম কে সমস্ত দেশে এক ও অভিন্ন করতে চেয়েছিল এবং তারই ফলশ্রুতিতে ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যকে লক্ষ্য রেখে যে শিক্ষার পাঠক্রম প্রচলন করেছিল তা নিম্নরূপ - 

     কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম কে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করেছিল -  ১) ভাষা বিভাগ  :  এই বিভাগে থাকবে মাতৃভাষা এবং দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি বা হিন্দি।
  ২) বিজ্ঞান বিভাগ :   এই বিভাগে থাকবে গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং জীবন বিজ্ঞান।
৩) সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগ :   এই বিভাগে থাকবে ইতিহাস ও ভূগোল বিষয় দুটি। এবং
৪) ঐচ্ছিক বিষয়ের বিভাগ :  এই বিভাগে শিক্ষার্থীরা উপরের তিনটি মূল বিষয়ের অন্তর্গত যেকোনো একটি বিষয় কি নিয়ে পড়তে পারবে।

      


কোঠারি কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান / শিক্ষা কেন্দ্র 

     কোঠারি কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান কে তিনটি মূল ভাগে ভাগ করে আলোচনা করেছে যে গুলি হল - 

দায়িত্ব নির্ভর প্রতিষ্ঠান :  এই বিভাগের অন্তর্গত দিবা বিদ্যালয় ও আবাসিক বিদ্যালয় গুলি।

লিঙ্গ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান :  এই বিভাগের মধ্যে অন্তর্গত পুরুষ শিক্ষার্থীদের আলাদা বিদ্যালয় মহিলার শিক্ষার্থীদের আলাদা বিদ্যালয় এবং সহশিক্ষা সংক্রান্ত বিদ্যালয়।

সময়কাল ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান :   সময়কাল ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

    এছাড়াও কমিশন অন্যকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তাদের তালিকায় রেখেছে যেগুলি হল পাবলিক স্কুল, সরকারি স্কুল, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল, বেসরকারি স্কুল, এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত স্কুল ইত্যাদি।