কোঠারি কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, গঠন / কাঠামো, পাঠক্রম এবং শিক্ষা কেন্দ্র সম্পর্কে আলোচনা করো।

কোঠারি কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গঠন পাঠক্রম এবং শিক্ষা কেন্দ্র এই সমস্ত সম্পর্কে আলোচনা প্রথমে আমাদের জেনে নিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা কি বা কাকে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা বলে জানি। মানব জীবনের প্রথাগত শিক্ষার স্তর হলো এই প্রাথমিক শিক্ষক যা সাধারণত পাঁচ বছর থেকে 11 বা 12 বছর বয়স পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।  

কোঠারি কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, গঠন / কাঠামো,  পাঠক্রম এবং শিক্ষা কেন্দ্র সম্পর্কে আলোচনা করো।

কোঠারি কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

কোঠারি কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো - 

দৈহিক বিকাশ :  প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার মতোই প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও সময়কাল টি শৈশবকালের অন্তর্গত তাই এই সময়ে শিশুর দৈহিক বিকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হবে শিশুর দৈহিক বিকাশ গঠনে সহায়তা করা।

সামাজিক বিকাশ :   সমাজের মাঝেই শিশুর জন্ম এবং বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে, এমনকি কোনো শিশু ধীরে ধীরে পরিণত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয় সেটাও সমাজকে অবলম্বন করে। সেই কারণে প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত সামাজিকীকরণ।

বৌদ্ধিক বিকাশ :   শৈশবে শিশুরা চিন্তা করতে ভালোবাসে, এই সময়ে প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের এই চিন্তা শক্তির প্রসার ঘটানো এবং যুক্তি শক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটানো একান্তভাবে জরুরী। কারণ চিন্তা ও যুক্তির মাধ্যমে শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটে।

নৈতিক বিকাশ :  শৈশবে ধীরে ধীরে শিশুদের মধ্যে নীতিগত বিকাশ ঘটতে থাকে অর্থাৎ কোনটি ভালো কোনটি মন্দ সত্য-মিথ্যা এগুলো তারা বুঝতে শেখে। প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে অবশ্যই শিশুদের এই নৈতিক বিকাশ কে ত্বরান্বিত করতে হবে।

প্রতিভার বিকাশ :  শিশুদের মধ্যে প্রতিভা সুপ্ত অবস্থায় থাকে, প্রাথমিক শিক্ষা এমন ভাবে শিশুদের জীবনে বিস্তার লাভ করবে যার মাধ্যমে শিশুরা তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারবে।

ঐতিহ্যের বিকাশ :   আমরা ভারতবাসী হিসেবে আমাদের দেশ ঐতিহ্য পরিপূর্ণ আর অবশ্যই প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের কর্তব্য আমাদের দেশ সম্পর্কে জানার। প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের দেশের নানান ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারনা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।

ভাষার বিকাশ :   প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার মতোই প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ শৈশবে শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষার মাধ্যমে তাদের মনের ভাব ব্যক্ত করতে চায়।



কোঠারি কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষার গঠন / কাঠামো

 কোঠারি কমিশনের মতে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে এক - নিম্ন প্রাথমিক ও দুই - উচ্চ প্রাথমিক। এই প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামোটি কমিশনের মতে হবে নিম্ন প্রাথমিক পর্যায়ের। এর শিক্ষা কাল বা সময় কাল হবে 4 থেকে 5 বছর অর্থাৎ প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। আবার পরবর্তী পর্যায়ে উচ্চ প্রাথমিক স্তরের সময়কাল দুই থেকে তিন বছরের অর্থাৎ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। 



কোঠারি কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম

     কোঠারি কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম হবে বহুমুখী এবং তা গড়ে উঠবে পরিবেশের ও সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য নিয়ে। যদি বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা যায় তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম হবে মোটামুটি - এখানে থাকবে 1) পঠন-পাঠন মূলক বিষয় যার মধ্যে থাকবে মাতৃভাষা ইংরেজি অংক পরিবেশ পরিচিতি সম্পর্কে ইতিহাস ভূগোল ও বিজ্ঞান। 2) খেলাধুলা ও শরীরচর্চা মূলক বিষয় যার মধ্যে থাকবে সাধারণ খেলা, ছড়ার মাধ্যমে খেলা ইত্যাদি। 3) সৃজনশীলতা মূলক কার্যাবলী  যার মধ্যে থাকবে, ছবি আঁকা, কাাগোজের  কাজ ইত্যাদি।   4)  প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা মূলক কার্যাবলী   এর মধ্যে থাকবে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করা, বিভিন্ন উৎসব পালন, সমাজ সেবা ইত্যাদি।



কোঠারি কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষা কেন্দ্র

কোঠারি কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষা হবে বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর জন্য কমিশন যে সকল বিদ্যালয়ের কথা বলেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো -

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় :  এই প্রকার বিদ্যালয় গুলি সরকারনিয়ন্ত্রিত বিদ্যালয়, এখানকার শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য খরচ সরকার নিজেই বহন করে এমনকি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই বিনামূল্যে সরকার দান করে থাকে।

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় :  এই ধরনের বিদ্যালয় গুলি অবৈতনিক নয় যেহেতু বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয় তাই এখানে বেতন দিয়ে ও পাঠ্য বই কিনে পড়তে হয়।

বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয় :  1937 সালে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী বুনিয়াদি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়ে অনুবন্ধ পদ্ধতিতে শিক্ষাদান দেওয়া হয়। এই বিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটানো ও শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

প্রথামুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় :  আমাদের দেশ জনবহুল হবার জন্য এই ধরনের বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। এখানে ইচ্ছা অনুযায়ী সময়সূচী ও পাঠক্রম নির্বাচন করা হয় এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নৈশ বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন ধরনের সাক্ষরতা কেন্দ্র।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় :  আমাদের ভারত বর্ষ বহু জাতি ও বহু ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস স্থল। এই কারণে প্রায় সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে সেখানে গতানুগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম প্চারের জন্য শিক্ষা দিয়ে থাকে।



অন্যান্য আরো সকল শিক্ষা বিজ্ঞানের প্রশ্ন :