কোঠারি কমিশনের মতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, গঠন, পাঠক্রম ও শিক্ষাকেন্দ্র সম্পর্কে আলোচনা করো।

মাধ্যমিক শিক্ষার পরবর্তী পর্যায়ে আমরা সাধারণভাবে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পর্যায়ে বলে ধরে থাকি, এই শিক্ষার সময়কাল দুই বছর। কোঠারি কমিশনের মতে কেন্দ্রিক ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো - 
কোঠারি কমিশনের মতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, গঠন, পাঠক্রম ও শিক্ষাকেন্দ্র সম্পর্কে আলোচনা করো।

কোঠারি কমিশনের মতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ব্যাক্তি স্বাতন্ত্র্যের বিকাশ :   মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ, প্রবনতা, মানসিক ক্ষমতা প্রভৃতি গুণ অনুযায়ী তাদের পছন্দমতো বিভাগে নাম নথিভুক্ত করে ফলে ওই বিভাগের প্রতি তাদের ধনাত্মক মনোভাব সৃষ্টি হয়, যা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।

সৃজনশীলতার বিকাশ :   উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করে গড়ে তোলা। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার বিষয়গুলিতে সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশের সুযোগ থাকে যার ফলে শিক্ষার্থীরা উদ্দীপিত হয় এবং আত্মপ্রকাশের চাহিদা বৃদ্ধি ঘটায়।

স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা :   উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর করে তোলা। এই কারণে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম কে এমন ভাবে গড়ে তোলা হয় যাতে শিক্ষার্থী আর্থিক দিক থেকে স্বনির্ভর হতে পারে এবং ভবিষ্যত জীবনে স্বনির্ভর হওয়ার পথ প্রশস্ত করতে পারে।

জাতীয় সংহতির বিকাশ ঘটানো :   উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম এমনভাবে তৈরি করা হয় যে শিক্ষার্থীরা যাতে জাতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের মনকে ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে সুদুরপ্রসারী করে গড়ে তুলতে পারে যেখানে তাদের মনে আন্তর্জাতিকতাবাদের বিকাশ ঘটে।

সুনাগরিক গড়ে তোলা :   উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল মানব বন্ধন রচনা করে সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন ও সুনাগরিক গড়ে তোলা।

কর্মের বিকাশ :   উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে কর্মী তৈরি করা। তারা এই স্তরের পরবর্তী পর্যায়ে কারিগরি বিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, ও কৃষিবিদ্যা প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভবিষ্যতে বিশেষজ্ঞ কর্মী তে পরিণত হয়।


কোঠারি কমিশনের মতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামো 

     উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা মূলত দুই বছরের সময়কাল দুটি শ্রেণি নিয়ে গঠিত একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণী। এই দুটি শ্রেণীতে শিক্ষার্থীরা মূলত সতেরো আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারে এবং এই শিক্ষাস্তরের পরবর্তী পর্যায়ে উচ্চ স্তরের শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে সম্পন্ন হয়। দুটি স্তরে মূল্যায়ন ব্যবস্থা পৃথক পৃথক অর্থাৎ আলাদা আলাদা ভাবে মূল্যায়ন করা হয় এবং একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির বয়স 15 বছর এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তির বয়স 16 বছর। ( এই বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু পাঠক্রম এ থাকার জন্য আলোচনা করে দিলাম। )



কোঠারি কমিশনের মতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম

     উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম দুটি ভাগে বিভক্ত পরপর দুটি ভাগে আলোচনা করা হলো - 

                       সাধারণ ধরার পাঠক্রম

ভাষা বিভাগ :  এই বিভাগে একটি আধুনিক ভারতীয় ভাষা বা স্থানীয় মাতৃভাষা এবং অন্য একটি বিদেশী ভাষা বা অন্য ভাষা পড়তে হবে।

আবশ্যিক বিষয় :  এই বিভাগের মধ্যে পদার্থবিদ্যা রসায়ন জীব বিদ্যা ভূগোল পুষ্টিবিদ্যা কম্পিউটার বিজ্ঞান ইতিহাস শিক্ষাবিজ্ঞান রাষ্ট্রবিজ্ঞান দল থেকে নির্বাচিত যে কোন তিনটি বিষয় নিয়ে পড়তে হবে। ( এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এই সমস্ত সাবজেক্ট গুলি বংশগত বিজ্ঞান ও কলা ) 

অতিরিক্ত বিষয় :  শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা অনুযায়ী উপরে বর্ণিত যে কোন একটি বিষয় নিয়ে তারা অতিরিক্ত বিষয় হিসাবে পড়াশোনা করতে পারবে। 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী :   সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর অন্তর্গত কর্মশিক্ষা সমাজসেবা শারীর শিক্ষা প্রভৃতি ( যদিও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক তুলে নেওয়া হয়েছে ) ।


                        বৃত্তিমূলক ধরার পাঠক্রম

ভাষা বিভাগ :  এই বিভাগে আছে মাতৃভাষা আধুনিক ভারতীয় ভাষা সমূহ এবং আছে একটি বিদেশী ভাষা ইংরাজী বা অন্য যেকোন ভাষা প্রথম ভাষা ইংরেজি না হলেও ইংরেজি বিষয়টি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে নেওয়া বাধ্যতামূলক।

আবশ্যিক বিষয় :  এই বিভাগে থেকে পদার্থবিদ্যা রসায়নবিদ্যা জীব বিদ্যা অর্থনীতি দর্শন যে কোন তিনটি বিষয় নিতে হয়।

বৃত্তিমূলক বিষয় সমূহ :  এই বিভাগের ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা কৃষিবিজ্ঞান বয়ন শিল্প প্যারামেডিকেল ইত্যাদি এই সমস্ত বিষয়গুলিকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী :  সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী তে আছে কর্মশিক্ষা শারীর শিক্ষার সমাজ সেবা প্রভৃতি।

[ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম এই প্রশ্নটির উত্তর লিখতে গেলে প্রথমে নাম্বার কিভাবে দেখে নিতে হবে কারণ যদি নাম্বার 4 বা কম থাকে তবে তুমি যে কোন একটি বিষয় আলোচনা করলেই হবে কিন্তু নাম্বার যদি 6 বা বেশি থাকে তখন তোমাকে এই দুটো ধারায় বিভক্ত করে নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ]



কোঠারি কমিশনের মতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার শিক্ষা কেন্দ্র

 
   কোঠারি কমিশনের মতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার যে সমস্ত  প্রতিষ্ঠানসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে তাদেরকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করে নিয়ে আলোচনা করা হলো - 

লিঙ্গ ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ :  এই শ্রেণীর মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং সহশিক্ষা জন্য উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি বিদ্যালয়গুলির অন্তর্ভুক্ত হয়।

পরিচালনা ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ :  যে সমস্ত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কোনো না কোনো সংস্থা বা সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় সেগুলি এই শ্রেণীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যেমন সরকারি বিদ্যালয়, সরকার অনুমোদিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়, সরকার অনুমোদিত ডি, এ প্রাপ্ত বিদ্যালয় ইত্যাদি।

      এছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান' হল পাবলিক স্কুল, বেসরকারি বিদ্যালয়, ধর্মীয় সংস্থা পরিচালিত বিদ্যালয়, রাজ্য বোর্ড দ্বারা অনুমোদিত বিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় বোর্ড দ্বারা অনুমোদিত বিদ্যালয় ইত্যাদি।




অন্যান্য আরো সকল শিক্ষা বিজ্ঞানের প্রশ্ন :