ভারতীয় ইতিহাসে কয়েকটি কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা।

ভারতীয় কৃষক বিদ্রোহ

      কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে জন সমষ্টি যখন বিরোধী হয়ে ওঠে তখন সেই অবস্থা কে বিদ্রোহ বলা হয়। সাধারণত ভারতীয় কৃষক বিদ্রোহের কারণ হিসাবে এই কাজ টি বেশ জোরালো ছিলো। কেননা বহুদিন ধরে উপনিবেশিক দের অত্যাচারে ভারতীয় কৃষক সমাজ জর্জরিত হয়ে পড়েছিল। সেই কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দেশীয় কৃষক রা বিদ্রোহী হয়ে পড়ে, সাথে সাথে দেখা দেয় কৃষক বিদ্রোহ। এই রকম কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো

নীলবিদ্রোহ  

       ফরাসি বণিক লুই বোনো ছিলেন ভারতের প্রথম নীলকর ইংরেজ বণিক কার্ল ব্লাম ভারতে প্রথম নীলশিল্প গড়ে তোলে । 1833 সালে সনদ আইনে নীল চাষে একচেটিয়া কোম্পানির অধিকার লুপ্ত হয়। নীলকর সাহেবের নিজেদের জমিতে নীল চাষ করলে তাকে বলা হতো নীল আবাদী এবং চাষীকে আগাম টাকা দিয়ে চাষের জমিতে নীল চাষ করার জন্য চুক্তি করলে তাকে বলা হতো রায়তি, দাদনী বা বে-এলাকা চাষ।

 1860 খ্রিস্টাব্দে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক প্রকাশিত হয়। রেভারেন্ড জেমস লঙ এর উদ্যোগে মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই নাটক টি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। নীলকররা জেমস লঙের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেনএবং বিচারে তার এক মাসের কারাদন্ডএক হাজার টাকা জরিমানা হয়।জমিদার কালী প্রসন্ন সিংহ নিজে সেই টাকা জমা দেন।



         লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক পঞ্চম আইন দ্বারা নীলকরদের অত্যাচার দমনের চেষ্টা করেন। বাংলার ছোটলাট হলিডে সাহেব, সরকারি ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল লতিফ, বারাসাত জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট মঙ্গোলস নীলকরদের বিরুদ্ধে চাষীদের পক্ষ নেন। 1859 সালে শেষ দিকে কৃষ্ণনগরের কাছে চৌগাছা গ্রামে বিষ্ণু চরণদিগম্বর বিশ্বাস কৃষক দের সংগঠিত করেন। নীল বিদ্রোহের কারণ নির্ণয় করেন সেই সময়ের গভর্নর জন পিটার গ্রান্ট। 



                নীলবিদ্রোহ দমনের জন্য একাদশ আইন পাস হয়। নীল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন পাবনার মহেশ বন্দোপাধ্যায়, মালদহের ফরাজী নেতা রফিক মন্ডল, আসননগরের মেঘাই সর্দার, খুলনার কাদের মোল্লা, সুন্দর বনের রহিম মোল্লা, বাঁশবেড়িয়ার বৈদ্যনাথ সর্দার ও বিশ্বনাথ সর্দার প্রমুখ।

           নড়াইলের জমিদার রামরতন রায় কে বাংলার নানাসাহেব বলা হতো। নদিয়ার বিষ্ণুচরণদিগম্বর বিশ্বাস কে বলাহতো বাংলার "ওয়াট টাইলার" বিশ্বনাথ সর্দার বিশে ডাকাত নামে পরিচিত হয়। 1860 সালে সরকার নীল কমিশন গঠন করে। 1869 সালে অষ্টম আইন দ্বারা নীল চুক্তি আইন রোধ করা হয়। হিন্দু পাটট্রিওট পত্রিকার সম্পাদক হরিশ চন্দ্র মুখার্জি নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনী নিয়ামত প্রকাশ করতেন। নীল বিদ্রোহ নিয়ে লেখা বিখ্যাত ইংরেজি বই "দা ব্লু মিউটনি" ।


পাবনা বিদ্রোহ

    পূর্ব ভারত বাংলাতে জমিদারদের বিরুদ্ধে পাবনা কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়। সরকার শেষ পর্যন্ত অস্ত্রের দ্বারা এই বিদ্রোহ দমন করে ও একটি কমিশন বসানো হয় কৃষকদের দুরাবস্থা জানার জন্য। এই বিদ্রোহের প্রধান নেতারা ছিলেন ঈশান চন্দ্র রায়, শম্ভু পাল, কে মোল্লা প্রমুখ। এই বিদ্রোহের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন জমিদার দ্বিজেনদ্র নাথ ঠাকুর। 1874 সালে এই বিদ্রোহের কথা নিয়ে রমেশচন্দ্র লেখেন 'বাংলার কৃষক বিদ্রোহ'

দক্ষিনাত্য বিদ্রোহ

    দাক্ষিনাত্বে বোম্বাই প্রেসিডেন্সি তে ভূমি রাজস্ব আদায়ের জন্য দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রামের প্যাটেল (patel) বা মোড়লদের। দক্ষিনাত্বে কৃষকরা সাউকার বা মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। 1874 সালে মহারাষ্ট্রের পূণ জেলার কার্দে গ্রামে এই বিদ্রোহ সূচনা হয়। কার্দে গ্রামে কালুরাম নামে জনৈক মাড়োয়ারি ঋণের দায়ে আবদ্ধ বাবা সাহেব দেশমুখ নাম এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির জমিজমা ঘরবাড়ি আদালতের এদেশে দখল করে নিলে কৃষকরা একত্রিত হয়ে মহাজনদের বিরুদ্ধে সামাজিক বয়কট শুরু করে।

    1875 সালে 12 ই মে পূনা (know about puna) জেলার সুপা (supa) গ্রামে উন্মত্ত জনতা গুজরাটি (gujrat) মহাজন দের ঘরবাড়ি, দোকান, যদি লুট করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাহায্যে এই বিদ্রোহ দমন করা হয়, এবং প্রায় ৬০০০ কৃষক কে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। 1876 সালে এই বিদ্রোহের জন্য কমিশন নিয়োগ করা হয়।

পাঞ্জাবের কৃষক অসন্তোষ

    পাঞ্জাবের মহাজনদের জমি অধিগ্রহনের জন্য কৃষকরা আন্দোলন শুরু করে। সরকার 1902 সালে পাঞ্জাব জমি হস্তান্তর আইন পাস করেন। এই আইনে কৃষকদের থেকে মহাজনদের হাতে জমি হস্তান্তর নিষিদ্ধ হয় ও 20 বছরের বেশি সময় ও জমির মর্টগেজ নিষিদ্ধ হয়।

মোপালা বিদ্রোহ

    কেরলের মালাবার অঞ্চলে মুসলমান মোপালা কৃষকরা হিন্দু জমিদার ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে মোপালা বিদ্রোহ শুরু করে। 1921 সালে পুলিশেরা তীরুরঙ্গদি মসজিদে অস্ত্র খোঁজার নামে তল্লাশি চালালে পুলিশ, থানা, জমিদার ও মহাজনদের বাড়ি আক্রমণ করে। মোপলারা বিভিন্ন স্থানে রিপাবলিক গঠনকরে।

    মোপালা বিদ্রোহের নেতা ছিলেন কানহামমত গাজী, কলথিনগল মোহাম্মদ, আলী মুসলিওর প্রমুখ। ব্রিটিশরা 2337 জন বিদরিহিকে হত্যা করে, 1650 জন কে আহত করে, প্রায় 45000 জন কে বন্দি করে।


বারদৌলী সত্যাগ্রহ

    গুজরাটের বারদৌলী জেলায় 22 শতাংশ ভূমি রাজস্ব বৃদ্দি হলে 1927 সালে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল নয় রেভিনিউ ক্যাম্পেইন শুরু করে। ব্রিটিশরা সেই আন্দোলনের দমন করতে চাইলেও ব্যর্থ হন। সরকার একটি অনুসন্ধান কমিটি নিয়োগ করেন। এই কমিটির সুপারিশে রাজস্ব কমানো হয়। এই সত্যাগ্রহ অনুসন্ধানের জন্য সরকার ম্যাক্সওয়েল ব্লুমফিল্ড কে নিয়োগ করেন।


বিজলীয়া আন্দোলন

               1905 সালে এই আন্দোলন শুরু হয় রাজস্থানের (Also known about Jaipur Tourist) মেওয়াড়ে। সাধু সীতারাম দাস 1913 সালে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। 1915 সালে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ভূপ সিং ও তাকে সাহায্য করেন মানিক লাল ভার্মা। 1916 সালে উদয় পুরের রাজার বিরুদ্ধে তারা নয় রেভিনিউ আন্দোলন শুরু করেন।