প্রাচীন অনুবর্তন এর বৈশিষ্ট্য লেখ। পরীক্ষাটি বর্ণনা করো। শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্ব লেখ।

প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে গেলে প্রথমেই আমাদের একটু জানতে হবে প্রাচীন অনুবর্তন কি - প্রাচীন অনুবর্তন হলো স্বাভাবিক উদ্দীপকের পরিবর্তে অন্য কোন উদ্দীপকের মাধ্যমে একই প্রতিক্রিয়া ঘটানোর প্রক্রিয়া। প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো - 

প্রাচীন অনুবর্তন এর বৈশিষ্ট্য লেখ। পরীক্ষাটি বর্ণনা করো। শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্ব লেখ।


1. প্রাচীন অনুবর্তন কৌশলে অনুবর্তী তো উদ্দীপকে স্বাভাবিক উদ্দীপকের ঠিক আগে উপস্থাপন করতে হয়। ঠিক যেমন প্যাভলভের পরীক্ষা ঘণ্টাধ্বনি বন্ধ হওয়ার আগেই খাদ্যবস্তু দেওয়া হচ্ছিল। 

2. অনুবর্তন হলো কোনো অস্বাভাবিক উদ্দীপকের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি। এখানে উদ্দীপকের প্রকৃতির উপর প্রতিক্রিয়া নির্ভরশীল যেমন উদ্দীপক শক্তিশালী হলে প্রতিক্রিয়া শক্তিশালী হয়। 

3. কৃত্তিম উদ্দীপক এর প্রভাব থাকতে থাকতেই স্বাভাবিক উদ্দীপকে প্রতিক্রিয়া সঙ্গে উপস্থাপন করতে হয়। 

4. স্বাভাবিক উদ্দীপকের ক্ষমতা বেশি শক্তিশালী অন্য উদ্দীপক অনুবর্তী তো উদ্দীপকের থেকে। 

5. স্বাভাবিক উদ্দীপকের পরিবর্তে অন্য উদ্দীপকে ব্যবহার করলে বা দীর্ঘদিন স্বাভাবিক উদ্দীপক ব্যবহার না করলে প্রাণীর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে যদি এরকম অবস্থা সৃষ্টি হয় তখন তাকে বলে অপানুবর্তন।

6. অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় যদি একাধিক উদ্দীপক উপস্থিত থাকে তবে প্রাণী উদ্দীপকের প্রভাব অনুযায়ী নিজেই উদ্দীপক নির্বাচন করে। 



প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের পরীক্ষা


      মনোবিজ্ঞানী প্যাভলভ কর্তৃক অনুবর্তন পরীক্ষার মধ্যে কুকুরের পরীক্ষাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানী প্রথমে একটি কুকুরকে তার পরীক্ষা করে আনেন এবং তাকে খাবারের সঙ্গে পরিচিতি ঘটান। কুকুরটি খাবারে সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার লালা ক্ষরণ ঘটে। এরপর তিনি কুকুরটির সামনে খাবার দেওয়ার আগে কিছুক্ষণ ঘণ্টা বাজাতে থাকেন এবং তারপরেই তাকে খাবার দিতেন। এরকম কয়েকদিন করার পর তিনি দেখলেন কুকুরটি ঘন্টা ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গে খাবার গ্রহণের জন্য সক্রিয় হয়ে উঠছে এবং সাথে সাথে তার লালা নিঃসরণে ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাধ্বনি সঙ্গে কুকুরের লালা নিঃসরণ এর কোন সম্পর্ক ছিল না। লালা নিঃসরণ এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে খাবারের, উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্ক আছে কিন্তু ঘন্টাধ্বনির কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু এখানে ঘণ্টাধ্বনি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সঙ্গে পুনরাবৃত্তি হওয়ার জন্য অনুবর্তী তো উদ্দীপকে পরিণত হয়েছে এবং স্বাভাবিক উদ্দীপক ছাড়াই প্রতিক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।


শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের গুরুত্ব

1. অনুবর্তন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রাণীর আচরণের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভ্যাস গঠন করা যেতে পারে। 

2. প্রাচীন অনুবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বদভ্যাসগুলো কে খুব সহজে দূর করা যায়। 

3. প্রাচীন অনুবর্তন প্রয়োগের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মন থেকে শিক্ষা বিষয়ক এ খুব সহজেই দূর করা যায়। কঠিন কঠিন বিষয়কে তাদের পূর্ব পরিচয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় এই তত্ত্বের মাধ্যমে।

4. শিক্ষার্থীদের নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজন গুলি এই প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে ঘটানো সম্ভব। যেমন সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠা দাঁত মাজা যথাসময়ে পড়তে বসা এই সমস্ত অভ্যাস গুলিকে প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে গড়ে তোলা যায়। 

5. প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভাষার বিকাশ ঘটানো সম্ভব।

6. শিক্ষার্থীরা একটু অনুকরণ প্রবল হয়ে থাকে আর এই কারণে শিক্ষার্থীরা অনুবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চরিত্র ইত্যাদিকে তাদের মধ্যে আয়ত্ত করতে শেখে তাদের ব্যক্তি জীবনে খুবই প্রয়োজন।




***** দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষা বিজ্ঞানের সকল বিষয়ের নোট ও শর্ট প্রশ্নের উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করো -- Education Note