মেকলে মিনিট কি। ভারতীয় শিক্ষা ব্যাবস্থায় এর অবদান। Macaulay's minute on Indian Educational system

মেকলে মিনিট কি ? What is Macaulay's Minute ?



    ইংরেজ শাসনের সূচনা পর্বে কোম্পানি ভারতে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের বিরোধী ছিল কোম্পানি মনে করত যে ইংরেজি শিক্ষা পেলে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাবে, এবং হয়তো ভারত কোম্পানির হাতছাড়া হয়ে যাবে। এই কারণে কোম্পানি ভারতে সংস্কৃত ও আরবি এবং ফারসি শিক্ষাতেই উৎসাহ দিত। প্রাচ্যবিদদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংস, হেনরি প্রিন্সেপ, ও উইলসন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। এই গোষ্ঠী প্রাচ্যবাদী গোষ্ঠী নামে পরিচিত।

মেকলে মিনিট


      প্রাচ্যবাদী এর বিপক্ষে আরেকটি গোষ্ঠী ছিল তারা পাশ্চাত্য বাদী গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এই গোষ্ঠীর বিখ্যাত কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ হলেন চার্লস গ্রান্ট, টমাস বাবিংটন মেকলে (Thomas Babington Macaulay) ।এরা মনে করতেন যে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য বিদ্যার চর্চা ভারতের পক্ষে মঙ্গলজনক। এই গোষ্ঠীর অন্যতম ব্যক্তি লর্ড মেকলে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি প্রস্তাব আনেন যা মেকলে মিনিট ( Macaulay's Minuteনামে পরিচিত।

      লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর শাসনকালে সরকারি শিক্ষানীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। এসময় টমাস বেরটন মেকলে নামে এক পন্ডিত তার আইনসভার সচিব হয়ে ভারতে আসেন এবং তিনি কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন এর সভাপতি নিযুক্ত হন। এসময়ে এই কমিটি প্রাচ্য রীতি ও প্রতীচ্য রীতিতে শিক্ষা দান সম্পর্কে দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। উগ্র পাশ্চাত্যবাদী  মেকলে প্রতীচ্য রীতিতে শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন। 
        তার সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন আলেকজান্ডার ডাফ, স্যান্ডার্স, কলভিন প্রমুখ পাশ্চাত্য বাদী গণ। অন্যদিকে প্রাচ্যবিদ্যা সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট প্রাচ্যবিদ - এইচ টি প্রিন্সপ, কলব্রুক প্রমুখ। তারা প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে শিক্ষাদানে আগ্রহী ছিলেন। ১৮৩৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মেকলে তার বিখ্যাত প্রস্তাব বড়লাটের কাছে পেশ করেন। তার প্রস্তাব ক ছিল এই রূপ -
 -

মেকলে মিনিট এর বৈশিষ্ট্য:

  • তিনি প্রাচ্যের সভাকে দুর্নীতি অপবিত্র ও নির্বুদ্ধিতা বলে অভিহিত করে সরাসরি পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
  • তার মতে প্রাচ্যের শিক্ষায় কোন বৈজ্ঞানিক চেতনা নেই এবং তা পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা অপেক্ষা সম্পূর্ণভাবে নিকৃষ্ট নিম্নমানের।
  • তিনি বলেন যে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত দের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষিত হলে তা ক্রমনিম্ন পরিস্রুত নীতি অনুযায়ী ধীরে ধীরে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।
  • মেকলে লক্ষ্য ছিল সাংস্কৃতিক বিজয়। তিনি বলেন যে "পাশ্চাত্য শিক্ষার ফলে এমন এক ভারতীয় গোষ্ঠী তৈরি হবে যারা রক্তবর্ণ হবে ভারতীয় কিন্তু রুচি, মত, নৈতিকতা এবং বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ।  তারাই পরে জনগণের মধ্যে নতুন জ্ঞান প্রচার করবে এবং ইংরেজি শিক্ষার ফলে ভারতে নবজাগৃতি আসবে"। মেখলের বাগ্মিতা ও যুক্তির ফলে ইংরেজি শিক্ষার সমর্থনকারীরা জয়যুক্ত হন এবং ১৮৩৫ সালের ৭ই মার্চ লর্ড বেন্টিঙ্ক ইংরেজি শিক্ষাকে সরকারি নীতি রূপে ঘোষণা করেন।