ঘনীভবন কাকে বলে | ঘনীভবন ঘটার কারণ সমূহ | ঘনীভবনের প্রক্রিয়া সমূহ | ঘনীভবনের আদর্শ অবস্থান | চরম আদ্রতা

    ভূগোল পাঠের একটি অন্যতম ও প্রয়োজনীয় বিষয় হলো ঘনীভবন। পরিবেশের জলীয় উপাদান জলীয়বষ্পের একটি অন্যতম অবস্থা হল এই ঘনীভবন। এখানে ঘনীভবন সম্পর্কে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন ঘনীভবন কাকে বলে, ঘনীভবন ঘটার বিভিন্ন কারণ সমূহ. বিভিন্ন ঘনীভবনের প্রক্রিয়া. গুলি ও ঘনীভবনের আদর্শ অবস্থান সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো -


ঘনীভবন কাকে বলে


 ঘনীভবন একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। ইহার ফলে বাষ্পকনা গুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়। বায়ুমন্ডলের কোন স্থানে উত্তাপ শিশিরাঙ্কের নিচে নামলে বাষ্প কনাগুলির এক অংশ ঘনীভূত হইয়া জলকণায় পরিণত হয়। ঘনীভবন ঘটিলে জলীয় বাষ্পের অভ্যন্তরে লুকায়িত অতি সামান্য উত্তাপ বাহির হইয়া আসে।


এই রূপ উত্তাপকে লিনতাপ বলে। ইহা আবার বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। বায়ু জলীয় বাষ্পে অতি পরিপৃক্ত থাকিলে বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ শিশিরাঙ্কের বেশ নিচে নামিলে ঘনীভবন ঘটে। আবার কখনও কখনও কোন অস্বাভাবিক পরিবেশ বায়ুর উত্তাপ শিশিরাঙ্কের নিচে নামার পূর্বেও ইহা ঘটতে পারে।



ঘনীভবন ঘটার কারণ সমূহ


ঘনীভবন প্রধানত উত্তাপের হ্রাস হেতু ঘটিয়া থাকে। আবার বায়ুর উত্তাপের হ্রাস চারটি পদ্ধতির জন্য ঘটিতে পারে।


a) প্রসারনের জন্য।

b) শীতল বায়ু সংস্পর্শে জন্য।

c) বায়ুতে উত্তাপের বিকিরনের জন্য।

d) উষ্ণ ও শীতল বায়ু মিশ্রণের জন্য।


অনেক সময় এই পদ্ধতি গুলি একই সঙ্গে বা একাধিক পদ্ধতিতে যৌথ ভাবে ঘটিতে পারে।


   অন্যভাবে এই পদ্ধতি গুলিকে দুটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয় -


Condensation
ঘনীভবন


1)Adiobatic পদ্ধতি।

2) অন্যান্য কারণ।


Adiobatic পদ্ধতি


প্রধানত উদ্ধগামী বায়ু অনেক ওপরে উঠার পর প্রসারিত হইয়া শীতল হয়। বায়ু উপরে উঠার জন্য উত্তাপের হ্রাসকে Adiobatic বলে। অপরিপৃক্ত বায়ুকে লম্ব Adiobatic হারে উত্তাপের হ্রাস(10% Cm) বলে। বায়ুর Adiobatic শীতলতা কম বায়ুতে পরিচলন প্রক্রিয়া, ভিন্ন ধর্মী বায়ু পুজ্ঞের মিলন ও Front সীমান্তের সৃষ্টি করে। অথবা উচ্চ পর্বত বা মালভূমির ঢাল বাহিয়া বায়ু ঊর্ধ্বে ওঠার জন্য ঘটিতে পারে।


অন্যান্য কারণ :-


   i) বায়ুর উত্তাপের হ্রাস।

  ii) উত্তাপের বিকিরণ।

 iii) শীতলতা।

 iv) শীতল বায়ুর সঙ্গে মিলনের ফলে।


 এই দুই পদ্ধতির জন্য ভূপৃষ্ঠে অনেক ওপরে মেঘ এক ভূপৃষ্ঠের নিকটে শিশির, কুয়াশার, ও তুহিনের সৃষ্টি হয়।



ঘনীভবনের আদর্শ অবস্থান সমূহ



ঘনীভবনের জন্য দুটি বিষয় অপরিহার্য।


1) যথেষ্ট পরিমাণে পরিপৃক্ত বায়ু।

2) ঘনীভবন ঘটার জন্য উপযুক্ত আঁধারের উপস্থিতি। ইহাদের Condensation Nuclide বলে।

  

    অতিক্ষুদ্র লবণ, মৃত্তিকার দানা, আগনিয় গিরি হইতে নির্গত ভষ্ম, মহাজাগতিক শুক্ষ ধূলিকণা,() পরিমাণে বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে ভাসমান অবস্থায় থাকিলে বাষ্পকনা গুলি ইহাদের আশ্রয় করিয়া ঘনীভূত হইয়া জলকণা রূপে উহাদের উপর ভাসতে থাকে।


   এইসব Condensation Nuclide গুলি বেশি মাত্রায় শিল্প শহর গুলির নিকট সংখ্যায় বেশি দেখা যায়। সেই জন্যই শীতকালে শিল্প শহর গুলিতে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি করে।


   নানা কারণে ঘনীভবনের পার্থক্যের জন্য বিভিন্ন শ্রেণীর ঘনীভবন ঘটে :-


1) আপেক্ষিক আদ্রতা পার্থক্য।

2) বায়ুর গতিবেগ।

3) বায়ুমণ্ডলে ঘূর্ণির উৎপত্তি।

4) উত্তাপ।

5) উত্তাপের হ্রাসের পর ঘনীভবনের পার্থক্যের সৃষ্টি হয়।

  এই কারণে ঘনীভবনের ফলাফল বিভিন্ন ধরনের হয়।



ঘনীভবনের প্রক্রিয়া সমূহ


কুয়াশা


ভূপৃষ্ঠের উপরিস্থিত বায়ুস্তরে ঘনীভবন ঘটলে অসংখ্য অতিক্ষুদ্র জলকনা বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় সৃষ্টি করে থাকে তাকে কুয়াশা বলে। কুয়াশা মানুষের দৃষ্টি শক্তিকে সীমাবদ্ধ করে। এর ফলে দূরের জিনিস দেখা যায়না।


  শীতকালে দীর্ঘ রাত্রিতে ভূপৃষ্ঠ তাপবিকিরণ করিয়া শীতল হইলে ভূপৃষ্ঠের উপরস্থিত বায়ুস্তর শীতল হইয়া ঘনীভবন ঘটে। সেই জন্য শীতকালের সকালে কুয়াশা বেশি দেখা যায়।


   সমুদ্র উপকূলে সমুদ্র হইতে উষ্ণ ও আদ্র শীতল স্থলভাগে প্রবেশ করিলে ঘন কুয়াশায়ার সৃষ্টি করে উষ্ণ ও শীতল বায়ুর সীমান্ত অঞ্চলে উপরের উষ্ণ বায়ু হইতে বৃষ্টিপাত হইতে থাকিলে নিচের শীতল বায়ু পরিপৃক্ত হইলে কুয়াশার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু কখনো কখনো উচ্চ স্থানে বা আকাশে ও অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হইলে কুয়াশার সৃষ্টি হতে পারে।


শিশির


ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন আদ্র বায়ুস্তরের উত্তাপ শীতকালের দীর্ঘ রাতে হ্রাস পেতে পেতে শিশিরাঙ্কের নিচে নামলে বাষ্পকনাগুলি ঘনীভূত হইয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় এবং উহারা ভূপৃষ্ঠের উপরে ঘাস পাতা ইত্যাদির উপরে অবস্থান করে। ইহাদের শিশির বলে। নির্মল আকাশ, মৃদু বাতাস এবং আদ্র বায়ু শিশির সৃষ্টিতে সহায়তা করে।



তুহিন


উচ্চ পর্বত মালভূমি অঞ্চলে এবং শীতপ্রধান অঞ্চল গুলিতে রাত্রে বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে উত্তাপ 0°C এর নিচে নামিলে বায়ুস্থিত বাষ্পকনা জমিয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তুষারকণায় পরিণত হইলে উহাদের তুহিন বলে। তুষার কণাগুলি কেলাস রূপে গঠিত হইলে উহাদের White Frost বলে


যুক্তরাষ্ট্রের তুহিনকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়


 i) হালকা তুহিন (Light Frost)।

 ii) ঘন তুহিন (Deep Frost)।


*সারা শীতকালে তুহিন ফসল ও কলাগাছের প্রচুর ক্ষতিকরে। তাই উত্তাপ বৃদ্ধির জন্য উন্নত দেশ গুলিতে ফসল ক্ষেত্রগুলিতে প্লাস্টিকের আচ্ছাদন এবং হিটার ইত্যাদি এর ব্যবহার করা হয়।



রাহিম


ইহা সর্বত্র দেখা না গেলেও ভূপৃষ্ঠের অতি নিকটে ঘনীভবন প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ইহা পাহাড় পর্বত মালভূমির খাড়াঢালে শীতল কুয়াশা রূপে বিরাজ করে।


More Geography Notes

মিষ্ট(Mist)


বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে কুয়াশা অপেক্ষাও আরো ক্ষুদ্র জলকনা রূপে বায়ুস্থিত বাষ্পকনা গুলি ঘনীভূত হইলে উহাদের Mist বলে। ইহার ফলে মানুষের দৃষ্টি শক্তি 2 কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।Mist পর্বতবেষ্টিত উপত্যকায় এবং উপকূলভাগে শীতকালে সৃষ্টি হয়।



চরম আদ্রতা কাকে বলে ?


   কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন নির্দিষ্ট আয়তন বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকে তাকে এই তাপমাত্রার এই বায়ুর চরম আর্দ্রতা বলে।