কোঠারি কমিশনের মতে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, গঠন, পাঠক্রম, এবং শিক্ষা কেন্দ্র সম্পর্কে আলোচনা।
|
|2
|
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কি ?
প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কে বলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। সাধারনত দুই বা আড়াই বছর থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত এই শিক্ষাকাল বিস্তৃত থাকে। এই শিক্ষা শিশুদের দৈহিক প্রাক্ষোভিক এবং বৌদ্ধিক বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোঠারি কমিশন বা ভারতীয় শিক্ষা কমিশন প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে সকল পদক্ষেপ এর কথা বলেছেন তা হল -
কোঠারি কমিশনের মতে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
১. দৈহিক বিকাশ : প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দৈহিক বিকাশ। দেহ সুস্থ হলে শিক্ষাগ্রহণে উপযোগীী হতে পারে এই কারণে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হবে শিশুর দৈহিক বিকাশ ঘটানো।
২. প্রাক্ষোভিক বিকাশ : প্রাক্ষোভিক বিকাশের ক্ষেত্রে শিশুদের রাগ ভয় উল্লাস প্রভৃতির বিকাশ ঘটে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এই সমস্ত প্রাক্ষোভিক বিকাশ গুলিতে নিয়ন্ত্রণ করাা একান্ত জরুরী।
৩. সামাজিক বিকাশ : প্রতিটি মানুষের সামাজিকীকরণ একটি অন্যতম শিক্ষনীয় বিষয়, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার মধ্য দিয়েে প্রতিটি শিক্ষার্থীদের সমাজ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারে যে আমরা সমাজেরই একটা অংশ।
৪. মানসিক বিকাশ : বিকাশের স্তর এই স্তরটি শিশুদের ক্ষেত্রেরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরে শিশুর মধ্যে কৌতুহল অনুসন্ধান প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়়।
৫. ভাষার বিকাশ : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ভাষার বিকাশ ঘটানো। মূলত স্তরটি হল ভাষা বিকাশের স্তর তাই যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে যথার্থভাবে ভাষার বিকাশ ঘটানোই হলো প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।
৬. অভ্যাস গঠন : শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত জিবনে সুন্দর করে তুলতে হলে প্রয়োজন সু অভ্যাসের। কারণ সু অভ্যাসের দ্বারা একজন সু চরিত্রবান হলে উঠতে পারেন। সুতরাং প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হবে সু অভ্যাস গঠন করা।
প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো / গঠন
আমাদের দেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়। এই কারণে আমাদের দেশের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিকল্পিত কোন নির্দিষ্ট কাঠামো নেই। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত হওয়ার জন্য এদের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। আমাদের দেশে দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের দেখাশোনার জন্য ক্রেস নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রথম গড়ে ওঠে। এছাড়া পরবর্তী বছর গুলির জন্য নার্সারি বিদ্যালয়, বুনিয়াদী বিদ্যালয় ইত্যাদি দেখা যায়।
আবার প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শ্রেণীবিন্যাস হল কেজি ওয়ান, কেজি 2 এই ধরনের। কোঠারি কমিশন বা ভারতীয় শিক্ষা কমিশন প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কোনো নির্দিষ্ট কাঠামো উল্লেখ করেনি। তাদের রিপোর্টে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়েছিল - প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষার পূর্বে হবে যেখানে সম্ভব এক থেকে তিন বছরের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা সংগঠিত হবে।
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম
কোঠারি কমিশন ভারতীয় শিক্ষা কমিশন যদিও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোনো গঠন কাঠামো উল্লেখ করেনি তবুও কি শিক্ষার পাঠক্রম কিরূপ হবে তা নিয়ে কয়েকটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে সেগুলি সংক্ষেপে নিচে আলোচনা করা হলো -
1. প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার সময়কাল যেহেতু শিশুদের দৈহিক বিকাশের নির্দিষ্ট সময় সেই কারণে এই পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে শরীরচর্চা ও দৈহিক বিকাশের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় শিক্ষা সমূহ।
2. জন্মসূত্রে বা বসবাস সূত্রে আমরা প্রতিটি মানুষ সমাজের পরিবেশের একটি অংশ বিশেষ এই কারণে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে অবশ্যই পরিবেশ সম্পর্কে ধারনা থাকবে, যা পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরিবেশ সম্পর্কে নানান ধরনর জ্ঞান আহরণ করতে পারে ।
3. শিশুদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার সঞ্চার ঘটাতে বা কৌতুহল বৃদ্ধি করতে এমনকি তাদের সৃজনাত্মক কার্যাবলী বিকাশ ঘটাতে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম গঠন করতে হবে। এই সকল বিজয়ের মধ্য দিয়ে শিশুরা ছবি আঁকা গান করা খেলনা তৈরি করা ইত্যাদি শিখতে পারবে।
4. অভ্যাস মানুষের জীবনের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়, শৈশবকালে গ্রহণ করা বিভিন্ন শিক্ষা পরবর্তী জীবনে ভিত্তির মত কাজ করে। এই কারণে শৈশবকালে এই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কে অবশ্যই অভ্যাস গঠনের শিক্ষা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
5. প্রাক প্রাথমিক শিক্ষায় অবশ্যই মাতৃভাষার উপর জোর দিতে হবে। কারণ এই বয়সে শিশুরা তাদের সমস্ত অনুভূতি ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করতে চাই। এইজন্য প্রাক-প্রথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে অবশ্যই ভাষার বিকাশ এর ব্যাপারে জোর দিতে হবে।
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষা কেন্দ্র
শিশুর দুই থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত মূলত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সময়কাল। যদিও এই সময় কলে শিশুরা অনেকটা গৃহ পরিবেশের মধ্যে বড় হয়ে থাকে, সেই কারণে এই সকল শিক্ষা কেন্দ্র গুলি গৃহ পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে গড়ে তোলা হয়। কয়েকটি মুখ্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র হল -
ক্রেস : প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান হল ক্রেস। দু বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের পরিচর্যা ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য এই ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
কিন্টার গার্ডেন স্কুল : কিন্টার গার্ডেন স্কুল প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার একটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। উইলিয়াম আগস্ট ফেড্রিক ফ্রয়েবেল কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি শিশুদের চারাগাছের সঙ্গে তুলনা করে এই প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছিলেন কিন্ডার গার্ডেন যার অর্থ হলো শিশু উদ্যান।
মন্তেশ্বরী স্কুল : শিক্ষাবিদ মাদাম মারিয়া মন্তেসরি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ছিলেন। এর প্রকৃত নাম ছিল কাসা দায় বাম বিনি যার অর্থ হলো শিশুদের জন্য গৃহ। তিনি তার এই পরিকল্পনায় শিশুর সক্রিয়তা এবং স্বাধীনতার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
প্রাক বুনিয়াদি স্কুল : মহাত্মা গান্ধী তার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাক বুনিয়াদি স্কুল প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি চাইতেন যাতে সুপ্ত প্রতিভা গুলির বিকাশ ঘটুক এই কারণে এই ধরনের বিদ্যালয় পাঠক্রমে তিনি নৈতিক বিকাশ সামাজিক বিকাশ নান্দনিক বিকাশ সৃজন শক্তির বিকাশ শারীরিক বিকাশ ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
নার্সারি স্কুল : 1909 সালে ইংল্যান্ডে মার্গারেট ম্যাকমিলান এবং রাসেল ম্যাকমিলান নামে দুই বোন প্রথম নার্সারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজে অবহেলিত দরিদ্র শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য তারা উদ্যোগী হয়ে এই নার্সারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষার্থীদের সৃজনীশক্তি বিকাশের জন্য পাঠক্রমে রেখেছিলেন নাচ-গান হাতের কাজ ছবি আঁকা বাগানের কাজ খেলাধুলা প্রভৃতি।
Great post | You write very well, I learned many things from your blog which were unknown
উত্তরমুছুনGood
উত্তরমুছুন