বৃষ্টিপাতের প্রকারভেদ | শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত | পরিচলন বৃষ্টিপাত | ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত

বারিমন্ডলের জলচক্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর এই জলচক্রের একটি বড় হল বা পর্যায় হলো বৃষ্টিপাত। পৃথিবীতে এই বৃষ্টিপাত বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভাবে হয়ে থাকে এবং এই বিভিন্ন ধরনের ওপর নির্ভর করে পৃথিবীর সকল বৃষ্টিকে কয়েকটি বিশেষ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিচে সকল প্রকার বৃষ্টি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হলো -

বৃষ্টিপাতের প্রকারভেদ

মেঘের প্রকৃতি, ঘনীভবনের পদ্ধতি, বায়ুমণ্ডলের  অস্থিরতার প্রকৃতি ইত্যাদি ভৌতিক কারণ অনুযায়ী বৃষ্টিপাতকে নিম্নলিখিত শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথা :-

  1) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত।

  2) পরিচলন বৃষ্টিপাত।

  3) ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত।


বৃষ্টিপাতের প্রকারভেদ | শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত | পরিচলন বৃষ্টিপাত | ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত
বৃষ্টিপাতের প্রকারভেদ


3) ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত কে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করা যায় যথা

  a) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত।

  b) নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত।


b) নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে সৃষ্ট ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাতকে আবার দুভাগে বিভক্ত করা যায় যথা :-

 i) শীতল সীমান্তীয় বৃষ্টিপাত।

ii) উষ্ণ সীমান্তীয় বৃষ্টিপাত।


শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত

উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু প্রবাহ পথে উঁচু পাহাড় বা পর্বত শ্রেনীর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত এই বায়ু দ্রুত উপরে ওঠে এবং দ্রুত ঘনীভূত হয়। এই ঘনীভবনের ফলে কিউমুলাস মেঘের সৃষ্টি হয় এবং পর্বতের প্রতিবাদ ঢালে প্রচুর বৃষ্টি দান করে একে বলে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত। পর্বত অতিক্রমের পর বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ হ্রাস পায়। এর ফলে নিন্মভীমুখীর কারণে উত্তপ্ত হয়। এইজন্য পর্বতের অনুবাদ ঢালে বৃষ্টিপাত হয়না বললেই চলে। এই অঞ্চলকে বৃষ্টিছায়া অঞ্চল বলে।


পরিচলন বৃষ্টিপাত

নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে সমুদ্র সন্নিহিত এলাকায় ও সামুদ্রিক অঞ্চলে জলীয় বাষ্পের প্রাচুর্য দেখা যায়। দিনের বেলায় বা গৃষ্ম কালে অতিরিক্ত সূর্য রশ্মির তাপীয় ফলের দরুন নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। এই অঞ্চলের স্থানীয় বায়ু দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে হালকা হয় এবং উপরে ওঠে। ভূপৃষ্ঠে সৃষ্ট এই শূন্যস্থান পূরনের জন্য সন্নিহিত অঞ্চল থেকে উষ্ণ আদ্র বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয় এবং উপরে ওঠে। এই পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত ধীর।উপরে উঠার পর শিশিরাঙ্ক এর কাছাকাছি উচ্চতায় দ্রুত ঘনীভবন শুরু হয়।


গভীর কিউমুলাস ও কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি করে। পরিচলন স্রোতের প্রভাবে সৃষ্ট এই মেঘ গুলির মধ্যে অসংখ্য ছোট আবর্তন থাকে এবং বায়ুমন্ডলে ঘর্ষণের প্রভাব স্থির তড়িৎ আধান গুলি আলাদা হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করার পর বজ্রবিদ্যুৎ সংগঠিত হয়।আলো, সংঘর্ষ, উত্তাপ ও শব্দের প্রভাবে অতিদ্রুত হিমায়ন হয় এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিলাখণ্ডের ন্যায় বরফ গঠিত হয়।বড় বড় বৃষ্টি ফোটার সাথে এই বডরফ শিলা ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। ইহাকে শিলাবৃষ্টি বলে। এই বৃষ্টির প্রবল্য সবচেয়ে বেশি এবং () বৃষ্টির ফলে ভূপৃষ্ঠে শীতল হয়ে যায় এবং ক্রমশ নিম্নচাপ বিনাশপ্রাপ্ত হয় ও পরিচলন বৃষ্টিপাতের শেষ ঘটে।



ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত

ক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্ণ সামুদ্রিক অংশে গৃষ্ম কালে সূর্য তাপের প্রভাবে কখনো কখনো গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। যার বায়ু চাপের মাত্রা 970 মিলিবার নিচে নেমে যায়। এই তীব্র নিম্নচাপ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুকে প্রবল বেগে আকর্ষণ করে ও বায়ু প্রবাহের নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রের চতুর্দিকে উত্তর গোলার্ধ বামবর্তে ও দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে তীব্র বেগে আবর্তিত হয়। এই আবর্তিত বায়ু ক্রমশ () নেয় গতি পথে উপরে উঠে যায় এবং পুরো সিস্টেমকে ক্রমশ স্থলভাগের দিকে প্রবল বেগে ধাবিত করে।


উত্তর গোলার্ধে এর গতিপথ প্রধানত উত্তর-পশ্চিম মুখী এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মুখী। বায়ুপ্রবাহের এই বিশেষ পদ্ধতিকে ঘূর্ণবাত বলে। এর প্রভাবে উপকূল অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। ঘূর্ণবাতের মাঝের বা কেন্দ্রের 5 থেকে 10 কিলোমিটার পর্যন্ত অংশে কোনরকম বায়ুপ্রবাহ হয়না একে ঘূর্ণবাতের 'চক্ষু' বা 'Eye'বলে। ঘূর্ণবাতের চোখের পর কয়েক কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে তীব্র বেগে ঝড়ের আকারে প্রবাহিত হয়। এই অংশে বায়ুর গতিবেগ প্রায় ঘন্টায় 60 - 120 কিলোমিটার।


ঝড়ের প্রভাবে এবং বজ্রবিদ্যুৎ এর প্রভাবে অতি দ্রুত হিমায়নের ফলে সৃষ্ট কিউমুলাস ও কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি হয় এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। এই অঞ্চলকে ঘূর্ণবাতের 'দেওয়াল' বা 'Wall' বলে। প্রাচীরের পর থেকে বায়ুর গতিবেগ মেঘের পরিমাণ ঝড়ের গতিবেগ হ্রাস পায়। ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত অবশ্যই ক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্ণ সমুদ্র সৃষ্টি হয়ে পার্শ্ববর্তী স্থলভাগের প্রবেশ করে এবং বিনাশ করে।


নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত

উত্তর গোলার্ধে 40 - 50° অক্ষাংশের মধ্যে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন আকারে কতগুলি সীমান্তের সৃষ্টি হয়। মূলত মেরু প্রদেশ থেকে আগত শীতল শুষ্ক ভারী মেরু বায়ু পুঞ্জ এবং পশ্চিম থেকে আগত উষ্ণ আর্দ্র সামুদ্রিক পশ্চিমা বায়ুর মিলনে শীতল ও উষ্ণ সীমান্তের সৃষ্টি হয়।


উষ্ণ সীমান্তের স্তরমেঘ ও শীতল সীমান্তের কিউমুলাস ও কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি হয়। এর কেন্দ্রে থাকে একটি আপেক্ষিক নিম্নচাপ। এই প্রবল ঘূর্ণবাতে বৃষ্টির প্রবাল্যের মাত্রার গতিবেগ ক্রান্তীয় অঞ্চলের তুলনায় অনেক কম হয়। কিন্তু ঘূর্ণবাতের দরুন সৃষ্ট আবহাওয়া প্রকৃতি খুবই নিয়মমাফিক। কারণ একটি শৃংখল এর আকারে পরপর বিভিন্ন আয়তনে সীমান্ত ঘূর্ণবাত প্রবাহিত হয়।


👉👉 পৃথিবীতে পৃথিবীতে প্রধানত যে তিন প্রকার বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় এখানে মূলত সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কিন্তু বৃষ্টির কারণে বা বৃষ্টি কাকে বলে এর সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে নিচে দেওয়া প্রশ্নের লিংক গুলো ফলো করতে পারেন -