What is Forgetting ? বিস্তৃতি কি ? বিস্মৃতির কারণ ( Cause of Forgetting )




     স্মৃতির মতো বিস্তৃতিও Forgetting, আমাদের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। যখন কোন সংরক্ষিত তথ্য প্রয়োজনের সময় উদ্ধার করতে ব্যর্থ হই তখন আমরা বলি ভুলে গেছি বা মনে নেই। কখনো পরে একসময় মনে পড়লে বলি তখন ভুলে গেছিলাম কিন্তু এখন মনে পড়েছে। এর থেকে বোঝা যায় যে এই স্মৃতি বিস্মৃতি বিষয়টি অনেকটা সামরিক আবার এমন অনেক তথ্য থাকে যা চিরদিনের জন্য আমাদের মন থেকে হারিয়ে যায়। 

      আমাদের স্মৃতি কোনো না কোনো কারণে যদি সামরিক বা চিরস্থায়ী ভাবে লোপ পায় তখন তাকে বলে বিস্তৃতি (Forgetting) অর্থাৎ স্মৃতির লোপ পাওয়ার ঘটনাকে বলে বিস্মৃতি।

What is forgetting


        বিস্মৃতির কারণ ( Cause of Forgetting )


অন্তরায় :  অন্তরা হলো বাধা কোনো একটি বিষয়ে যখন অপরের বিষয়ের সংরক্ষণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন তাকে বলা হয় অন্তরায়। স্মরণ এর ক্ষেত্রেও এই বাধা হতে পারে একটি নাম মনে করতে চাই কিন্তু বারবার অন্য কোন নাম মনে পড়ছে এরকম ঘটনা আমাদের সঙ্গে প্রায়ই ঘটে। যখন একটি বিষয় সংরক্ষণ এর পরপরই আরেকটি বিষয় সংরক্ষণ করতে হয় তখন প্রথমটির সংরক্ষণ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত প্রথমটির বিস্তৃতি ঘটে। 
       অর্থাৎ নতুন কোন তথ্য আমাদের স্মৃতিতে স্থান করে নিতে চাইলে পুরনো কোন তথ্য সেই স্মৃতিতে বাধা পায় এবং তার বিস্তৃতি ঘটে।


ক্লান্তি :  শারীরিক বা মানসিক ক্লান্তির জন্য বিস্তৃতি ঘটতে পারে কারণ শরীর বা মন ক্লান্ত হলে আমাদের সংরক্ষণ ক্ষমতা অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষভাবে ক্ষুধা রোগ অতিরিক্ত পরিশ্রম এইসব মানুষকে ক্লান্ত করে কিন্তু মানসিক ক্লান্তি বিস্তৃতির অন্যতম প্রধান কারণ।
       মানসিক বিশ্রাম এর ফলে এই বিষয়টি জনিত সমস্যা দূর হতে পারে, মানসিক বিশ্রাম এর অর্থ মনকে দূরে সরিয়ে রাখা নয় নতুন নতুন তথ্যের মাধ্যমে স্মৃতিকে আরো শক্তিশালী করে তোলা, এই কারণে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকেরা ছাত্র-ছাত্রীদের সক্রিয় রেখে তাদের মানসিক ক্লান্তি দূর করে শিক্ষাদান করতে পারেন।

What is Forgetting ? বিস্তৃতি  কি ?


পুনরুদ্রেক :  স্মৃতি-বিস্মৃতির বিষয়ে পুনরুদ্রেক একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। আমাদের শেখা কোনো বিষয় বা সংরক্ষণ করা কোন বিষয় যদি দীর্ঘদিন পুনরুদ্রেক না করা হয় তবে তা অতি সহজে বিস্মৃতির পর্যায়ে পড়ে। 
      জন্ম থেকে প্রতিটি ব্যক্তি কিছু-না-কিছু তার স্মৃতিতে সংরক্ষণ করতে শুরু করে কিন্তু যদি এই সমস্ত স্মৃতিগুলি দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার না করা হয় তবে তা বিস্মৃতি তে পরিণত হয়। তাই বিস্মৃতির ঘটনা এড়ানোর জন্য আমাদের প্রয়োজন সাম্প্রতিক ভাবে পুরানো সঞ্চিত কোনো বিষয় বা স্মৃতি পুনরায় ব্যবহার করা বা পুনরুদ্রেক করা।


প্রয়োজনীয় সময়:  কোন কিছু স্মৃতিতে সংরক্ষিত হওয়ার পর যত সময় অতিবাহিত হয় স্মৃতি ততই দুর্বল হতে থাকে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে প্রথম দিকে স্মৃতির হার খুব দ্রুত তারপর ক্রমশ কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কিছু স্মৃতি সঞ্চিত থেকে যায় তারার বিস্তৃতি ঘটে না।
        স্মৃতির উপর সময় এর প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এই প্রভাব সেই সব ক্ষেত্রেই অধিক কার্যকর যেখানে চর্চার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়াও বিষয়টি কি ব্যক্তির কাছে তার গুরুত্ব কতখানি এবং আরো কিছু কিছু ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের উপর এই বিষয়টি নির্ভর করে।


শিখন:  আমাদের মস্তিষ্কে সঞ্চিত স্মৃতি গড়ে ওঠে শিখন এর ফলে। অর্থাৎ বলা যায় শিখন যত যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হবে স্মৃতি ততো শক্তিশালী হবে। কিন্তু ব্যক্তির শিখন যদি যুক্তিযুক্ত এবং গ্রহণীয় না হয় তবে সেই স্বীকৃতি দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত হতে পারে না, ধীরে ধীরে সেই স্মৃতি বিস্মৃতি তে রূপান্তরিত হয়।
         বোধহীন শিখনের বেলায় তথ্য জানুন খুব নিম্নস্তরের সেই কারণে বিস্তৃতি ঘটে বেশি এবং খুব তাড়াতাড়ি তা হারিয়ে যায়। বস্তুত কত দীর্ঘ বিষয় সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করতে পারবে তার ব্যক্তিগত বৈষম্য খুব বেশি। অর্থহীন বিষয় যেমন অর্থহীন শব্দতালিকা সংখ্যা বা অক্ষরের তালিকা মুখস্ত করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তির কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে।

 Why Need Forgetting ?  বিস্তৃতি কেন প্রয়োজন 



প্রেষণার জনিত বিস্তৃতি:  এই তত্ত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড। ফ্রয়েড অচেতন মনক সমস্ত সচেতন ক্রিয়ার নেপথ্যে অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি বলেছেন যেসব বেদনাদায়ক অসামাজিক আদিম প্রবৃত্তি যাতে অভিলাষ জ্ঞান মনে আসতে চাই অহম তাদের গতি রোধ করে, কিন্তু কখনো কখনো নানা ছদ্মবেশে তারা চেতন স্তরে পৌঁছালে মনোজগতে যে তীব্র ও বেদনাদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি হয় আমরা ভুলে যেতে চাই এমনকি ভুলেও যায়। 
            অনেক সময়ই আমরা দুঃখজনক অভিজ্ঞতা ভুলতে চেষ্টা করি কিন্তু তা আরো তীব্র আকার ধারণ করে। বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা অনেক সময়ই দুঃখের চেয়েও স্থায়ী হয়ে দাঁড়ায়। 



স্মৃতির নির্মাণ:  স্মরণ ক্রিয়ার সময় প্রায়ই আমরা তার সঙ্গে অন্য অভিজ্ঞতাকে মিশিয়ে ফেলি। এর ফলে যা ঘটেনি বা যা প্রকৃত উদ্দেশ্য বা ঐ বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত নয় তাও আমরা স্মরণ করার বিষয় বা ঘটনার অংশ বলে মনে করি এই বৈশিষ্ট্যের নাম দেয়া হয়েছে স্মৃতির নির্মাণ। 
       কোন বিষয় বা ঘটনার স্মৃতি ভুতো করতে গেলে এই পারিপার্শ্বিক ঘটনা বা বস্তু গুলির সম্পর্কে যদি সঠিক ধারণা বা নির্মাণ না হয় তবে ওই স্মৃতি-বিস্মৃতি তে পরিণত হতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রেও স্মৃতির নির্মাণ প্রক্রিয়া অনেক সময় ভুল হয়। একটি বিষয়ের সঙ্গে নিজের মনগড়া ধারণা মিশে যায় অথবা অন্য আরেকটি বিষয়ের অভিজ্ঞতা মিশে যায়। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন স্মৃতির নির্মাণের দরুন অধিকাংশ সময়ই প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা নির্ভরযোগ্য হয়না প্রত্যক্ষদর্শীকে যতদূর সম্ভব মনে করতে বলা হয়। 

Types of Forgetting| বিস্তৃতির প্রকার


       মানুষের জীবন স্মৃতি দৈনন্দিন স্মৃতি স্মৃতিগুলি দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। অধিকাংশ মানুষই প্রথম যৌবনে ঘটনা যত ভালো মনে রাখতে পারে মধ্য জীবনের ঘটনা ততটা পারেনা। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে ধারাবাহিকভাবে স্মৃতির সংরক্ষণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কমতে থাকে এমন নয়। কিছু কিছু বয়সের স্মৃতি খুব কম পরিমাণ মনে করা যায় আবার কিছু কিছু বয়সের স্মৃতি স্পষ্ট মনে থাকে। শৈশবের স্মৃতি কিছুটা পর্যন্ত সম্পূর্ণ লোপ পেয়ে যায়, আমরা দু বছর বয়সের কথা পরবর্তীকালে কিছুই মনে করতে পারিনা একে বলা হয় শৈশবের স্মৃতি লোপ। 
        কিছুটা ব্যক্তিগত বৈষম্য থাকলেও একটা বয়স পর্যন্ত আমাদের যে স্মৃতির অস্তিত্ব লুপ্ত হয়ে যায় তা সার্বজনীনভাবে ঘটে। শৈশবের স্মৃতি অনেকটা নির্মিত স্মৃতি। শিশুদের স্মৃতির প্রসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিশুদের স্মৃতি সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক কল্পনার জগত একাকার হয়ে যাওয়া। যা কখনো ঘটেনি যে অভিজ্ঞতা তাদের সত্যি হয়নি কাল্পনিকভাবে তারা বিশ্বাস করে এরকম হয়েছিল। কোন কোন মনোবিজ্ঞানী একে বলেছেন মিথ্যা স্মৃতি। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রবণতা কমতে থাকে, যদি না কমে তা মানসিক সমস্যায় রূপান্তরিত হতে পারে। 


      আরও প্রশ্ন :

মনোযোগ